২১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ার অঙ্গীকারের পুনরুল্লেখ করে বলেছেন, এর মাধ্যমে জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণ করা হবে।
তিনি এ লক্ষ্য অর্জনে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি নয় মাস মরণপণ যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬-দফা, ১১-দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুনভাবে জেগে উঠে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করে। জাতির পিতা অনুধাবন করেছিলেন স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও বঞ্চনার অবসান হবে না। তাই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মূলত সেদিন থেকেই শুরু হয় স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। চলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। তিনি বলেন, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় আনুষ্ঠানিক মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারী করেন। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে সমবেত হয়ে শপথ গ্রহণ এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। মুক্তিযুদ্ধ ক্রমে তীব্রতর হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় পাক হানাদার এবং তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। জাতি পায় স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত। বাঙালি জাতির এই বীরত্ব ও দেশাত্মবোধ বিশ্বে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তুলে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখন স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এই জঘন্য হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে তারা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়।
শেখ হাসিনা বলেন, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে ফেলাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। তারা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারী করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। অবৈধ সরকার গঠন করে। সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকুরি দেয়। স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব দেয় ও রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার করে। তাদেরকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করে। ২০০১ এর বিএনপি-জামাত জোট সরকারও একই পথ অনুসরণ করে।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটকে বিপুলভাবে বিজয়ী করে। এই সরকার সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে।
প্রধানমন্ত্রী বিয়াল্লিশতম মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। সেই সংগে জাতীয় চার নেতা, ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনকে স্মরণ করেন, যাঁদের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়। এরপর খুনিদের শাস্তি কার্যকর করা হয়। এবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে, রায় আসছে। এসব রায়ও কার্যকর করে বাংলাদেশকে অভিশাপমুক্ত করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ দমন করেছি। দেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় হয়েছে। ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। পাশাপাশি, মায়ানমারের সাথে আইনি লড়াইয়ে আমরা সমুদ্র বিজয় করেছি।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button