শেয়ারবাজারের প্রণোদনার অর্থ গেল কমার্স ব্যাংকে!
সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু: শেয়ারবাজারের প্রণোদনার অর্থ গেল কমার্স ব্যাংকে। শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার ৯০০ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। এই প্যাকেজ থেকেই সাড়ে ৬৭ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংককে। সরকারি মালিকানাধীন এই ব্যাংকটিকে মূলধন ঘাটতি পূরণে এই অর্থ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অর্থছাড়ের বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়। পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের এই অর্থ ব্যাংকের মূলধন খাতে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়ায় অনেকে নানা ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। তারা বলেছেন, পুঁজিবাজার প্রণোদনার অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া সরকারি এই ব্যাংকটি বর্তমানে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এই সমস্যা না মিটিয়ে অর্থ প্রদান করা হলে অনিয়মকে আরো উৎসায়িত করা হবে।
সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে, ‘বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের মূলধন ঘাটতি পূরণকল্পে রাইট শেয়ার ইস্যুর জন্য সরকারের ধারণকৃত শেয়ার সংগ্রহে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ছাড় করা হলো’।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুবিধার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এক বছর আগে একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। ৯০০ কোটি টাকার এই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ বরাবর ৩০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ছাড় করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে এই অর্থ বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজকে ঋণ হিসেবে দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের শর্তারোপ করায় এবং সুবিধাজনক না হওয়ায় খুব কমসংখ্যক মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজই এই অর্থ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। ফলে প্রণোদনার বিপুল অর্থের পুরোটি ব্যবহার করা হয়নি। এখন এই অর্থ থেকেই কমার্স ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য সাড়ে ৬৭ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে কমার্স ব্যাংকের সরকারের শেয়ারের অংশ হচ্ছে ৫১ শতাংশ। ছাড়কৃত অর্থ দিয়ে ব্যাংকটি ১০০ টাকা শেয়ারের বিপরীতে একটি রাইট শেয়ার ইস্যু করবে। ইস্যুকৃত শেয়ারের অর্থ দিয়ে ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করা হবে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। এক সময় এই মূলধন বৃদ্ধির জন্য তারা নিজেদের শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্তিরও আবেদন করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন অনিয়মের কারণে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সে আবেদন নাকচ করে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রণোদনার ৯০০ কোটি টাকার মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা অনেক দিন আগেই আইসিবিকে দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজকে স্বল্প সুদে এই অর্থ ঋণ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এক দফা সময় বাড়িয়েও তাদের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার বিষয়ে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এখন দ্বিতীয় দফা সময় বৃদ্ধি করে এই অর্থ বিতরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ লাখ ুদ্র বিনিয়োগকারীর মধ্যে মাত্র এক ভাগ এই স্কিম থেকে অর্থ নেয়ার জন্য আবেদন করেছে। তাই ব্যাংকের মূলধন খাতে অর্থ দেয়া হলেও এই প্যাকেজে এখনো বিপুল টাকা অলস পড়ে রয়েছে। এখানে অর্থের কোনো অভাব হবে না।
অন্য দিকে শেয়ারবাজারের প্রণোদনা টাকা ব্যাংকের মূলধন খাতে ব্যবহারের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে সামগ্রিক পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ পুঁজিবাজারের প্রণোদনার অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই ব্যবহার করা প্রয়োজন, অন্য কোনো খাতে নয়।