গণপ্রত্যাখ্যাত নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তে জামায়াতের বিস্ময় ও উদ্বেগ
আসন্ন নির্বাচনকে একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন আখ্যায়িত করে এতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তে বিস্ময় ও উদ্বোগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান রোববার এক বিবৃতিতে এ ব্যাপারে বলেন, গণপ্রত্যাখ্যাত এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত এবং উদ্বিগ্ন। দেশের বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণ একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনকে গণতন্ত্রের নামে একটি হাস্যকর নাটক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এ নির্বাচন কমিশন ইতিপূর্বে একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছিল নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। সর্বমহলে প্রত্যাখ্যাত প্রহসনের নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তে জনগণের মাঝে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ সরকার দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে শুধু বিতর্কিত করেনি, ধ্বংস করে দিয়েছে। সর্বশেষে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্ত্র প্রহরী আমাদের গৌরবোজ্জ্বল সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে এ প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারের একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্বসম্প্রদায় এ অগ্রহণযোগ্য একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে সকল দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রতি বার বার আহ্বান জানিয়েছেন। বিনা নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে সরকার দলীয় প্রার্থী ইতিমধ্যেই নির্বাচিত হয়েছেন। অবশিষ্ট আসনে নির্বাচন নামক নাটকের জন্য সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন আমাদের গৌরবের প্রতীক দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
গণহত্যা ও ঘরবাড়ি ভাংচুরের নিন্দা
দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকার যৌথবাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে গণহত্যা ও জনগণের ঘরবাড়ী ভাংচুর, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করছে অভিযোগ করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ গতকাল পৃথব বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারের অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং প্রতিহিংসা পরায়ন আচরণে দেশ আজ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিপতিত। জনগণকে নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে সরকার অব্যাহতভাবে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা সারাদেশে মানুষের বাড়ীঘরে হামলা, লুটতরাজ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এক ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। সারাদেশে চলছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। গত কয়েকদিন যাবৎ সরকার যৌথবাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে সাতক্ষীরায় যে নৃসংশতা চালিয়েছে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে তা নজির বিহীন। সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আব্দুল খালেকের বাড়ী বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রোববার সদর পূর্ব জেলা আমীরের বাড়ী একই কায়দায় বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বাড়ীতে বাড়ীতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ সেখানে সরকারের রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। যৌথবাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে সদর ও কালিগঞ্জ উপজেলা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ৩ শতাধিক ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। জেলার অধিকাংশ উপজেলার গ্রামগুলিতে জ্বলছে আগুন। হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে নিরীহ মানুষ। নারী, শিশু, বৃদ্ধ কেউ এ হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির নির্মম শিকার হয়ে সাতক্ষীরা এক বিধ্বস্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, যৌথবাহনী ও দলীয় ক্যাডারদের সশস্ত্র হামলায় জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নীলফামারী, মেহেরপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরসহ ৩৫ টি জেলা গণহত্যার নগরীতে পরিণত হয়েছে। গত ১০ দিনে সাতক্ষীরায় ৭ জন, লক্ষ্মীপুরে ১৩ জন, নোয়াখালীতে ১১ জন, নীলফামারীতে ৮ জন, লালমনিরহাটে ৪ জন, জয়পুরহাটে ৪ জন, সিরাজগঞ্জে ৩ জন, চাঁদপুরে ২ জন, চট্টগ্রামে ২ জন, পিরোজপুরে ১ জন, কুমিল্লায় ১ জনসহ সারাদেশে বিরোধী দলের ৬০ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে ১ হাজার ৮০০ জন। গত ১০ দিনে গ্রেফতারের সংখ্যা দুই হাজারের উপরে। আহতদের মধ্যে কেউ চোখ হারিয়েছে, কেউবা হাত-পা হারিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। দেশ জুড়ে চলছে জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন।
তিনি বলেন, সরকার একদিকে গণহত্যা চালিয়ে বাংলার সবুজ জমিনকে রক্তে রঞ্জিত করছে, অপরদিকে গোটা দেশকে এক বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের বুকে গুলি চালাতে বাধ্য করতে পারে না। এ সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সংবিধান মানে না। জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে সার্বজনীন মানবাধিকারের প্রতি এ সরকারের নূন্যতম বিশ্বাস নেই। এই সরকারের হাতে দেশ, দেশের মানুষ কোনা কিছুই নিরাপদ নয়। জাতিসঙ্ঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, চীন, কানাডাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংস্থা সরকারের প্রতিহিংসাপরায়ণ ভূমিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সে সব অগ্রাহ্য করে সরকার কার্যত বিশ্বসম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
মকবুল আহমাদ বলেন, সর্বমহল থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সরকার বেপরোয়াভাবে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছে। আমি সরকারকে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষ হত্যা থেকে বিরত হোন। গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসুন। মানুষের রক্তে পবিত্র জমিনকে রঞ্জিত করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করা যাবে না। আমি সরকারের গণহত্যা, গণনির্যাতন, গণগ্রেফতার ও ঘরবাড়ি জালিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিরোধ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর কারার এবং বিশ্বসম্প্রদায়কে সরকারের এ জঘন্য মানবতাবিরোধী নৃসংশতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কার্যকর ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় “আইএসআই জামায়াত-শিবিরের মাধ্যমে নাশকতা চালাচ্ছে” এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় “জেনেভা ক্যাম্পে পাকিস্তানীদের সঙ্গে বৈঠক করে জামায়াত!” শিরোনামে রোববার প্রকাশিত খবরকে ভিত্তিহীন মিথ্যা রিপোর্টের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপি এক বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ রিপোর্ট দুটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক। জামায়াত-শিবিরের ভাবমর্যাদা ুণœ করার হীন উদ্দেশ্যেই এ রিপোর্ট দুটি প্রকাশ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সাথে জামায়াত-শিবিরের ন্যূনতম কোন সম্পর্কও নেই। এ রিপোর্টটি মিথ্যা, কাল্পনিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জেনেভা ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা বোমা, গানপাউডার ও ককটেলের সাথে জামায়াত-শিবিরের দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই। দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত গোটা রিপোর্টটিই ভিত্তিহীন মিথ্যা ও কাল্পনিক। বোমা, গান পাউডার ও ককটেল রাখার সাথে জড়িত সন্দেহে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কারো সাথে জামায়াত-শিবিরের কোন সম্পর্ক নেই। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি পত্রিকা দুটির প্রতি আহবান জানান।