হিজাবের গুরুত্ব উপলব্ধি করলো কানাডা

Hijabপ্রচারণার এই যুগে সব প্রচারণাই যে সুখকর তা কিন্তু নয়। প্রচারণা আবার অনেক সময় বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রোপাগান্ডার রূপ লাভ করে। এমন প্রোপাগান্ডায় সত্যের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না। ফলে প্রোপাগান্ডার প্রভাবে অনেক বিষয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। বিভ্রান্তি ও ভুল ধারণার কারণে মানব সমাজের শান্তিও বিঘিœত হতে পারে। এ কারণেই প্রচারণা বা প্রোপাগান্ডার ব্যাপারে সচেতন থাকা বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সমকালীন পৃথিবীতে সচেতনভাবে লক্ষ্য করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ইসলাম ও মুসলমানদের বিষয়গুলো বিভিন্নভাবে নেতিবাচক প্রোপাগান্ডার শিকার। এ প্রসঙ্গে হিজাবের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সম্প্রতি হিজাব পরার কারণে ফ্রান্সে এক মুসলিম তরুণী উগ্রবাদীদের হামলার শিকার হন। তবে এর ব্যতিক্রম চিত্রও লক্ষ্য করা যায়। যেমনটি লক্ষ্য করা গেছে কানাডায়। কানাডার এডমন্ডটন সিটির মুসলিম মহিলা পুলিশ কর্মকর্তাদের ইসলামী শালীন পোশাক বা হিজাব পরার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন থেকে তারা হিজাব পরে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। কুরআন বিষয়ক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ‘ইকনা’ জানিয়েছে, কানাডার এই শহরের পুলিশ বিভাগ এই বিভাগে কাজ করতে মুসলিম নারীদের উৎসাহিত করার জন্য তাদের হিজাব ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি নগর কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করেছিল। হিজাব ব্যবহারের বিষয়টি অনুমোদন লাভের পর এখন থেকে যেকোনো মুসলিম নারী কোনো রকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছাড়াই হিজাব পরে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করতে পারবেন। এডমন্ডটন সিটির মুসলিম নারী পরিষদের প্রধান সাবিয়া জাকি বলেছেন, পুলিশ বিভাগে মুসলিম নারীদের হিজাব ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পর মুসলিম নারীরা সরকারিভাবে কানাডার সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। এদিকে মুসলিম নারীদের হিজাব ব্যবহারের অনুমতি দেয়া প্রসঙ্গে এডমন্ডটন সিটির পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক যাচাই-বাছাই করে দেখার পর এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, হিজাব ব্যবহারের কারণে মুসলিম নারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো সমস্যা হবে না এবং কাজেও ব্যাঘাত ঘটবে না। উল্লেখ্য যে, খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের পর দেশটিতে মুসলমানরাই দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়।
হিজাবের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের বহু দেশে, এমন কি মুসলিম দেশের অনেকের মধ্যেও একটি নেতিবাচক ধারণা আছে। কিন্তু হিজাব সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা জানি যে, যে কোনো সচেতন মানুষই এ পৃথিবীতে সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে বসবাসের গ্যারান্টি চায়। কিন্তু গ্যারান্টি পাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের যে নিজেরও কিছু করণীয় আছে তা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। স্পষ্ট করে বলতে গেলে এ কথা বলা প্রয়োজন যে, নারী ও পুরুষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে থাকে। এ বিষয়টি শুধু জীববিজ্ঞানের বিষয় নয়, মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও বটে। একথাও অস্বীকার করার কোনো জো নেই যে, নারীর সৌন্দর্য ও পুরুষের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়ে থাকে। ধর্ম পুরুষের আগ্রাসী মনোভাবকে যেমন সংযত করতে বলে, তেমনি নারীকেও আহ্বান জানায় শালীনতা তথা হিজাবের মাধ্যমে নিজের আব্রু রক্ষা করতে। ইসলামে হিজাবের বিষয় আসলে বাস্তবতামন্ডিত একটি যৌক্তিক ও সুন্দর বিষয়। অথচ এই বিষয়টি অনেকেই বুঝতে চান না। নারী যখন ইভটিজিং কিংবা যৌন নিপীড়নের শিকার হন, তখন আমরা নৈতিকতার প্রশ্ন তুলি। পুরুষ-নারীকে অসম্মান করবে না, নিপীড়ন করবে না, এটা যেমন নৈতিকতার বিষয়; ঠিক তেমনি নারীও নিজেকে শালীন রাখবে আবৃত রাখবে- এটাও নৈতিকতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারী-পুরুষ কাউকেই সীমা লঙ্ঘনের অনুমতি দেয় না ইসলাম। আসলে ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যপন্থী ধর্ম। পুরুষ বলবান বলে নারীর আত্মসম্মানকে তুচ্ছজ্ঞান করবে, এটা ইসলাম কোনোক্রমেই মেনে নেয় না। অপরদিকে ইসলাম নারীকে হিজাবের আবরণে শালীনতায় উদ্বুদ্ধ করলেও গৃহবন্দী করে রাখতে চায় না। ইসলাম বুলি সর্বস্ব নারী স্বাধীনতা কিংবা পুরুষতান্ত্রিক দর্পকে স্বীকার করে না। পুরুষ ও নারীর সৃষ্টিগত বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্যের আলোকেই নারী ও পুরুষের জীবন যাপন ও চলন-বলনকে ইসলাম একটি প্রকৃতিসম্মত বাস্তব রূপ দিয়েছে। এই রূপকে উপলব্ধির জন্য মস্তিষ্কচর্চার সাথে সাথে হৃদয় ও আধ্যাত্ম চর্চাও প্রয়োজন। এসব সম্পূরক বিষয়কে অবহেলা করে কেউ যদি খ-িত জ্ঞানের আলোকে ইসলামকে বুঝতে চায় তাহলে তিনি শুধু ভুলই বুঝবেন, যেমন ভুল বুঝা হচ্ছে হিজাবের বিধানকে। এই ভুল যেমন পাশ্চাত্যের অনেকেই করছেন, তেমনি করছেন মুসলিম সমাজের অনেকেই। ভ্রান্তির এই বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন ধারণার বদলে ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে আন্তরিক হওয়া। এই ক্ষেত্রে দৈন্য রয়েছে বলেই আমরা হিজাবসহ ইসলামের আরো বহু বিধান সম্পর্কে ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত রয়েছি। এই ভ্রান্তি দূর হলে সবারই মঙ্গল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button