কেরির ‘দুঃখ’ প্রকাশ : ভারত বলছে ‘ক্ষমা চাইতে হবে’
আমেরিকার নিউ ইয়র্কে ভারতীয় নারী কূটনীতিক দেবযানি খোবরাগাড়েকে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশির ঘটনায় শুধু দুঃখ প্রকাশ করলে চলবে না আমেরিকাকে ক্ষমা চাইতে হবে। এ কথা বলেছেন, ভারতীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ। দেবযানিকে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশি ও জেলহাজতে পাঠানোর ঘটনায় ‘দুঃখ প্রকাশ’ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বিবৃতি দেয়ার পর এ কথা বললেন কমল নাথ।
বৃহস্পতিবার ভারতের বেসরকারি টেলিভিশন এনডিটিভি’র অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেবযানির ঘটনা নিয়ে ওয়াশিংটন-দিল্লি সম্পর্কে টানাপড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে কেরি গতকাল ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেননের কাছে ফোন করেন। দেবযানীর সঙ্গে মার্কিন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা যে আচরণ করেছেন, সে বিষয়ে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেন তিনি। তবে দেবযানীকে যে কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমেরিকা আগের অবস্থানে অটল রয়েছে বলে তিনি জানান।
কেরি ও মেননের ফোনালাপের বিষয়য়টি নিশ্চিত করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মারি হার্ফ বলেন, দেবযানীর সমবয়সী দুই মেয়ের বাবা হিসেবে কেরি ভারতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেননকে ফোন করে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। হার্ফ জানান, ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আঘাত লাগে এমন কোনো পদক্ষেপ আমেরিকা গ্রহণ করবে না বলে মেননকে জানিয়ে দিয়েছেন কেরি।
গৃহকর্মীর ভিসায় মিথ্যা তথ্য সরবরাহ এবং প্রতিশ্রুত পারিশ্রমিক না দেয়ার অভিযোগে সম্প্রতি মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনী নিউ ইয়র্কে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানি খোবরাগাড়েকে আটক করে। তাকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয় এবং পরে বিবস্ত্র করে তার দেহ তল্লাশি করা হয়। এরপর তাকে মাদকাসক্তদের সঙ্গে একই কক্ষে আটক করে রাখে। ওই ঘটনার একদিন পর পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে তলব করেন এবং এ ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য আচরণ’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান।
গত শুক্রবার মিসেস খোবরাগাড়েকে আদালতে তোলা হয় এবং সেখান থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
ভারতীয় কূটনীতিককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে নয়াদিল্লি মঙ্গলবার কয়েকটি পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। দিল্লির মার্কিন দূতাবাসের চারপাশ থেকে নিরাপত্তা বলয় তুলে নেয়া হয়েছে, ভারত সফররত একটি মার্কিন প্রতিনিধিদলকে তিরস্কার করা হয়েছে এবং দিল্লিতে অবস্থানরত মার্কিন কূটনীতিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিমানবন্দরের বিশেষ পাস প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন দূতাবাসের জন্য মদসহ সব ধরনের জিনিসপত্র আমদানি ছাড়পত্র বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
গতকাল ভারতের পার্লামেন্টে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যরা আমেরিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, দেবযানীকে নিয়ে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দাজনক।
দেবযানীকে সসম্মানে ভারতে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ পার্লামেন্টে যাবেন না বলেও রাজ্যসভায় ঘোষণা করেন।
এদিকে, দেবযানীকে গতকাল জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশনে নেয়া হয়েছে। ফলে ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী তাঁর কূটনৈতিক রক্ষাকবচ আরও বেড়ে গেছে।