সরকারের সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ অব্যাহত রাখুন : জামায়াত
সরকারের সুপরিকল্পিত সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিরুদ্ধে দেশের জনগণকে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ অব্যাহত রাখার ও বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ ।
বুধবার এক বিবৃতিতে এ আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, বিরোধী দলের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন, সর্বক্ষেত্রে বেপরোয়া দলীয়করণ এবং রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে একে একে ধ্বংস করে বিশেষ করে নিজেদের পছন্দমাফিক সংবিধান পরিবর্তন করে দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার মাধ্যমে প্রকারান্তরে পুনরায় বাকশাল কায়েমের উদ্দেশ্যে তাদের দলীয় সরকারের অধিনেই নির্বাচনের বিধান করেছে। এর বিরুদ্ধে দেশের সকল শ্রেণীপেশার মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণ যখন দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলেছে, তখন সরকার এ আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন ধরণের ছলচাতুরি ও অপকর্মের আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই কলঙ্কজনক ইতিহাস রচনা করে একদলীয় তথাকথিত এ নির্বাচনে অর্ধেকের চেয়ে বেশী আসনে তাদের জোটের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। সাড়ে ৫ কোটি মানুষ এ আসনগুলোতে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে সরকারের এ নির্বাচনী উপহাস জনগণের কাছে চরমভাবে ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এ অবস্থায় জনগণের আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে চলছে সরকার তখন জনগণ ও বিশ্বসম্প্রদায়ের দৃষ্টি ভিন্নদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, জালাও, পোড়াও, ভাংচুর, উচ্চ আদালতের বিচারপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংখ্যালঘুদের বাড়ীঘর, ধর্মীয় উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটতরাজ ও নিজেরাই অগ্নিসংযোগ করে তার দায় বিরোধী দলের উপর চাপানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি জাহাঙ্গির হোসেন সেলিমের নোয়াখালীর বাড়ীতে হামলা, সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘুর বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করতে গিয়ে যুবলীগের কর্মীরা হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এর আগে পাবনার আতাইকুলায় মন্দির, হিন্দুদের ঘরবাড়ী, ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা জনগণের নিকট হাতেনাতে ধরা পড়ে। ফেনীতে সেনাবাহিনীর গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করতে গিয়ে ধরাপড়ে ছাত্রলীগ। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, বগুড়া ময়মনসিংহে তারা একই ধরণের ঘটনা সংঘটিত করে। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ স্পৃহায় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্য জনসভায় ‘আর ছাড় দেয়া হবে না’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বনমন্ত্রী ‘দেখামাত্র গুলি করার’ কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ‘জামায়াত শিবির উৎখাতের’ ঘোষণা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ‘গৃহযুদ্ধের’ কথা বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরণের উস্কানীমূলক, হিংসাত্মক, আক্রমনাত্মক ঘোষণার পর থেকে মানুষের জীবনের আর কোন নিরাপত্তা নেই। তারা আরো নাশকতা ও হামলা চালানোর প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি শোনা যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত দেশী-বিদেশী আরো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিশেষ করে বৈদেশিক মিশন, দুতাবাস এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের উপরও হামলা, নাশকতা চালিয়ে তার দায় বিরোধী দলের উপর চাপানোর নোংরা খেলাও সরকার খেলতে পারে।
এমতাবস্থায় দেশপ্রেমিক জনগণ এবং দলীয় সমর্থকদেরকে এ ধরণের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক ও সোচ্চার হয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ অব্যাহত রাখার এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে সরকারের ফ্যাসিবাদী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ও কার্যকর ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে সরকারকে এ ধরনের নোংরা খেলা বাদ দিয়ে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বিজ্ঞপ্তি।