প্রগতিশীল মনোভাব ছাড়া এগিয়ে যাওয়া যায় না : রানিয়া আবদুল্লাহ

Raniah Abdullahরানিয়া আবদুল্লাহর নাম এখন অনেকের মুখে শোনা যায়। শোনা যাচ্ছে তার জীবনে সফলতার নানা ঘটনা ও কাহিনী। তার নামটি শুনলে অনেকেই তার সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কারণ তিনি কোনো সাধারণ মেয়ে বা নারী নন, বরং একজন রানী। রানিয়া আবদুল্লাহ জর্ডানের রানী। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭০ সালের ৩১ আগস্ট। ৪৩ বছর বয়সী কর্মঠ এই নারী সমাজের নানা স্তরের মানুষের জীবন কেমনভাবে চলছে তা নিয়ে চিন্তা করেন নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতাও অনেক ওপরে।
রানিয়া আবদুল্লাহকে অনেকে রানিয়া আল আবদুল্লাহও বলে থাকেন। তিনি ব্যবসায় প্রশাসনে ডিগ্রি অর্জন করেন মিসরের কায়রোর আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। রানিয়া সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে পরিচিত জাতিসঙ্ঘের সহস্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো অর্জনে প্রচুর কাজের জন্য। রানিয়া রয়েছে অ্যাপল ইনকরপোরেশনে অনেক বছরের সফলতার সাথে কাজের অভিজ্ঞতা। নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নানা বক্তব্যও রাখেন রানিয়া আবদুল্লাহ। প্রায় বছরখানেক আগে তিনি মূল্যবান বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামেও। তার এ বক্তব্য গুরুত্বসহকারে স্থান পায় গণমাধ্যমগুলোতে।
রানিয়া মাঝে মধ্যেই চিন্তা করেন, কী করে ভিন্ন কিছু, নতুন কিছু চিন্তা লাভ করা যায়, যেখানে বেশি থাকবে না প্রচলিত নিয়মকানুন, রীতিনীতি ইত্যাদি। তাই বলে রাষ্ট্রের আইনকানুনসহ নানা দিকের নিয়ম ভাঙ্গুক, এমনটি বলা হচ্ছে না। বদলে ফেলার কথা বলা যায় আমাদের সাধারণ জীবনের প্রচলিত কিছু নীতিকেই।
তিনি বলেন, প্রায় সারা বিশ্বেই এখন চলছে অর্থনৈতিক মন্দা। এমন খারাপ সময়ে সবার পক্ষে ভালো থাকা যেন একেবারেই সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত বেকারত্বের ঝুড়িতে রয়েছে আবর বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তরুণ। বিশ্বের অন্য অঞ্চলের তুলনায় যথেষ্ট বেশি এ সংখ্যা। আর বেশি হতাশাজনক অবস্থায় রয়েছেন নারীরা। অর্থাৎ তাদের বেকারত্বের হার আরো বেশি। এ কঠিন অবস্থা থেকে মুক্তি বা পরিত্রাণ চান তারা।
এসংক্রান্ত উল্টো বা বিপরীত দিকের কথাও বলেছেন রানী। যেমন- প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ কোটি ডলার ব্যয় হয় উল্লিখিত অঞ্চলের জীবনযাত্রায়। আমাদের সমাজের মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে এই বিশাল অর্থ ব্যয়ের কারণে। ধীরে ধীরে শ্লথ হচ্ছে উন্নয়নের গতি বা চাকা। বেশি হতাশার বিষয় হলো- আমাদের প্রজন্মের অনেক মানুষই রীতিমতো হতাশ, এমনকি দিশেহারাও। এর প্রধান কারণ সমাজ ও আর্থিক ব্যবস্থায় নানা সমস্যা। বেকারত্বের এই কঠিন ধারা অসহনীয় অবস্থায় এসে ঠেকেছে বলতে গেলে প্রায় ১০ বছর ধরে।
রানিয়া আবদুল্লাহ বলেন, এ অবস্থায় আমাদের চুপ মেরে বসে থাকলে চলবে না। আমরা যদি এসব মানুষকে তাদের প্রত্যাশিত কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি তবে খারাপ কিসের? তাদের শান্তি ও উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসা দরকার। এ জন্য গতানুগতিক কিছু নিয়ম বা ধারাবাহিকতার তোয়াক্কা না করাও হতে পারে। কেননা অনেক সময় আমাদের কাঁধেই চেপে বসে প্রচলিত নিয়মের কঠিন ভার।
রানী দুঃখের সাথে বলেন, আমাদের তরুণদের অনেকেই এখন পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই নড়তে চড়তে চায় না। এদের অনেকের ধারণা, সব নিরাপত্তা বা সমাধান লুকিয়ে গভর্নমেন্ট জব বা সরকারি চাকরিতেই। অথচ তারাই আমাদের আগামী প্রজন্মের সদস্য। এ ক্ষেত্রে তাদের চিন্তা-চেতনার মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসা জরুরি। অর্থাৎ পুনর্নির্মাণ করতে হবে তাদের চিন্তা-চেতনা বা ধ্যান-ধ্যারণাকে। প্রগতিশীল মনোভাব ছাড়া মোটেই এগিয়ে যাওয়া যায় না। তা ছাড়া সমাজের অনেক আশা-ভরসাও আছে তাদের প্রতি।
আর এসবের মূলে রয়েছে সুশিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষা হলো প্রায় সব ধরনের সমস্যার সমাধানকারী। বিশেষ করে গুণগত শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে হবে। যার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে উদ্যোক্তা হিসেবে। এ জন্য তাদের উৎসাহ দিতে হবে পারস্পরিক যোগাযোগ ও নেতৃত্ব বিকাশে। ভালো কোনো উদ্যোগ গ্রহণের আগে প্রায়োগিক শিক্ষা অর্জন প্রয়োজন। সফল উদ্যোক্তা হওয়া মানেই আরো প্রচুরসংখ্যক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা। এভাবে চলে আসে সুযোগের পর সুযোগ। অর্থাৎ নতুন কিছু সৃষ্টি হতে পারে শূন্য থেকেও।
অনেকেই বলেন, আমরা আমাদের বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার কমাতে পারব না বাইরের কোনো শক্তির সাহায্য ছাড়া। রানী বলেন, এ কথা মোটেই ঠিক নয়। আমরা আমাদের প্রজন্মের সৃষ্টিশীলতাকে গুরুত্ব দিলেই অনেক ধরনের বাধা অতিক্রম করতে পারব সহজেই। আমাদের তরুণদের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখবে, যদি নতুন উদ্যোগ ও উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করা যায়, অপ্রয়োজনীয় ও কঠিন সরকারি নিয়মগুলোর বাধা কমিয়ে আনা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় লাল ফিতার দৌরাত্ম্য। এটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা। এর দৌরাত্ম্যও কমিয়ে আনতে হবে।
নতুন কর্ম ক্ষেত্রে সৃষ্টি করে ক্ষুদ্র ব্যবসায় ও উদ্যোগ। এটি কাজ করে রীতিমতো ডায়নামো হিসেবে। আমাদের ভুল বুঝলে চলবে না তারুণ্যের উদ্যোগ ভাবনাকে। তারুণ্য যাতে তার নিজের মতো করে চলতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তবে আমাদের উচিত হবে তরুণদের ঝুঁকি গ্রহণের উৎসাহ দেয়া, সাহস দেয়া। শিশুরা ভবিষ্যতে কিভাবে বড় বা সুন্দর সুযোগ আয়ত্ত করতে পারবে, তা তাদের বলতে পারে। সবারই থাকে ব্যক্তিগত কল্পনা ও নিজস্ব লক্ষ্য। এগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে উদ্ভাবনী চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button