ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা শান্তির্পূভাবে সফল করুন : জামায়াত
গত ৫ দফা অবরোধ চলাকালে দেশব্যাপী সরকারের নৈরাজ্য সৃষ্টি, গণহত্যা, গণনির্যাতন, গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে ১৮ দলীয় জোট ঘোষিত আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচী ও ২৯ ডিসেম্বর ‘ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা’ কর্মসূচী শান্তিপূর্ণ উপায়ে সর্বাত্মকভাবে সফল করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান বুধবার এক বিবৃতিতে এ আহবান জানিয়ে বলেন, সরকারের অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন বাতিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল করে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ১৮ দলীয় জোট ঘোষিত শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচী দেশের জনগণ সর্বাত্মকভাবে সফল করেছে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে বেসামাল হয়ে সরকার দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া তাণ্ডবে ৫ দফা অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে ১৮ দলীয় জোটের ১২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৪ হাজারের অধিক লোক। গ্রেফতার করা হয় ১২ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে।
সরকার যৌথবাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডারদের দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ঘরবাড়ি ধ্বংস, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে সাতক্ষীরা, জয়পুরহাট, মেহেরপুর, লালমনিরহাাট, নীলফামারী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ ৩৫টি জেলায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সরকারের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড, গণহত্যা, গণগ্রেফতার ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ১৮ দলীয় জোট দেশব্যাপী থানা, উপজেলা, জেলা এবং মহনগরগুলোতে বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে সফল করে তোলার জন্য আমি দেশের আপামর জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সরকার মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের নামে গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েমের ষড়যন্ত্র করছে। সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেশে ভয়াবহ নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রীয় তান্ডবতায় দেশের ১৬কোটি নাগরিক আজ নিরাপত্তাহীন। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পদদলিত। অর্থনীতি বিধ্বস্ত। গোটা দেশ রক্তাক্ত। সর্বত্রই সংশয়, শঙ্কা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই সরকার মানুষ হত্যা করছে। সরকারের এসব নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে এবং মানুষের ন্যায্য ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে স্বৈরশাসনের কবল থেকে উদ্ধার করার জন্য ১৮ দলীয় জোট ২৯ ডিসেম্বর রবিবার ‘ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা’ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। এই কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে সফল করে তোলার জন্য আমরা দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি এবং প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেছি।
তিনি বলেন, কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, সরকার এ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচীতে বাধা দেয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের মন্ত্রীরা ১৮ দলীয় জোটের এ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বাধা দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সব অঙ্গ সংগঠনকে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, সভা-সমাবেশ করা প্রত্যেক নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের বৈধ, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। ১৮ দলীয় জোটের এ বৈধ অধিকারের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সরকার দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির যে ষড়যন্ত্র করছে, জনগণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেকোনো মূল্যে তা মোকাবেলা করবে।
ডা. শফিক বলেন, আমি সরকারকে বলবো, মানুষের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করুন। একগুয়েমি, হঠকারিতা পরিহার করে জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন এই মুহূর্তে বন্ধ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল করে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন। স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী পথ পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে আসুন। অস্ত্রের জোরে জনগণের উপর আধিপত্য বিস্তারের ষড়যন্ত্র কখনো শুভ ফল বয়ে আনতে পারে না। ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে তা ভন্ডুল করার চক্রান্ত পরিহার করে সহযোগীতা করুন। অন্যথায় জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলনে আপনাদের পতন নিশ্চিত।
সরকারের উস্কানী ও ষড়যন্ত্র চরম ধৈর্য এবং সহনশীলতার সাথে মোকাবেলা করে আগামী ২৯ ডিসেম্বর ‘ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রা’ কর্মসূচী সফল করে সরকার পতনের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তি।