সাতক্ষীরায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৫
সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির কর্মীদের ধরতে রাতভর অভিযান চালিয়েছে যৌথ বাহিনী। এসব অভিযানের সময় পুলিশ বিজিবি’র গুলিতে জামায়াত কর্মীসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে দেবহাটার পদ্মশাকরায় দুইজন, সফিপুরে দুইজন এবং সদরের সাতানিয়ায় একজন নিহত হয়েছেন। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযান চলছে অভিযান চলবে। সাতক্ষীরাকে শান্ত না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। এরা হলেন- সদর উপজেলার সাতানি গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (২৫) এবং দেবহাটার পাকিস্তানপাড়ার আবদুর রউফ (৩২) ও রিয়াজুল ইসলাম। বাকি দুইজনের পরিচয় জানা যায়নি। নিহত ব্যক্তিরা জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে।
এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়তায় ভোমরা ও দেবহাটার পারুলিয়ায় বিএনপি জামায়াতের কমপক্ষে ২০টি বাড়ি ভাঙচুর করেছে যৌথ বাহিনী। গুলিবিদ্ধ হয়েছে ভোমরা এলাকার শাকরা বাজারের নৈশ প্রহরি আয়নুল ইসলাম (৪০)।
এদিকে হত্যাকান্ড, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে মঙ্গলবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামায়াত। জামায়াতের জেলা সেক্রেটারী নুরুল হুদা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যৌথবাহিনীর পৃথক দল রবিবার রাত দুইটার দিকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে নামে। ভোর সাড়ে চারটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাড়ি এলাকায় গেলে স্থানীয়রা সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে ও সড়ক বিচ্ছিন্ন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পুলিশ সড়কে ফেলা গাছের গুড়ি সরিয়ে সামনে যেতে চাইলে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ গুলি করলে এক জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে সকালে সদরের কাতনদা এলাকায় সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেকের বাড়ি ঘিরে ফেলে। তাকে না পেয়ে তার বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এতে ক্ষিপ্ত জনতা রাজপথে এসে প্রতিবাদ জানায়।
রাত ১২টার দিকে সদরের ভোমরা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ বিজিবি। বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় বিএনপি নেতা নুর ইসলামের বাড়ি ভাঙচুর করে। একই সময়ে বিএনপি জামায়াত সন্দেহে কোমরপুর চৌধুরিপাড়া এলাকার, মুসা,বাবরি এবং বাদেল জেলের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ভাঙচুর করা হয় মনোয়ার হোসেনের বাড়ি ঘর। স্থানীয়রা জানান, এসব বাড়িঘরে হামলা চালাতে স্থানীয় আ’লীগ নেতারা পুলিশ বিজিবিকে সহযোগিতা করে।
সকাল ৬টার দিকে যৌথবাহিনীর এ গ্রুপটি দেবহাটার পারুলিয়া ও সখিপুর এলাকায় অভিযান চালায়। তারা উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাকিলের বাড়ি ভাঙচুর করে। এছাড়া পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বর আব্দুল গফফর এবং তার ভাই বর্তমান মেম্বর রফিকুল ইসলামের বাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ সময় এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ হয়। এখানে যৌথবাহিনীর গুলিতে অজ্ঞাত দুজন নিহত হন। এছাড়া আবদুর রউফ (৩২) ও রিয়াজুল ইসলাম (৩৫) নামের দুইজন গুলিবিদ্ধ হন।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির দাবি করেন, বিভিন্ন এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযানে গেলে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পাঁচজন নিহত হয়। অভিযানের সময় দেবহাটা উপজেলা থেকে ছয়জন ও কলারোয়া উপজেলা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া পদ্মশাঁখরা ও সখীপুর এলাকায় উত্তেজিত জনতা বেশ কয়েকজন জামায়াত-সমর্থকের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।