‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচী পালন অব্যাহত রাখুন : জামায়াত

সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে, সুশৃঙ্খলভাবে ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচী পালন অব্যাহত রাখার  জন্য কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজসহ দেশের আপামর জনগনের প্রতি আহবান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
রোববার দলের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ এক বিবৃতিতে এ আহবান জানিয়ে বলেন, গণতন্ত্র হত্যাকারী ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী এ সরকার  রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশকে অচল করে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, জাতীয় প্রেসকাব ও রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে এক ভয়াবহ তান্ডব সৃষ্টি করেছে। সারা দুনিয়ার কাছে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে। জনগণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বাধা দিয়ে আওয়ামী লাঠিয়াল বাহিনী যে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করেছে তা ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার নৃশংস পাশবিকতার কথাই দেশবাসীকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিল।
বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, সরকার অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে বিরোধী দলীয় নেতার প্রটোকল প্রত্যাহার করে তাকে কার্যত: গৃহবন্দী করে রেখেছে। তার বাসার সামনে বালির ট্রাক, জলকামান ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করেছে। বিরোধী দলীয় নেত্রী ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে যোগ দেয়ার জন্য যাত্রা শুরু করলে সরকার বাধার সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন করছে। সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, পেশাজীবী সম্প্রদায় ও সুশীল সমাজ এ দাবীর প্রতি আবারো একাত্মতা প্রকাশ করে ৫ তারিখের একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন স্থগিতের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জনগণের এ আন্দোলন শান্তিপূর্ণ। কিন্তু আওয়ামী লীগ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় থাকতে চায়।
মকবুল আহমাদ বলেন, আজ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্টে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় প্রধান ফটকের তালা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা করেছে। তারা আইনজীবীদের উপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে আহত করেছে। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করার যে চক্রান্ত এ সরকার শুরু করেছিল, আজ দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা সন্ত্রাস সৃষ্টি ও অগ্নিসংযোগ করে আদালতের অবশিষ্ট অস্তিত্বটুকুও তারা ধ্বংস করে দিল। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে দেশের বিচার বিভাগ, আইনজীবী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ কেউ নিরাপদ নয়।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানুষের মত জাতির সামনে তুলে ধরার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেসকাবে আজ সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে আওয়ামী ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে সাংবাদিকদেরকে আহত করেছে। প্রেসকাবের আসবাবপত্র ও গাড়ী ভাংচুর করেছে। সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মালিবাগে গুলি করে শিবির নেতা মনসুর আহমদকে হত্যা করেছে। আজ সারা দেশে সহ¯্রাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি সরকারের এসব নৃশংস তান্ডব ও মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, এ সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, সংবিধান মানে না। এ সরকার ফ্যাসিস্ট সরকার। বর্তমান সরকার নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জনগণ সরকারের সকল ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে তাদের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করে সরকারের পতন নিশ্চিত করবে ইনশাআল্লাহ্।
তিনি বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষ, মাত্র কয়েকজন লুণ্ঠনকারীর হাতে বন্দী থাকতে পারে না। সারা দুনিয়ার কাছে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে। ১৮ দলীয় জোট শান্তিপূর্ণভাবে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে অংশগ্রহণের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ ঢাকা অভিমুখে যাত্রা শুরু করলে আওয়ামী ক্যাডাররা লাঠি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় হামলা চালায়। সরকার বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ করে দেয়। ঢাকা শহরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এক ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকারের দায়িত্ব যেখানে জনগণের সমস্যার সমাধান করা, সেখানে সরকার নিজেই যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে জনগণের সীমাহীন দূর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। এটা গণতান্ত্রিক সরকারের চরিত্র নয়। জাতীয় পতাকা হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচী বাস্তবায়নকালে আইনজীবী, সাংবাদিক এবং নিরীহ জনতার উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করলো, তারাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী দল।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে বলেন, জেদ, হঠকারিতা, একগুঁয়েমি পরিহার করে ৯০ ভাগ মানুষের দাবী মেনে নিন। হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের পথ পরিহার করুন। গণবিচ্ছিন্ন হওয়ার পরিণতি মোটেই শুভ নয়। আপনার একক গোয়ার্তুমীর কারণে গোটা দেশ আজ বিধ্বস্ত। দলীয় স্বার্থ পরিহার করে জনগণের দিকে তাকান। এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে দেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান, গণতন্ত্র রক্ষা করুন।আমি দেশের জনগণকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। জাতিসংঘ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং বিশ্বের গণতন্ত্রকামী সংস্থা ও মহলকে এ গণতন্ত্র হত্যাকারী স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কার্যকর ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।  বিজ্ঞপ্তি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button