২০১৩ সালে সহিংসতায় নিহত ৫০৭ আহত ২২ হাজার
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০৭ জন। এই একই সময়ে আহত হয়েছেন ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ। মানবাধিকার সংগঠন ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ (আসক) মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি-২০১৩’ –শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আসকের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নূর খান বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকারের চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে জঙ্গিবাদের উত্থান এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে , ২০১৩ সালে মোট রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ৮৪৮টি। এতে ৫০৭ জন নিহত ও ২২ হাজার ৪০৭ জন আহত হন। নিহতদের তালিকায় ১৫ জন পুলিশ ও দুজন বিজিবি সদস্যও আছেন। এছাড়া সহিংসতার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন পক্ষের রোষানলে পড়ে তিন সাংবাদিকও নিহত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে গুম বা গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ৫৩ জন। এ ছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৭২ জন। গুম বা গুপ্তহত্যার বিষয়টি দেশে এ বছর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নতুন সংযোজন বলে উল্লেখ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
মানবাধিকার সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা করেছে, দেশে ২০১৩ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক। ধারাবাহিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
মানবাধিকার সংস্থাটি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে যে, ক্ষমতাসীনরা বিগত সরকারের সমালোচনা করে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন; অন্যদিকে বিরোধীদলও কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন না করে শুধু সরকারের সমালোচনা করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। মানবাধিকর সংগঠনের নেতারা এই প্রবণতা কাটিয়ে উঠে সরকার ও বিরোধীদল দু’পক্ষকেই মানবাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহবান জানান।
বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশিষ্ট নারী নেত্রী ফরিদা আখতার রেডিও তেহরানকে বলেন, সরকারি বাহিনীর নির্যাতনকারী ভূমিকা ও তার সঙ্গে সরকার দলীয় ক্যাডারদের যৌথ তত্পরতার কারণে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ।
এ প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হক মনে করেন, মানবাধিকার রক্ষার জন্য আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি স্থিতিশীল সমাজ দরকার। এখানে সরকার ও বিরোধীদল দু’পক্ষই আইন ভঙ্গ করছে। এ আবস্থায় আইনের প্রতিকার পাওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়েছে; তাই মানুষ বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছে ।
দেশে এ রকম অরাজক পরিস্থিতিতে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা নিয়ে যে কেউই উদ্বিগ্ন হবেন। এ রকম অবস্থায় মানুষ যদি আইনের প্রতিও আস্থা হারিয়ে ফেলে তবে সেটা হবে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয়।