মুরসির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ, ব্রাদারহুডের প্রত্যাখ্যান

Mursiমিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি ও অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ও বিদেশী গ্রুপগুলোর সাথে মিলে চক্রান্ত করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার নিন্দা করে বলেছে তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ‘হাস্যকর।’ টুডেস জামান, রয়টার্স।
মিসরের সরকারি কৌঁসুলি মুরসি ও ব্রাদারহুডের ৩৫ জন শীর্ষ নেতাকে এসব অভিযোগে বিচারের নির্দেশ দেয়ার এক দিন পর ব্রাদারহুড তাদের বিবৃতিতে মুরসিকে মুক্তি দিতে চাপ সৃষ্টি করার জন্য আবার সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এসব অভিযোগের মাধ্যমে বিচার করে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কৌঁসুলি এসব অভিযোগকে ‘মিসরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ষড়যন্ত্র’ বলে ঘোষণা করে বলেন, ২০০৫ সালে এ ষড়যন্ত্রের সাথে ফিলিস্তিনের হামাস, ইরান সরকার ও তাদের লেবাননি মিত্র হিজবুল্লাহ জড়িত ছিল। তবে এ মামলার বিচারের কোনো তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
লন্ডন থেকে দেয়া বিবৃতি বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থার হাতে আসে। ব্রাদারহুড এসব অভিযোগকে ‘মিসরের জনগণের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান অপরাধের ব্যাপারে এক নতুন কল্পকাহিনী’ বলে অভিহিত করে। সামরিক জান্তার অনুগত বিচারকেরা দেশের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ব্রাদারহুডের অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে মিথ্যা হাস্যকর অভিযোগ উত্থাপন করছে। গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন দল হামাসও এ অভিযোগ ‘কল্পকাহিনী ও মিথ্যা’ বলে নাকচ করে দিয়েছে।
গত ৩ জুলাই মিসরের সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দমননিপীড়ন চালাচ্ছে। তারা দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা ও হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। মুরসিসহ যেসব শীর্ষ নেতা জেলে বন্দী রয়েছেন তাদের সবার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সহিংসতায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য খবরে বলা হয়, মিসরের সেনাসমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে ব্রাদারহুডের চলমান আন্দোলনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে মিসরের সুপ্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আলআজহারের গ্র্যান্ড মুফতি সরকারের পক্ষ গ্রহণ করায় এ প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বহু দশকের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সেনা অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেন। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এখন মুরসিকে পুনর্বহালের দাবিতে প্রতিদিনই আন্দোলন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউসুফ সালেহীন (২১) বলেন, ‘গ্র্যান্ড ইমাম রক্তক্ষয়ী সেনা অভ্যুত্থানকে সমর্থন দিচ্ছেন, এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আল আজহার থেকে তাকে উৎখাত না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে ক্ষান্ত হবো না। সামরিক নেতাদের সাথে তাকেও তার অপরাধের জন্য বিচার করতে হবে।’
বিগত ছয় দশক ধরে মিসরের স্বৈরশাসকেরা যেভাবে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করেছে নিজের স্বার্থে এখন আর তা করতে পারছে না। সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা সেনা অভ্যুত্থানের ঘোর বিরোধী এবং ব্রাদারহুডের সমর্থনে সোচ্চার রয়েছেন। ছাত্রদের পাশাপাশি অনেক শিক্ষকও সেনাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। ৮০ শতাংশ শিক্ষকই ব্রাদারহুডের সমর্থক। গত মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন ছাত্রকে জেল দেয় আদালত। এখনো জেলে রয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো ৮৮ জন ছাত্র।
এ দিকে মিসরের আদালত স্বৈরাচারী হোসনি মোবারক সরকারের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী আহমদ শফিক ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলার একটি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। ২০১১ সালে গণ-অভ্যুত্থানে মোবারকের ৩০ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button