সোমবার মহান বিজয় দিবস
সোমবার মহান বিজয় দিবস। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির গৌরবময় বিজয়ের ৪২তম বার্ষিকী আজ ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জেনারেল এএকে নিয়াজী ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করে।
চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের। এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ২৫ মার্চের গণহত্যার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। সমগ্র বাঙালি জাতি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এদিন প্রত্যুষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধাগণ, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরস্থ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিএনসিসি, বাংলাদেশ রাইফেলস, পুলিশ, র্যা ব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, কারারক্ষী এবং ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের সমন্বয়ে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ প্রত্যেক বচর হলেও এবার তা বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়া রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সংবর্ধনায় মিলিত হবেন।
দিবসটি সরকারি ছুটির দিন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে এবং সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে।
বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
হাসপাতাল, করাগার, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং রাতে আলোকসজ্জা করা হবে।
দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, মহান বিজয় দিবস পালনে যেন নতুন সাজে সেজেছে বাংলাদেশ। রাজধানীসহ সারা দেশ ছেয়ে গেছে লাল-সবুজ পতাকায়।
এবারের বিজয় দিবস জাতি অন্য এক আমেজে পালন করবে। তবে রাজনৈতিক চলমান অস্থিরতা তাদের সে আমেজে ভাটা ফেলছে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে এই প্রথম কোনো যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি বিজয় দিবসের বাড়তি আনন্দ এনে দিয়েছে।
তবে সারা দেশে সে আনন্দ জোয়ার শুরুর আগেই বেশ কয়েকটি স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নিভে গেছে প্রায় দুই ডজন মানুষের প্রাণ। ফলে এবার মানুষ ঘর থেকেও বের হতে থাকবে আতঙ্কে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস ২০১৩ পালনের লক্ষ্যে এ বছর বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। ভোর ৬টায় শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পন করবেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
এছাড়া যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্যদয়ের ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশের সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, বিকেল বিজয় র্যােলি। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যানে জনসভা।
বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ভোর ৬টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, সাড়ে ৭টায় শেরাবাংলাস্থ শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, দুপুর ২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা।