ঈদ ফ্যাশনেও হেফাজত

‘ঈদ ফ্যাশনেও হেফাজত’ শিরোনামে একটি খবর মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। খবরটিতে বলা হয়, শুধু ৪ সিটি নির্বাচনের ফলাফলেই নয়, ঈদ ফ্যাশনেও প্রভাব ফেলেছে হেফাজতে ইসলাম। বিশেষত নারীদের পোশাকের ডিজাইনে এ প্রভাব স্পষ্ট। ঈদকে সামনে রেখে কোনও কোনও ফ্যাশন হাউস নেমেছে হেফাজতি ১৩ দফা বাস্তবায়নে। রাজধানী ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলোর পাশে থাকা বিজ্ঞাপনি বিল-বোর্ডই এর বড় সাক্ষী। শাহবাগ রূপসী বাংলা হোটেল মোড়ে এমনই একটি বিল বোর্ডে শোভা পাচ্ছে হেফাজতি সাজে সজ্জিত দুই নারী মডেল। বিজ্ঞাপনটি ফ্যাশন হাউজ নগরদোলা’র। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের নারী সমাজকে যে চেহারায় দেখা যাবে, তারই অনুসরণে এই সাজ। ফ্যাশন হাউজগুলো ব্যাপারটিকে ব্যবসায়িক কৌশল হিসেবে দেখলেও দেশের নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রীরা বলছেন ভিন্ন কথা।
আমরা জানি, বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষের ধর্ম ইসলাম। ইসলাম নারীদের স্বভাবসুলভ শালীন পোশাক পরতে উদ্বুদ্ধ করে। তাই স্বাভাবিক কারণে বাংলাদেশের নারীদের বৃহত্তর অংশের মধ্যে পোশাক সংস্কৃতিতে ইসলাম প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের সমাজ বিকাশের ধারায় লক্ষ্য করা যায়, এক সময় ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারীরা বোরকার মাধ্যমে হেজাবের বিধান পালন করতেন। বর্তমান সময়ে ধর্ম সম্পর্কে লেখাপড়ার পরিসর ও মান বৃদ্ধি পাওয়ায় মুসলিম মেয়েরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, বোরকা ছাড়াও অন্যভাবে হেজাব পালন করা যায়। ফলে এখন টেলিভিশনের পর্দা থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, বিশ্ববিদ্যালয়, বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষিত আধুনিক মহিলাদেরও রুচিসম্মতভাবে হেজাব পালন করতে দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশেই নয়, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন উন্নত দেশেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী মহিলারাও হেজাবের প্রযোজনীয়তা উপলব্ধি করে নির্দ্বিধায় এখন তার চর্চা করছেন। প্রসঙ্গত বাংলাদেশে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বড় মেয়ে নোভার কথা উল্লেখ করা যায়। তিনিও আমেরিকায় পিএইচডি করতে গিয়ে মুসলিম মেয়েদের পর্দার বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন এবং নিজে হেজাব ধারণ করেছেন। মৃত্যুর দিন কয়েক আগে স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদ তার বড় মেয়ের হেজাব পড়ার ব্যাপারটি এক লেখায় উল্লেখ করেছেন।
পত্রিকান্তরে হেজাবের বিষয়টি নিয়ে যিনি প্রতিবেদন রচনা করেছেন, রূপসী বাংলার হোটেল মোড়ের বিলবোর্ডে হেজাব পরিহিত দুই নারী মডেলের বিজ্ঞাপনটি দেখে তিনি হয়তো কিছুটা চমকে উঠেছেন। তিনি বিল বোর্ডের হেজাবের বিজ্ঞাপনের সাথে হেফাজতে ইসলামের একটি সম্পর্ক সূত্র খোঁজার চেষ্টা করেছেন। তিনি হয়তো ভেবেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের যে ধাক্কা লেগেছে, বিলবোর্ডে হেজাব পরিহিত নারী মডেলের বিজ্ঞাপনও হয়তো তারই প্রভাবে নির্মিত হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদকের এমন বিবেচনাকে খ-িত ভাবনার ফল হিসেবেই ভাবতে হয়। আমরা জানি যে, তাৎক্ষণিক  প্রতিবেদন এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কিছুটা গবেষণার প্রয়োজন হয়। আলোচ্য প্রতিবেদক যদি বাংলাদেশের সমাজ বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে কিছুটা জানার কষ্ট স্বীকার করেন তাহলে উপলব্ধি করবেন যে, বর্তমান পৃথিবীতে সভ্যতার যে দ্বন্দ্ব চলছে তার প্রেক্ষিতে সচেতন ও বিজ্ঞানমনস্ক  মুসলিম নারীরা নিজেদের নতুন করে আবিষ্কারে সমর্থ হচ্ছেন। এসব নারী যাবতীয় হীনমন্যতা পরিত্যাগ করে অধীত জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের মর্মবাণীর সমন্বয়ের মাধ্যমে আলোকিত ও আনন্দময় এক নতুন পথের সন্ধান পেয়েছেন। অন্ধ অনুকরণ ও কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ায় প্রত্যয়ী এমন নারীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। জ্ঞানদীপ্ত ও ধর্মপরায়ণ এমন মেয়েরা তো পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণে স্বল্পবসনা হতে পারেন না। এ বিষয়টি ফ্যাশন হাউজের সৃজনশীল এক উদ্যোক্তার বক্তব্যেও উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, অনেক মেয়েই এখন হেজাব পরেন, বোরকা পরেন। তাদের কাছে এসব পণ্যের প্রচারণার জন্য এভাবে আমরা বিজ্ঞাপনের আয়োজন করেছি। সহজ এবং স্বাভাবিক এ বিষয়টি আমাদের তথাকথিত প্রগতিশীল নারী অধিকার নেত্রী, সংস্কৃতিসেবী ও মিডিয়া কর্মীরা উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button