সিরিয়া থেকে লাশ হয়ে ফিরলেন ব্রিটিশ ডাক্তার
গত বছর ব্রিটেনের নাগরিক ডা: আব্বাস খান সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য দুই সপ্তাহের এক সফরে লন্ডন থেকে সিরিয়া যান। কয়েক দিন পরই সিরিয়া সরকার তাকে গ্রেফতার করে। তার পরিবার তাকে দেশে ফেরত আনার জন্য সেই থেকে জোর প্রচেষ্টা শুরু করে। গত সোমবার তাদেরকে জানানো হয়, ডা: আব্বাস খান মারা গেছেন। দ্য গার্ডিয়ান।
সিরিয়ার জেলখানায় ১৩ মাস বন্দী থাকার পর গত শনিবার ব্রিটিশ অর্থোপেডিক ডা: আব্বাস খানের লাশ বৈরুত পৌঁছায়। এর আগে লন্ডনের তার ঘরটি প্রশান্তিদায়ক রঙ করে সুসজ্জিত করা হয়। তার পরিবার ভেবেছিল এত দিন জেলে থাকার পর তারা তার আরামের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে। তার সাত বছর বয়েসী মেয়ে তাকে স্বাগত জানিয়ে একটি কার্ড দিতে চেয়েছিল। ডা: খানের মা তার মুক্তির প্রচেষ্টায় কয়েক মাস ধরে দামেস্কে কাটান। গত সোমবার তাদেরকে জানান হয়, তিনি মারা গেছেন, দৃশ্যত আত্মহত্যা করেছেন।
দুই সন্তানের বাবা ৩২ বছর বয়সী ডা: আব্বাস খান গত বছর ১২ নভেম্বর তুরস্কে যান। তুর্কি-সিরিয়া সীমান্তে অসামরিক উদ্বাস্তুদের চিকিৎসা করেন। পরে সীমান্ত পার হয়ে আলেপ্পো যান। সেখান থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর ফেরার পথে ২২ নভেম্বর এক চেক পয়েন্টে তিনি আটক হন। তার পরিবার বিষয়টি লন্ডনের পররাষ্ট্র দফতরকে জানায়। কিন্তু তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ হওয়ার কারণে দফতর তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ২৪ বছর বয়সী বোন সারাহ জানান, তারা দামেস্কের ভারতীয় দূতাবাসের সাথেও যোগাযোগ করেন। অবশেষে তারা জানতে পারলেন, আব্বাস আটক হয়েছেন সিরিয়ায়। ডা: আব্বাসের মা ফাতেমা (৫৭) ছেলের সন্ধানে লেবাননে যান। সেখান থেকে চার মাস পর শুধু তার জন্য সিরিয়ায় যাওয়ার ভিসা পান।
ফাতেমা ১৮ বছর বয়সে ব্রিটেনে আসেন। এর আগে তিনি কখনো বিদেশে যাননি। তাকে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় যেতে ছেলেমেয়েরা নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি সেখানে যান। তিনি সেখানে দুই প্রস্থ কাপড় আর ছেলের কাছে প্রিয় বিস্কুট নিয়ে যান। দামেস্কে হোটেলে উঠে ছেলের সন্ধান করতে থাকেন এবং তাকে পান। তিনি বলেন, আমি আমার ছেলেকে নয়, যেন তার কঙ্কাল দেখতে পেলাম। সে হাঁটতে পারছিল না। তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। দামেস্কের কুখ্যাত কারাগার ফার ফিলিস্তিনে তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। গত শনিবার লেবাননের রেড ক্রসের মাধ্যমে আব্বাসের লাশ বৈরুতে তার মা ও ভাই যে হোটেলে ছিলেন সেখানে নেয়া হয়। ছেলের শোকে বৃদ্ধ মা ও তার অপর ছেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।