পুলিশী আতঙ্কে মসজিদে আজান ও নামাজ বন্ধ
সারাদেশের জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা চিহ্নিত করে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে আইশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই ধারায় নীলফামারীর রামগঞ্জের টুপামারী ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নেও চালানো হয়েছে যৌথ অভিযান। তবে গত রোববার রাতে যৌথ বাহিনীর অব্যাহত সাঁড়াশি অভিযানে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, নীলফামারীর রামগঞ্জ বাজারে আওয়ামী লীগ-পুলিশের সাথে ১৮ দলীয় জোট ও হাটুরের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার পর ওই এলাকার টুপামারী ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। এলাকার মসজিদগুলোতে আজান হচ্ছে না। নামাজ পড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কোন কোন মসজিদে আজান দিলেও মুসল্লির অভাবে ওলামালীগ সমর্থিত ইমাম ও মোয়াজ্জিন নামাজ আদায় করছে বলে এলাকা সূত্রে জানা গেছে।
সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশী গ্রেফতার আতঙ্কে লোকজন আত্মগোপনে থাকায় যৌথ বাহিনীর অব্যাহত সাঁড়াশি অভিযানে কেউ গ্রেফতার করতে ব্যার্থ হয়েছে।
তাছাড়া ঐ সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড় হাজার ব্যক্তির নামে মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছে নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নবাসী।
অপর দিকে ঐতিহ্যবাহী রামগঞ্জ বাজার ও বাজার এলাকা টুপামারী ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রামগঞ্জ বাজারে দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসায়ীরা গতকাল দিনভর তাদের মালামাল সরিয়ে রেখেছে। এলাকায় বিরাজ করছে এক ভীতিকর অবস্থা।
গত শনিবার বিকালে নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় আসাদুজ্জামান নূর এমপির গাড়ির বহর থেকে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। এ সময় গাড়ি বহরে নূর এমপি, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কর্মকর্তারা ছিল। নূর এমপির গাড়ি বহর যখন রামগঞ্জ বাজার এলাকায় আসে তখন বিএপির রব্বানীর বাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে রামগঞ্জ বাজারে বিএনপি জামায়াত সমর্থিত ও হাটুরে লোকজন গাড়ি বহরে হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের ৪ জন ও বিএনপির ১ জন নিহত হয় এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়। বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে আসাদুজ্জামান নূর এমপিকে নিরাপদে নিয়ে আসে।
এ ঘটনার পর নীলফামারী জেলা শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। চৌরঙ্গী মোড়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ও ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে আসাদুজ্জামান নূরের সাথে পরাজিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মন্টুর ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিভিএস মোটরসাইকেল শো-রুম ও মেসার্স মুন লাইট মেডিকেল হল ঔষধের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা।
রামগঞ্জ বাজারে সংঘর্ষে নিহত ৫ জনের ঘটনায় নীলফামারী থানার ওসি (তদন্ত) বাবুল আখতার বাদী হয়ে বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে দেড় হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করে।
ঘটনার রাতেই যৌথবাহিনী গ্রেফতারের নামে সাঁড়াশি অভিযান চালায় রামগঞ্জ বাজার এলাকায়। সুখধন এলাকা থেকে হাসান আলী মিয়া নামক এক বৃদ্ধকে গ্রেফতার করে ও সৈয়দপুর থেকে গ্রেফতারকৃত ২ যুবককে গ্রেফতার দেখানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর থেকে পুলিশী গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকাবাসী বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর শনিবার থেকে আজান ও নামাজ আদায় করা হচ্ছে না এলাকার মসজিদগুলোতে।
বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের ইমাম ওলামালীগের নেতা মাওলানা কাছেম আলী মসজিদে আজান দিলেও মুসল্লি নেই। দুবাছরি দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন জামে মসজিদে ঘটনার পর থেকে আজান বন্ধ রয়েছে। নামাজও হচ্ছে না বলে এলাকার একটি সূত্র জানা গেছে।
টুপামারী, লক্ষ্মীচাপ ও পলাশবাড়ী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ঘটনার প্রতিবাদে রামগঞ্জ বাজার ও বাজার এলাকার বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর সংবাদে বাজার ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় কয়েক ব্যবসায়ী জানান, রামগঞ্জ বাজার পুড়িয়ে দেয়ার হুমকিতে তারা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ঘটনার পর থেকে রামগঞ্জ বাজারের ৮ জন পাহারাদার ভয়ে দায়িত্বও পালন করছে না।
রামগঞ্জ বাজার এলাকায় পুড়ে দেয়া আওয়ামী লীগের ৫৪টি মোটরসাইকেল গতকাল সোমবার পুলিশ ট্রাকে করে নীলফামারী থানায় নিয়ে গেছে বলেও জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।