শিক্ষা ক্ষেত্রে টাওয়ার হ্যামলেটসের সাফল্য বিশ্বের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত

Towerশিক্ষা ক্ষেত্রে অনন্য অগ্রগতি অর্জন করে টাওয়ার হ্যামলেটস’ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ শিক্ষা বিশেষজ্ঞ গবেষকদের পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ি এক সময়ের সবেচেয়ে ’খারাপ’ মানের স্কুলগুলো এখন সেরা মানের তালিকায় জায়গা করে নিয়ে দেশব্যপি আলোড়ন তুলেনি, বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
গবেষনা প্রতিবেদন প্রকাশের সাথে সাথেই দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট, গার্ডিয়ান এর মতো জাতীয় দৈনিক ও স্কাই, বিবিসি টিভি চ্যানেলগুলোতে তা গুরুত্বের সাথে প্রকাশ ও সম্প্রচার করা হয়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে টাওয়ার হ্যামলেটসের এই অনন্য সাফল্যের প্রতিবেদন ১১ ডিসেম্বর বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। টাওয়ার হ্যামলেটসের স্কুলগুলো কিভাবে বদলে গেলো, তা পর্যালোচনা করে ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন ফর অল – দ্যা টাওয়ার হ্যামলেটস’ স্টোরি” শীর্ষক প্রতিবেদনটি তৈরী করেন দেশের তিন জন শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষাবিদ প্রফেসর ডেভিড উডস’, প্রফেসর ক্রিস হাসবেন্ড এবং ডরূ ক্রিস ব্রাউন।
প্রকাশণা অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাহী মেয়র ল্ফুুর রহমান বলেন,  বারার স্কুলগুলোর রূপান্তর একটি চম্কার সাফল্যের গল্প। সকলের কঠোর পরিশ্রমের ফলেই অর্জিত হয়েছে এই সাফল্য। গত ১৫ বছর ধরে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, হেডটিচারগণ, স্কুল স্টাফ, কাউন্সিল অফিসারবৃন্দ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসাধারণ প্রচেষ্টার ফল হচ্চেছ আজকের এই অর্জন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে এই অনন্য সাফল্যে পূর্বসূরী নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের অবদানের কথা উল্লেখ করে মেয়র ল্ফুুর রহমান বলেন, ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় আজ আমাদের বারার পরিবারগুলোর মধ্যে লার্নিং কালচার বা শিক্ষার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেছে। এই সংস্কৃতিই আমাদের অগ্রযাত্রাকে আরো সুসংহত করবে।
তিনি বলেন, আর্থিক চাপের কারণে যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য মেয়রস’ এডুকেশন এওয়ার্ড (এমইএ), ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট, ফ্রি স্কুল মিল ইত্যাদি উদ্যোগ আমরা গ্রহন করেছি।
টাওয়ার হ্যামলেটসের শিক্ষার সার্বিক দিক নিয়ে দেশের শীর্ষ স্থানীয় তিন শিক্ষাবিদের যৌথ গবেষনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ১৯৯৭ সালে যে বারার স্কুলগুলো সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে ’খারাপ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিলো এবং পরবর্তী বছর কাউন্সিলের শিক্ষা বিভাগকে ’ব্যর্থ হতে পারে বলে’ অফস্ট্যাড ঘোষনা করে, সেই বারার স্কুলগুলো এখন ’সেরা’র তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এখন টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্চেছ দেশের হাতে গোনা কয়েকটি কাউন্সিলের একটি, যার প্রতিটি সেকেন্ডারি স্কুল অফস্ট্যাড এর মূল্যায়নে ’গুড’ অথবা ’আউটস্ট্যান্ডিং’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং এর পরীক্ষার ফলাফল প্রতি বছরই উন্নত হচ্চেছ, যা জাতীয় ধারার বিপরীত।
প্রতিবেদন তৈরীর সাথে জড়িত শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা এই বলে মন্তব্য করেছেন যে, টাওয়ার হ্যামলেটসের মতো দরিদ্র একটি বারার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কিভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করলো, তা থেকে বিশ্বের অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে গুটি কয়েক স্কুলের ওপর বিশেষ দৃষ্টি না দিয়ে বারার সকল স্কুলের উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রয়াসের এই সাফল্য থেকে বিশ্ব শিখতে পারে অনেক কিছু।
রিপোর্ট প্রস্তুতকারী শিক্ষাবিদগণ বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসের এই সাফল্য গাঁথা এটাই তুলে ধরছে যে, বঞ্চনা নিতান্তই নিয়তি নয়। কী অর্জন করা সম্ভব, তা অন্যান্য স্কুল, লকাল অথরিটিজ, এবং পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত হচ্চেছ এটি।
প্রতিবেদন তৈরীর সাথে জড়িত একজন শিক্ষাবিদ প্রফেসর ডেভিড উডস’ সিবিই’ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে যে ৭টি মৌলিক ক্ষেত্রে টাওয়ার হ্যামলেটসের স্কুলগুলোর নাটকীয় উন্নয়ন ঘটেছে, তা তুলে ধরে বলেন, স্কুল গভর্নর, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সর্বোপরি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উচ্চচাভিলাষি আকাংখা এই সাফল্য অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছে। নতুন স্কুল ভবন নির্মান প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে না পেরে অনেক কাউন্সিলের অর্থ ফেরত গেলেও, টাওয়ার হ্যামলেটস’ কাউন্সিল শুধু সেই অর্থ কাজে লাগায়নি, অতিরিক্ত তহবিলও এই খাতে বিনিয়োগ করেছে।
উল্লেখ্য, প্রফেসর ডেভিড কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট ফর এডুকেশন এর এডভাইজারি সার্ভিসের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি লন্ডন স্কুলস’ এবং দ্যা লন্ডন চ্যালেঞ্জ এর প্রধান উপদেষ্ঠার দায়িত্ব পালন করেন।
রিপোর্ট প্রণেতাদের অন্য দুইজন হচ্চেছন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ডিরেক্টর অব দ্যা ইন্সটিটিউ অব এডুকেশন প্রফেসর ক্রিস হাসবেন্ড এবং এই একই বিভাগের জন এডামস’ রিচার্স ফেলো ডক্টর ক্রিস ব্রাউন। নির্বাহী মেয়র ল্ফুুর রহমান শিক্ষা ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি ও সাফল্য সারা বিশ্বের জন্য এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে যারা ১৯৯৮ সাল থেকেই নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্চেছন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই সাফল্যের প্রতিবেদনই আমাদের যাত্রার সমাপনী নয়। টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রতিটি শিশুর জন্য বিশ্ব মানের শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে আমাদের এখনও অনেক কিছু করতে হবে। টাওয়ার হ্যামলেটসের কেবিনেট মে“ার ফর চিলড্রেন, স্কুলস’ এবং ফ্যামিলিজ, কাউন্সিলর ওলিউর রহমান বলেন, রিপোর্ট প্রণেতাদের এই কথার সাথে আমিও এক মত যে, বিশ্বের সেরা শহুরে স্কুলগুলোর কয়েকটি এখন রয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটসে। এই সাফল্যের পেছনে যাদের অবদান রয়েছে, আমি তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্চিছ।
কাউন্সিলর ওলিউর আরো বলেন, বর্তমান প্রশাসনের সর্বোচ্চচ অগ্রাধিকার হচ্চেছ শিক্ষা এবং রিপোর্ট প্রণেতারা এটা ঠিকই উল্লেখ করেছেন যে, দারিদ্রতার কারণে আমাদের প্রজন্মের যথার্থ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হোক, এটা মানতে চাইনি আমরা কখনোই। গত কয়েক বছরে আমরা অনেকগুলো অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছি। যার মধ্যে রয়েছে মেয়রস’ এডুকেশন এওয়ার্ড, মেয়রস’ হায়ার এডুকেশন এওয়ার্ড, ফ্রি স্কুল মিলস’ ইত্যাদি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button