দেশ জ্বলছে আর প্রধানমন্ত্রী ১৬ কোটি মানুষের সাথে ঠাট্টা করছেন : জামায়াত
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে একদিকে মানুষের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাচ্ছে সরকার, অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী দেশের মানুষকে নিয়ে একের পর এক উপহাস করে চলেছেন। দেশ জ্বলছে, গণহত্যা করছে সরকার, আর প্রধানমন্ত্রী ‘৫ জানুয়ারী নির্বাচন সমাপ্ত করে দশম জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে ১১ তম সংসদ নির্বাচন সমঝোতার ভিত্তিতে করার’ ইচ্ছা ব্যক্ত করে দেশের ১৬ কোটি মানুষের সাথে ঠাট্টা মশকরা করছেন। কোনো কোনো মন্ত্রী ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার খায়েস ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধান, মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারকে পদদলিত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য সরাসরি দেশের ১৬ কোটি মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সকল জুলুম, নির্যাতন ধৈর্য্যরে সাথে মোকাবেলা করে জনগণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলেছে। জনগণের এ অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে নস্যাৎ করা যাবে না। পৃথিবীর কোনো স্বৈরশাসকই জনগণের উপর জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পারেনি, এ সরকারও পারবে না।
‘দেশব্যাপী যৌথবাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডারদের সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাণ্ডব, গণহত্যা, ভাংচুর, লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগের’ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ১৮ দলীয় জোট ঘোষিত শনিবার ভোর ৬টা থেকে ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশব্যাপী সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন অব্যাহত রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে গতকাল দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশব্যাপী যৌথবাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডারদের সশস্ত্র সন্ত্রাসী তান্ডবে গোটা দেশ বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। সাতক্ষীরা, মেহেরপুরে সরকার যৌথবাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে তা মানবসভ্যতার ইতিহাসে নজির বিহীন। গতকাল সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর, বিষ্ণুপুর ও ভদ্রখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে মানুষের বাড়ীঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সন্ত্রাসী হামলায় ৩টি গ্রাম পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। জেলার গ্রামগুলোতে আগুন জ্বলছে। সরকারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে জেলার অধিকাংশ উপজেলাই বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ কেউ জুলুমের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
ডা. শফিক বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে মেহেরপুরে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত হামলা, নির্যাতন চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তারা বিএনপি, জামায়াত কর্মীদের বাড়ী বাড়ী চিরুনি অভিযান চালায়। তাদের অবিরাম গুলিবর্ষণে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ ক্যাডার ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা বেশ কয়েকটি বাড়ীতে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই এলাকা থেকে ৩৭ জন মানুষকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, লক্ষ্মীপুর ও কোম্পানীগঞ্জে বাড়ীতে বাড়ীতে হামলা করে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সরকারী ক্যাডার ও যৌথবাহিনীর হামলায় শতাধিক লোক আহত ও দেড় শতাধিক লোক গ্রেফতার হয়েছে। লুটের মালামাল পুলিশের গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। বাগেরহাটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্য দিবালোকে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া প্রদর্শন করেছে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে দলীয় উচ্ছৃঙ্খল ক্যাডাররা রাজধানী ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে বিদেশী নাগরিক, কূটনীতিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর হুমকি সৃষ্টি করছে। প্রধানমন্ত্রীর একক গোয়ার্তুমির কারণে দেশ এক ভয়াবহ সংকটের গহ্বরে নিপতিত। ব্যবসা বাণিজ্যে অচল অবস্থার সৃষ্টি করে অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। বিশ্বসম্প্রদায়ের মতামত অগ্রাহ্য করে সরকার দেশকে আন্তর্জাতিক মহলে বন্ধুহীন করে তুলেছে। সরকারের বাড়াবাড়ির কারণে দেশ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হবে বলে বিশেষজ্ঞগণ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা, গণগ্রেফতার, লুটতরাজ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড বন্ধ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল, একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের তফসিল বাতিল, আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি প্রদান, জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পদত্যাগ করে দেশকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
১৮ দলীয় জোট ঘোষিত সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তি।