‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ তারকা পিটার ও’টুল আর নেই
‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ তারকা পিটার ও’টুল আর নেই। ১৪ ডিসেম্বর শনিবার লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন আইরিশ বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এ তারকা অভিনেতা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। এক বিবৃতির মাধ্যমে গতকাল রোববার পিটারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তাঁর মুখপাত্র স্টিভ কেনিস।
স্টিভ কেনিস তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে পিটারের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, গতকাল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন পিটার। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। নিজের পেশাজগতে তিনি ছিলেন সেরা। চলচ্চিত্র জগতে তাঁর ছিল বিশাল বিস্তৃতি।’
এদিকে স্টিভ কেনিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সত্তরের দশকে পাকস্থলীর ক্যানসারকে পরাস্ত করে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন পিটার। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপানের কারণে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল। ১৪ ডিসেম্বর শনিবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বর্ষীয়ান এ অভিনেতা।
পিটারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিনস ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট তাঁর শোক বার্তায় বলেছেন, ‘পিটারের মৃত্যুর খবর শুনে খুবই মর্মাহত হয়েছি। কেবল আয়ারল্যান্ডই নয়, মঞ্চ ও চলচ্চিত্র জগতের অতিকায় এক ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে পুরো বিশ্ব। আমার সৌভাগ্য যে, সেই ১৯৬৯ সাল থেকে তাঁকে আমি বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলাম। ১৯৭৯ সালে আয়ারল্যান্ডের ক্লিফডেন শহরে বসবাসের সময় প্রায় প্রতিদিনই পিটারের সঙ্গে আমার দেখা-সাক্ষাত্ হতো।’
পিটারের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের সদস্য ও কাছের মানুষদের সমবেদনা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি বলেছেন, ‘আমার সবচেয়ে পছন্দের চলচ্চিত্র ‘‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’’। ছবিটিতে পিটারের অভিনয়শৈলী ছিল এক কথায় অসাধারণ।’
এদিকে পিটারের মেয়ে অভিনেত্রী কেট ও’টুল বলেছেন, ‘বাবার প্রতি যে অকৃত্রিম ভালোবাসা সবাই দেখাচ্ছেন তার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।’
১৯৩২ সালে আয়ারল্যান্ডের একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন পিটার জেমস ও’টুল। তবে তিনি বেড়ে উঠেছেন উত্তর ইংল্যান্ডে। অল্প সময়ের জন্য সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িয়েছিলেন পিটার। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভিতে কিছুদিন রেডিওম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টে ভর্তি হন পিটার।
মঞ্চ দিয়ে অভিনয় জগতে পিটারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৬০ সালে ‘কিডন্যাপড’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তাঁর। ১৯৬২ সালে মুক্তি পাওয়া সাড়াজাগানো ব্রিটিশ ছবি ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’য় নাম ভূমিকায় অভিনয় করে তারকাখ্যাতি অর্জন করেন পিটার। সেরা ছবি, সেরা পরিচালকসহ সাতটি বিভাগে অস্কার পুরস্কার ঘরে তুলেছিল ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’। ছবিটিতে ব্রিটিশ সেনাকর্মকর্তা টি ই লরেন্স চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন পিটার।
পরবর্তী সময়ে ‘বেকেট’, ‘লর্ড জিম’, ‘দ্য লায়ন ইন উইন্টার’, ‘ক্যাসিনো রয়্যাল’, ‘গ্রেট ক্যাথেরিন’, ‘গুড বাই, মিস্টার চিপস’, ‘কান্ট্রি ড্যান্স’, ‘দ্য রুলিং ক্লাস’, ‘রোজবাড’, ‘পাওয়ার প্লে’, ‘দ্য স্টান্টম্যান’, ‘দ্য লাস্ট এম্পেরর’, ‘দ্য রেইনবো থিফ’, ‘মাই ফেবারিট ইয়ার’, ‘ফ্যান্টমস’, ‘ট্রয়’, ‘ভেনাস’সহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন পিটার। তাঁকে চলচ্চিত্রের পর্দায় সর্বশেষ দেখা গেছে ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ক্রিস্টিয়াদা’ ছবিতে।
জীবদ্দশায় মোট আটবার অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন পিটার। সর্বশেষ ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ভেনাস’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি অস্কার মনোনয়ন পান। এর আগে ২০০৩ সালে সম্মানসূচক অস্কার পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাঁকে। শুরুতে অস্বীকৃতি জানালেও পরে অস্কার পুরস্কারটি গ্রহণ করেন তিনি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা, লরেল, ন্যাশনাল সোসাইটি অব ফিল্ম ক্রিটিকস, ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ, প্রাইমটাইম এমি, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড, আইরিশ ফিল্ম অ্যান্ড টিভি পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন প্রখ্যাত এ অভিনেতা।