পরিবর্তনের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় তারেক রহমানের
পরিবর্তনের এক সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কৃষি, শিক্ষা ও শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে বদলে দেয়া সম্ভব দেশকে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে দেয়া এক ব্যতিক্রমী বক্তৃতার মাধ্যমে উপস্থিত শত শত মানুষের সামনে তিনি তুলে ধরেন তার গবেষণাধর্মী এ চিন্তাভাবনা।
তারেক রহমান বলেন, কেবল অতীতমুখিতা নয়, আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে। দেশের কৃষি, শিক্ষা ও শিল্পকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আমরা পৃথিবীতে একটি মডেল দেশে রূপ দিতে পারবো।
বুধবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের বিএনপি আয়োজিত ইফতার-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিএনপি নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সভাপতি শাইস্তা চৌধুরী কুদ্দুস।
সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমদের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম উদ্দিন সেলিম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আবু সায়েম।
দেশের জন্য সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, কটূ কথা বলে প্রতিপক্ষকে আঘাতের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তৈরি করতে হবে নিজেদের দেশ গড়ার যোগ্য হিসেবে। বাংলাদেশকে কৃষিপ্রধান দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষি ব্যবস্থার মানোন্নয়ন করতে হবে। কৃষির অতীত ও বর্তমানকে সামনে রেখে সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দরকার।
তিনি বলেন, কৃষির আধুনিকায়নে কৃষি তথ্যভান্ডার গড়তে হবে। এ তথ্যভান্ডারে দেশের সব জায়গার জমি উর্বরতা, ফলন ও উৎপাদনসহ সার্বিক বিষয়ের তথ্যাদি থাকবে। কৃষকের কৃষি উৎপাদন সহজলভ্য করতে একটি কৃষিবান্ধব মূল্য নির্ধারণ কমিশন গঠন করার কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, কৃষক যাতে সার, কীটনাশক ও বীজ সময়মতো পায় সে সুযোগ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিব্যাংক তাদের প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। এ পরিকল্পনায় কৃষির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কেবল লাভবান হবে না, পুরো দেশ লাভবান হবে।
কৃষি সমপ্রসারণে কৃষি ব্যাংকের উন্নত সেবার ওপর জোর দেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, কৃষি চাষ বলতে আমরা কেবল সমতল ভূমি বুঝি। এ ধারণা ঠিক নয়। দেশের পাহাড়ি এলাকাসহ অন্যান্য এলাকাতেও পরিকল্পিত কৃষিকাজ বাড়াতে হবে। এর ফলে দেশের কৃষিতে বৈচিত্র্য আসবে।
দেশ এগিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, শিক্ষা একটি জাতির মূল্যবান সম্পদ। যেকোনো দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত শিক্ষা। একজন শিক্ষিত মানুষ মূল্যবান বিশ্ব নাগরিক।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন দেশের শিক্ষানীতিকে নতুন করে সাজানো। এতে সময় উপযোগী নতুন নতুন বিষয়ের সংযোজন। এ ক্ষেত্রে ‘পারসোনাল ও প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট’ নামক একটি বিষয় পাঠে অর্ন্তভুক্ত করলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
তারেক রহমান বলেন, দেশের শিক্ষাকে বাস্তব ও কর্মমুখী করে তৈরি করা দরকার। ছাত্র-ছাত্রীদের কেবল লেখা পদ্ধতির পরীক্ষার মধ্যে না রেখে তাদের হাতে-কলমে শিক্ষা বাড়ানো দরকার। এ ক্ষেত্রে লেখার মাধ্যমে মূল্যায়ন শতকরা ২-৩ শতাংশ রেখে বাকিটা অ্যাসাইনমেন্ট ভিত্তিক মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, বর্তমান বিশ্ব প্রতিযোগিতাময়। এ ক্ষেত্রে বিদেশি ভাষাতেও আমাদের দক্ষ হতে হবে। বাংলার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ ও আরবি ভাষা শিক্ষা দেয়া দরকার। এর মাধ্যমে বিদেশে দক্ষ মানবসম্পদ পাঠানো সম্ভব হবে। দেশের সব জনশক্তি দক্ষ হলে দেশে বেকারত্বের সমস্যা থাকবে না।
শিল্পের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, দেশকে শিল্পে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা সময়ের দাবি। দেশে শিল্পের বিকাশ হলে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হবে। দেশের আর্থিক সমস্যা দূর হবে। শিল্পের বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে শতকরা ৯২ শতাংশ হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। আর এটি সংখ্যায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি। দেশকে উন্নত করতে হলে সঠিক শিল্প পরিকল্পনার মাধ্যমে এগুতে হবে। দেশে নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হবে। শিল্পে এমন পরিকল্পনা থাকবে যাতে এখান থেকে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারি।
দেশের গার্মেন্টস শিল্প প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, দেশের আয়ের এক বিশাল অংশ অর্জন হয় গার্মেন্টস থেকে। এ জন্য শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন ও কারখানার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গার্মেন্টস শিল্পের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করারও পরামর্শ দেন তারেক রহমান।
শিল্পের উন্নয়নে চীনের প্রসঙ্গ এনে তিনি বলেন, চীন তাদের শিল্প কারখানার মাধ্যমে নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়েও রপ্তানির মাধ্যমে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রতি বছর আয় করে। বাংলাদেশেও যদি সঠিকভাবে শিল্প পরিকল্পনা নেয়া হয় তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির মাধ্যমে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার আয় অর্জন করা সম্ভব।
দেশের চলমান রাজনীতি প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, দেশের জনগণের এ মুহূর্তে দাবি হচ্ছে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে আগামী নির্বাচন। দেশের উন্নয়ন কেবল নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচিত সরকারই করতে পারে। বিদেশে ও দেশে সব দেশপ্রেমিক জনতাকে তাদের নিজেদের অবস্থান থেকে দেশে একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।