বাংলাদেশে উত্তেজনা ও সংঘাত চলছেই
বাংলাদেশের সরকার বিরোধী জোট রাজধানী ঢাকায় ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-মিছিল অনুষ্ঠানের যে উদ্যোগ নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী তাতে বাধা দেয়ায় প্রতিবাদীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি এই দলের প্রধান ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মিত্র দলগুলোকে নিয়ে গত রোববার ঢাকায় এক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পুলিশ খালেদা জিয়াকে তার ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। ফলে রোববারের ওই প্রতিবাদ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি।
আসন্ন সংসদ নির্বাচন বাতিল ও নির্বাচনের ওপর নজরদারি করতে সক্ষম একটি অস্থায়ী সরকারের কাছে ক্ষমতা ছাড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে বাধ্য করাই ছিল ওই প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া এইসব লক্ষ্য নিয়েই গত ২৯ শে ডিসেম্বর নিজ সমর্থক ও সরকার-বিরোধীদেরকে রাজধানীতে মিছিল নিয়ে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিবাদীদের রাজধানীতে ঢুকতে দেয়নি এবং জন-পরিবহনগুলো বন্ধ করে দিয়ে ঢাকা অভিমুখে প্রতিবাদীদের আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
রোববার রাজধানী ঢাকায় প্রতিবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত এক জন নিহত হয়।
নানা রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, প্রতিবাদ ঠেকানোর জন্য আগামী সপ্তাহর আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে অন্তত ১৫৫০ জনকে গ্রেফতার করেছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। দেশটিতে গত অক্টোবর মাস থেকেই রাজনৈতিক সংকট জোরদার হয়েছে এবং বহু সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ।
বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে হাজার হাজার সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করেছে শেখ হাসিনার সরকার। এরই আলোকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরিস্থিতির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের হাব-ভাব থাকা সত্ত্বেও বিরোধী দলের প্রতিবাদের সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে এই সরকার চিন্তিত।
শেখ হাসিনার সরকার দুটি ফ্রন্টে বিরোধী জোটের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। প্রথমত তার সরকার দেশটির সবচেয়ে বড় ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছে এবং নির্বাচনেও দলটিকে অংশ নিতে দিচ্ছে না। এ ছাড়াও দলটির সাবেক শীর্ষস্থানীয় নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিয়ে বাস্তবে দেশটির মুসলিম জনগণের সঙ্গেই দ্বন্দ্বে নেমেছে শেখ হাসিনার সরকার।
দেশটির জনগণ খুব স্পষ্টভাবেই বুঝতে পারছেন যে, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আওয়ামী লীগ পশ্চিমা সরকারগুলোর, বিশেষ করে আমেরিকার সহায়তা নিয়ে ইসলামের সঙ্গে যুদ্ধ করার নীতিই বাস্তবায়ন করছে। আর এ কারণেই হাসিনা সরকারের ধর্ম-বিদ্বেষী নীতি গত কয়েক মাস ধরেই ব্যাপক বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী দলের ও অন্যান্য বিরোধী দলের সমর্থকদের সঙ্গেও লড়াই করছেন। হাসিনা ও খালেদা সব সময়ই ক্ষমতার লড়াইয়ে ধর্মঘট বা হরতাল এবং দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের মত প্রচলিত হাতিয়ারগুলোকে পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছেন। তারা উভয়ই এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। কারণ, হাসিনাকে একদিকে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের ও অন্যদিকে খালেদা জিয়ার জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থকদের বিরোধিতারও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। কারণ, এই দুটি দলই তাদের ১৮ দলীয় জোটের মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দল।
এ অবস্থায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন: যদি শেখ হাসিনা তার একক কর্তৃত্বকামীতা খাটিয়ে ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে আগামী সপ্তাহর দেশব্যাপী সংসদ নির্বাচনে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন তাহলে তাকে সংকট এবং বড় ধরনের বৈধতার ও গ্রহণযোগ্যতার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। ফলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়বে। আর এ কারণেই সরকার বিরোধী দলগুলো ক্ষমতা ছেড়ে দিতে এবং নিরপেক্ষ ও অস্থায়ী সরকার গঠন করতে শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যাতে স্বচ্ছতাসহ ন্যায়সঙ্গতভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ গড়ে ওঠে।