বিরোধী দল বিহীন নির্বাচনে জন আকাঙ্খা প্রতিফলনের সুযোগ নেই
যুক্তরাজ্য পার্লামেন্ট সদস্য জন স্টিভেনসন বলেছেন বিরোধী দল বিহীন এক তরফা কোন নির্বাচনে জন আকাঙ্খা প্রতিফলনের সুযোগ নেই। এরকম কিছু হলে সেটা গণতন্ত্রের সঙ্গে প্রহসন ছাড়া ব্যাতিত কিছু নয়। কোন দেশে এরকম নির্বাচন হলে কারো কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাবে বলে বিশ্বাস হয় না। গণতন্ত্রের মূল চিন্তাই হচ্ছে জনগনের ইচ্ছা নির্বিঘ্নে স্বাধীন ভাবে ভোটের মাধ্যমে প্রকাশ করা। বিরোধী দল নির্বাচনে না থাকলে জনগনের মতামত প্রকাশের সেই সুযোগই থাকবে না।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সিটিজেন মুভমন্টে এবং কমিটি ফর হিউম্যান রাইটস্্ অ্যান্ড ডেমক্রেসির উদ্যোগে যুক্তরাজ্যের কাম্ব্রিয়া কাউন্টির কার্লাইলে একটি রেস্টুরেন্ট আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য জন স্টিভেনসন একথা বলেন। কমিটি ফর হিউম্যান রাইটস্ অ্যান্ড ডেমক্রেসির আহ্বায়ক মোশাহিদ হোসেইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অথিতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর কলিন গ্লোভার, সিটিজেন মুভমেন্টের আহ্বায়ক এম এ মালেক, ১৮ দলীয় জোট নেতা মুফতি শাহ সদর উদ্দিন, যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত দৈনিক আমার দেশ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমান, কাউন্সিলর আবদুল হারিস প্রমূখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সৈয়দ সিদ্দিক। সেমিনারে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সংসদ সদস্য জন স্টিভেনসন বলেন, বাংলাদেশ এখনো একটি শিশু গণতন্ত্রের দেশ। এখানে জনগনের ইচ্ছাকে প্রধান্য দিতে হবে। জনগনের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বল প্রয়োগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চলমান ঘটনাবলী নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যের সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগি হিসাবে যুক্তরাজ্য সব সময়ই বাংলাদেশে সুষ্টু, অবাধ এবং গ্রহযোগ্য নির্বাচন চাইবে। গণতন্ত্রকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে হলে স্বাধীন এবং নির্বিঘœ পরিবেশ তৈরির মাধ্যমেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। ।
এম এ মালেক বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর এখন একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রের কথা বলে মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় এসে তিনি গণতন্ত্র হরন করেন এবং সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে এক দলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখনো হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে হত্যা, গুম করা হয়েছিল। পিতার চিন্তা এবং আদর্শেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিরোধী দলের উপর দমন নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। অনেক নেতা কর্মীকে ধরে নিয়ে গুম করা হয়েছে। এর আগে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াছ আলী ও তাঁর ড্রাইভার আনসার আলীকে গুম করেছে। এখন শুধু গুম নয়, বাসা বাড়িতে প্রবেশ করে মানুষ হত্যা করছে, ঘর বাড়ি ধ্বংস করছে। অনেক নারী ও মেয়ে শিশুদের ধর্ষনের অভিযোগ সংবাদ পত্রে উঠে আসছে। তিনি বলেন এই অবস্থায় একটি দেশে গণতন্ত্র চলছে বলা যায় না। সেটা গণতন্ত্রের নামে হিটলার, মুসলিনীর একনায়কতন্ত্র চলছে।
মুফতি শাহ সদর উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে রাজপথে মানুষকে যেভাবে গুলি করা হচ্ছে, যেভাবে ৫ মে রাতে মতিঝিলে গণহত্যা চালানো হয়েছে এর পর আর বলা যায় না গণতন্ত্র আছে। এখন শেখ হাসিনার এক নায়কতন্ত্র এবং চরম স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চলছে। এই অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে হলে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে উন্নয়ন সহযোগী দেশ গুলোর সহযোগিতা লাগবে।
কাউন্সিলর আবদুল হারিছ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হবে। গণতন্ত্র ছাড়া মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন সম্ভব নয়। এজন্য দরকার ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের জুলুম, নির্যাতনের ফলে নির্বাচনের সেই পরিবেশ নেই। বিরোধী দল নির্বাচনে না আসায় গণতন্ত্র হুমকির মুখ পড়েছে।
অলিউল্লাহ নোমান বলেন, বাংলাদেশে এক দিকে চলছে রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড, আরেক দিকে ভিন্নমতের গণমাধ্যমকে গলা টিপে ধরা হচ্ছে। স্বাধীন ভাবে কারো সরকারের অন্যায়, অত্যাচার, বিচারের নামে অবিচার করার কোন সুযোগ নেই। বর্তমান গণতান্ত্রিক স্বৈরাশসনে ভিন্ন মতের গণমাধ্যম গুলোকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দৈনিক আমার দেশ সম্পাদককে গ্রেফতারের পর পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ করা হয়েছে। সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হচ্ছে।
সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলোর হত্যাকান্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং উন্নয়ন সহযোগি দেশ হিসাবে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতার বলিষ্ট ভুমিকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।