নিউইয়র্কে নগ্ন দেবযানী এবং কুড়িগ্রামের ফেলানী

Felaniআমীর হামযা : আমরা আমেরিকার হেন কর্মের তীব্র নিন্দা জানাই। নিইউয়র্কে ভারতীয় কুটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে নগ্ন করে তল্লাশী করার মতো নৃশংস কাজে লিপ্ত হওয়ার জন্য। নিশ্চয়ই তা পশুবাদি, ফ্যাসিবাদি এবং লজ্জাজনক। তারপর ঘাঁটতে হচ্ছে পুরনো ইতিহাস। জেগে উঠছে বুকের ভেতর থেমে থেমে জ্বলা আমাদের নগ্ন আগুনেরা।
৭ জানুয়ারি ২০১১। কুড়িগ্রামে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাঁটাতারে দেখা গেল একটি লাল সালোয়ার-কামিজ পরা কিশোরীর মৃতদেহ ঝুলে আছে! কোন সন্দেহ হয়নি, এলাকাবাসির। প্রমাণিত হলো, ফেলানী নামক সেই কিশোরীকে গুলি করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রেখেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী, বিএসএফ।
তারপর! তারপর দীর্ঘ আড়াই বছর পর হলো বিচার। তাও অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর, বাংলাদেশী কোন চাপে নয় বরং শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিজ্ঞানের জাত রক্ষার জন্য। শেষে বিচার করে আরো এক মিথ্যার সাগর জন্ম দিল ভারত। ঘোষণা করলো- নো ওয়ান কিল্‌ড ফেলানি।  তার প্রতিবাদে বাংলাদেশে বিক্ষোভ হয়েছে, ফেলানীর ভাইয়েরা মানববন্ধন করেছে। সেখানে পুলিশ(বাংলাদেশ পুলিশ) হামলা চালিয়েছে, গ্রেফতার করেছে। এখনো সেই আসামীরা গ্রেফতার আছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশী কৃষকদেরকে নগ্ন করে নির্যাতনের রেকর্ড গড়েছে ভারত। তার মধ্যে সেলিম খান অন্যতম। যাকে চোরাচালানী অপবাদ দিয়ে নগ্ন করে নির্যাতন করেছে ভারত। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যা খুব জোরালোভাবে  প্রচারও হয়েছে। তবে ভারত কান দেয়নি। তারা থামায় না নির্যাতন। এটা তাদের কাছে কোন কিছু্ই না।
কিন্তু, সব গল্প কী পার্ক স্ট্রীট থেকে শুরু হয়েই কয়েক পৃষ্ঠা হেঁটে শেষ হয়ে যায়? না, যায় না। কিছু কিছু গল্প আছে, যারা কুড়িগ্রাম সীমান্ত থেকে শুরু হয়ে নিউইয়র্ক এয়ারপোর্টে গিয়ে শেষ হয়। হয়তো বা চরিত্রের পরিবর্তন হয়।
১২ডিসেম্বর ২০১৩, নিউইয়র্ক: ভারতীয় কুটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে নগ্ন করে তল্লাশী করেছে মার্কিন নিরাপত্তারক্ষীরা। এতে ভারত খুবই ক্ষুব্ধ। কেন এমনটি করা হবে? বাংলাদেশী হলেও আমিও এর তীব্র নিন্দা জানাই। কারণ, ঐ দুই দেশেরই যদিওবা ইজ্জতের বালই নাই তবুও, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য এটা খুবই হুমকি স্বরুপ। ভারত  এরই মধ্যে নানা ক্রিয়া শুরু করেছে। মার্কিনিরাও শুধু দেবযানীকে নগ্ন করে ছাড়েনি। জেলও খাটিয়েছে।
এখন কথা হলো- মহাশক্তিধর, জঙ্গলের সাম্রাজ্যবাদী(যাদের অর্ধেকের মতো মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে) সেই ভারত এখন যদি বুঝে! নিজ দেশের মানুষের উপর  নির্যাতন কেমন ঠেকে গায়ে। কেমন লাগে সীমান্তে নগ্ন করে নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করতে?
আর একটা জিনিস বাকি আছে। তা হলো কাঁটাতারে লাশ ঝুলিয়ে রাখা। তা যেদিন হবে সেদিন ভারত হয়তো হেন কাজ বন্ধ করবে যদিও সীমান্তে নির্যাতন এখনো তারা বন্ধ করেনি। মঙ্গলবারও এক বাংলাদেশীকে মেরেছে তারা।
লেখক: কলামিস্ট ও সাংবাদিক

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button