সাংবাদিক হত্যা ও জাতীয় প্রেসক্লাবে হামলাকারীদের গ্রেফতার না করলে দূর্বার আন্দোলন
দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান ফটোগ্রাফার, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক এবং ঐতিহাসিক ‘বাসন্তি ছবি’র ফটোগ্রাফার আফতাব আহমদকে হত্যা এবং জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ইউকের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভা সোমবার অনুষ্ঠিত হয়।
পূর্ব লন্ডনের স্থানীয় একটি হলে আয়োজিত সভায় বক্তারা আফতাব আহমদকে হত্যার ঘটনাকে সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ড উল্লেখ করে বলেন, আফতাব আহমদ একটি ছবির মাধ্যমে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীর দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে বিশ্ব বিভেককে জাগিয়ে তুলেছিলেন। যে ছবির কারনে জাতি দুঃশাসনের হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলো এবং গণতন্ত্রের পথে ফিরে এসেছিলো বাংলাদেশ। তাই আফতাব আহমদ ছিলেন জুলুমবাজ শ্রেণীর টার্গেট। স্বাধীনতার প্রায় ৪৩ বছর পর বিখ্যাত সেই সাংবাদিককে হত্যা করে এখন সেটাকে ডাকাতির ঘটনা হিসেবে সাজাতে চাইছে। বক্তারা অবিলম্বে আফতাব আহমদ হত্যার রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন।
বক্তারা জাতীয় প্রেসক্লাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে জাতীয় সাংবাদিকদের উপর ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদ সাংবাদিকরা করা যদি অপরাধ হয় তবে পৃথিবীতে সাংবাদিক লেখনি বন্ধ করে দিতেন। সাংবাদিকরা লেখনির মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারনে যে নৃশংস বর্বরতা চালানো হয়েছে সেই সব অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানিয়ে বক্তারা বলেন, ক্যামেরার সামনে সন্ত্রাসীরা যে বর্বরোচিত হামলা করলো সেটার নিন্দা জানানোর ভাষাও আমাদের জানা নেই।
বিশিষ্ট সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কবি, কলামিস্ট শিহাবুজ্জামান কামাল এর পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক ইউরো বাংলার প্রাক্তন সম্পাদক আব্দুল মোমিন জাহেদী ক্যারল, সাংবাদিক ঢাকা পোষ্টের সম্পাদক, বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ওমর ফারুক, সাংবাদিক আকবর হোসেন, সাপ্তাহিক বাংলা সংলাপ এর সম্পাদক মোশাহিদ আলী, দি সান রাইজ টুডের সম্পাদক এনাম চৌধুরী, বাংলা টিভির সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল কাদির মোরাদ, সিনিয়র ক্যামেরা পার্সন রেজাউল করিম মৃধা, সাংবাদিক তৌহিদুল করিম মোজাহিদ, সাইদুর রহমান মওজু, বিশিষ্ট মুরব্বী আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী সাংবাদিক আফতাব আহমদ হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর হত্যার বিচার হয়নি, তাই ঘাতক চক্র বার বার এমন দুঃশাহস দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে যদি এখন গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের নমুনা এমন হয় তবে এমন শাসনের প্রয়োজন নেই। সাংবাদিক আবু তাহের দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির বর্ণনা করে বলেন, জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করে দেশে এমন গণতন্ত্র আমরা আশা করিনি। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে সরকার সমর্থকদের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রকাশ্য পুলিশের উপস্থিতিতে এমন হামলা সরকারের মদদ ছাড়া কেউ করতে পারবে না। তিনি হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবী করেন, অন্যথায় প্রবাসেও এর বিরুদ্ধে দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল সাংবাদিক আফতাব আহমদকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আফতাব নিস্পেশীত জাতির অবস্থা তুলে ধরেছিলেন, আর সে অপরাধে তিনি শাসক শ্রেণীর টার্গেটে ছিলেন। ৪০ বছর পর পেছনে লেগে থাকা দুস্কৃতিকারীদের হত্যার শিকার হলেন তিনি। ক্যারল হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও জাতীয় প্রেসক্লাবে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবী জানান।
অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, পিলখানায় হত্যাকান্ড, সাগর-রুনী খুনের ধারাবাহিকতায় দেশবিরোধী শক্তি সাংবাদিক আফতাব আহমদকে খুন করা হয়েছে। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের উপস্থিতিতে এমন ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা জানা নেই। তিনি সরকারের প্রতি হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবী জানিয়ে বলেন, অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের একদিন বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
মোশাহিদ আলী বলেন, নিন্দা জানিয়ে কোন লাভ নেই যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধীদের শায়েস্তা করার জন্য লাঠি হাতে রাস্তায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার কতটুকু বেপরোয়া সেটা তার প্রমাণ করেছে।
এনাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এখন ফ্যাসীবাদের শেষ পর্যায়ে এসে পৌছে গেছে। মানুষের প্রতি মানুষ কতটুকু অমানবিক হতে পারে সেটা তারা প্রমাণ করে ছেড়েছে। অস্ত্রধারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবে হামলা করলো, কিন্তু পুলিশ কোন টিয়ারসেল কিংবা রাবার বুলেট ছুড়ে বিশৃঙ্খলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করলো না। অথচ রাজপথে শান্তিপূর্ণ মিছিলকারীদের বুকে গুলি চালাতে তাদের এক মূহর্তও সময় লাগেনি। তিনি অবিলম্বে আফতাব আহমদ হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানান।
আব্দুল কাদির মোরাদ বলেন, সভ্যতা এবং বর্বরতা এক সাথে চলতে পারে না। আমরা সাংবাদিক আমাদের কোন দল নেই। সংবাদই আমাদের সব কিছু। যারা সাংবাদিকদের হত্যা করে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা প্রদান করে এবং প্রেসক্লাবে হামলা করে তাদের অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখী করতে হবে।