বৃটেনে চ্যানেল ফোর-এ ধ্বনিত হবে সুললিত কণ্ঠের আযান

‘নামাজের জন্য এসো, কল্যাণের জন্য এসো’ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ধ্বনিত আজানের সুললিত বাণী প্রচার করবে বৃটেনের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল, চ্যানেল ফোর।  বৃটেনে এই প্রথমবারের মতো একটি মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেল পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে আজান প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। -জাস্ট নিউজ।
‘চ্যানেল ফোর’ জানিয়েছে, ফজরের নামাজের আজান প্রচার করা ছাড়াও চ্যানেলটি প্রতিদিনের নিয়মিত সম্প্রচারের মধ্যে আরও চারবার ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও চিত্র প্রচার করে নামাজের সময় হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। ইউরোপের কোনো মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেলে আজান প্রচারের এটিই প্রথম নজির। ‘চ্যানেল ফোর’-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ঘোষণায় বলা হয়, প্রথম রমজান থেকে ৩০ দিন ভোররাতে তিন মিনিট করে আজান সম্প্রচার করা হবে এবং অপর চার ওয়াক্তে টেলিভিশনে নামাজের সময় স্মরণ করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি তাদের ওয়েবসাইটে তা সম্প্রচার করা হবে। ফজরের আজান প্রচারের আগে মাসজুড়ে ‘রামাদান রিফ্লেকশনস‘ (রমজানের ভাবনা) শীর্ষক দুই থেকে তিন মিনিটের একটি করে তথ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হবে। ‘চ্যানেল ফোর’ বলছে, যারা ইসলামকে সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন সেসব দর্শকের লক্ষ্য করে ‘উদ্দেশ্যমূলক উস্কানি’ হিসেবে তারা এ পদক্ষেপ নিচ্ছে। চ্যানেল ফোর বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হলেও কিছুটা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা (লাইসেন্স ফি’র একাংশ) পেয়ে থাকে। ‘চ্যানেল ফোর’-এর অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান র‌্যালফ লি এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে সম্প্রচার বিষয়ক সাময়িকী ‘রেডিও টাইমস’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেছেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মের প্রতি এই গুরুত্ব প্রদানের জন্য চ্যানেল ফোর যে সমালোচিত হবে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু যাদের কণ্ঠ কম শোনা যায় তাদের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম দেয়াটাই আমাদের কাজ।’
র‌্যালফ লি আরও লিখেছেন, উলইচের সাম্প্রতিক ভয়াবহ ঘটনা (সৈনিক হত্যা) এবং তার প্রতিশোধ হিসেবে ব্রিটিশ মুসলিমদের ওপর সংঘটিত হামলাগুলোর পটভূমিতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যপন্থীদের পক্ষে দাঁড়ানো এখন সবচেয়ে জরুরি। এটি ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, যুক্তরাজ্যে যে ক’টি ধর্মের এখন প্রসার ঘটছে তার মধ্যে ইসলাম অন্যতম।’ র‌্যাফেল লি আরও লিখেছেন, চ্যানেল ফোরের দর্শকেরা তরুণ এবং সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ব্রিটিশ মুসলমানদের অর্ধেকই পঁচিশ বছরের কম বয়সী। ব্রিটেনের মসজিদগুলোর ইমাম ও পরিচালনা পর্ষদের প্রতিনিধিদের সংগঠন ‘মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন’ চ্যানেল ফোরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
তবে আজান প্রচারের সিদ্ধান্তের সমালোচানায় মুখর ব্রিটেনের একাধিক সংবাদ মাধ্যম। ‘রামাদান এ ডিং-ডং’ এমন শিরোনাম দিয়ে দি ডেইলি সান এক প্রতিবেদনে বলছে, টেলিভিশনে আজান প্রচারে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। সান প্রশ্ন তুলেছে পবিত্র মাস কী জুবিলি জয়ন্তীর চেয়েও বড়? অবশ্য চ্যানেল ফোর মনে করছে ডায়মন্ড জুবিলির চেয়ে পবিত্র রমজান মাস বেশি প্রাসঙ্গিক। চ্যানেল ফোরের কর্মকর্তা র‌্যালফ লি দাবি করেছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে ২৮ লাখ মুসলমান বৃটেনে রোজা পালন শুরু করতে যাচ্ছে। বৃটেনের অন্তত ৫ ভাগ মানুষ রোজা রাখেন।
‘হোয়াই চ্যানেল ফোর প্ল্যান টু এয়ার দ্য ডেইলি মুসলিম কল টু প্রেয়ার ডিইউরিং রামাদান ইজ এ ডিভাইসিভ এন্ড সাইনিক্যাল স্ট্যান্ট’ শিরোনামে ব্রিটিশ ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৃষ্টি আকর্ষণে খুবই কৌশলী চ্যানেল ফোর। তারা কৌশল হিসেবে এটি বেছে নিয়েছে।
আর এটি একটি বিভক্তিমূলক উদ্যোগ।চ্যানেল ফোরে আজান প্রচারের সময় লন্ডনের বিখ্যাত এলাকাসহ সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল চার্চের ছবিও প্রচার করা হবে। আরবি ক্যালেন্ডারের নবম মাসে মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা পালন করে। চ্যানেল ফোরের আবহাওয়া সংবাদেও সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় উল্লেখ করা থাকবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button