রাজধানীতে সাংবাদিক খুন
একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রবীণ ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদ খুন হয়েছেন বুধবার সকালে। আর সকাল থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন আফতাব আহমেদের ব্যক্তিগত গাড়িচালক কবির। নিহতের পরিবার জানায়, টাকা চুরি নিয়ে কবিরের সঙ্গে তার বিভিন্ন সময় কথা কাটাকাটি হয়েছে। এমনকি হত্যাকান্ডের আগেরদিন মঙ্গলবার রাতেও কবিরের সঙ্গে আফতাব আহমেদের কথা কাটাকাটি হয়। এসব আলামত অনুযায়ী আপাত দৃষ্টিতে হত্যাকান্ডের ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের সন্দেহের তীর গাড়ি চালক কবিরের দিকেই। তবে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজের বুয়া নাছিমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসিম আহমেদ জাস্ট নিউজকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজের বুয়া নাছিমাকে নিয়ে গেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, গাড়ি চালককে পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করছে, তবে এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত (বুধবার রাত সাড়ে ৭ টা) কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
আফতাব আহমেদের মেয়ে আফরোজ আহমদ বলেন, বাজার থেকে তার বাবার কোনো কিছু লাগলে গাড়িচালককে দিয়ে আনা হতো। গাড়িচালকরা টাকা মেরে দিত। বিভিন্ন সময় চালকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হতো। চলতি ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে কবির নামের এক গাড়িচালক নেয়া হয়েছে। এর আগে কাজের বুয়া নাসিমার ছেলে নাজমুল গাড়ি চালাত।
কাজের মেয়ে নাসিমার বরাত দিয়ে আফরোজ বলেন, গত রাতেও গাড়িচালক কবিরের সঙ্গে বাবার কথা কাটাকাটি হয়েছে। সকাল থেকে গাড়িচালক কবির নিখোঁজ রয়েছেন বলেও তিনি জানান।
প্রবীণ ফটো সাংবাদিক আফতাফ আহমেদের দীর্ঘদিনের সহকর্মী ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি আবুল খায়ের দাবি করে বলেন, আফতাব আহমেদের কোনো শত্রু থাকতে পারে না। এই হত্যাকাণ্ডে আফতাব আহমেদের গাড়ি চালক জড়িত থাকতে পারে বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, গাড়ি চালকই সবসময় তার সঙ্গে থাকতো। প্রবীণ এই সাংবাদিকে টাকা-পয়সার লোভো এই হত্যাকা- ঘটতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।
রামপুরার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা জানান, আফতাব আহমেদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আমরা। আফতাবের ঘরটি তছনছ করা হয়েছে। তার গাড়ি চালক কবির পলাতক।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর রামপুরার ওয়াপদা রোডের বাসা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বুধবার দুপুরে আফতাব আহমদের (৭৮) মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি একুশে পদকপ্রাপ্ত ফটোসাংবাদিক ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক চিফ ফটোগ্রাফার।
পশ্চিম রামপুরার ৬৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে চারতলার ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকতেন আফতাব আহমেদ। তার দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে মনোয়ার আহমেদ যশোরে এবং মেয়ে আফরোজা আহমেদ তার স্বামী ফারুক আহমেদের সঙ্গে গাজীপুরে থাকেন।
আফতাব উদ্দিন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার চিফ ফটো সাংবাদিক ছিলেন। তিনি ২০০৬ সালে একুশে পদক পান। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় কুড়িগ্রামে জেলে পরিবারের মেয়ে বাসন্তীর জাল পরে লজ্জা নিবারণের ছবি তুলে তিনি দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছিলেন।
১৯৩৫ সালে আফতাব আহমেদ রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানার মহিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি রংপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন। সে বছরই তিনি এইচএসসিতে ভর্তি হন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি চাকরি করার পর ১৯৬২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে ফটো সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন তিনি।