স্পেনে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ৮০, আহত ১২৬

Spaneস্পেন থেকে মোঃ সুলতান আহমেদ : স্পেনে এক ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ৮০ জন নিহত ও ১২৬ জন আহত হয়েছে। স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ফেররলের উদ্দেশে রাজধানী মাদ্রিদ থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী ট্রেনটি বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪১ মিনিটে সান্টিয়াগো দে কম্পোসটেলা শহরের ৪ কিলোমিটার দূরে দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে গেলে বগিগুলো একটার সঙ্গে আরেকটার সংঘর্ষ হয়। এতে বগিগুলো দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং আগুন ধরে গেলে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে রেললাইনের পাশে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। দুর্ঘটনায় পতিত ট্রেনটিতে ২১৪ জন যাত্রী ও ৪ জন স্টাফ ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, প্রাথমিকভাবে ৬০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি ১১১ জন আহত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
ফ্রান্সিস্কো ওটারো নামের স্থানীয় একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমি বিকট একটা শব্দ শুনতে পাই। তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল হয়তো ভূমিকম্প হচ্ছে। এগিয়ে গিয়ে একজন মহিলার লাশ দেখি। এর আগে আমি কখনো দুর্ঘটনায় নিহত কোন মানুষের লাশ দেখিনি। আমার প্রতিবেশীরা ট্রেনের নিচে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করলো। শেষ পর্যন্ত তারা তাদের উদ্ধারে সক্ষম হলো। এটা সত্যি ছিল এক বিরল ঘটনা।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী রেডিও ক্যাডিনা সেরকে জানান, রেললাইনের একটা বাঁক থাকার কারণে অতীতে এখানে আরো কয়েকবার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। বাঁকটি অতিক্রম করার সময় বুধবারের দুর্ঘটনাটি আগের মতই ঘটে এবং বগিগুলো সবই লাইনচ্যুত হয়।
দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে রেলপথের বাঁকে মাত্রাতরিক্ত গতি। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি স্যামুয়েল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দুর্ঘটনা ঘটার সময় ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার।
যেখানে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার থাকার কথা। এই মাত্রাতিরিক্ত গতি নিয়ে বাঁক অতিক্রম করতে যাওয়াকেই প্রাথমিক ও প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সরকারি টেলিভিশন টিভিই বলেছে, দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার সময় ট্রেনের গতি হয়তো বেশি ছিল। তবে রাষ্ট্রীয় রেল কোম্পানি রেনফের একজন মুখপাত্র বলেন, দুর্ঘটনার কারণ বলার মত সময় এখনো আসেনি। তদন্ত চলছে এবং আমাদের আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ট্রেনের ব্ল্যাক বক্স পাওয়া গেলে সেটা পর্যালোচনা করে ট্রেনের ঐ সময়ের গতি সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে। জরুরী সেবা বিভাগের কর্মীরা আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে ঘাসের ওপর শুইয়ে রাখে। এ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজাতে বাজাতে ছুটে আসে এবং আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। সাদা শার্ট পরিহিত মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির মুখম-ল ছিল রক্তে রঞ্জিত। একজন পুলিশ সেখানে এসে তাকে কোথায় যেতে হবে তা বলে দিলো।
ফেইজু রেডিও ক্যাডিনা সেরকে বলেন, নিহতদের রেললাইনের ওপর রাখা হয়েছে। সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
লান্টিয়ানো ডি কম্পোসটেলা শহরের প্রধান স্টেশন থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনের যাত্রীরা সান্টিয়াগোর সুপরিচিত এল কামিনা ডি সান্টিয়াগোতে তীর্থযাত্রায় যাচ্ছিল। মধ্যযুগ থেকে খৃস্টানদের কাছে এ স্থানটি পুন্যভূমি বলে পরিচিত হয়ে ওঠে।
স্পেনের পধানমন্ত্রী এক টুইটার বার্তায় ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য শোক ও সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তার গতকাল বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা।
আহতদের প্রয়োজনীয় রক্ত দিতে এক হাজারের বেশি লোক প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে। ১৯৭২ সালের ২১ জুলাই সংঘটিত এক ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ৭৭ জন নিহত ও ১০৩ জন আহত হয়েছিল। এই হিসাবে বিগত ৪০ বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। দুই সপ্তাহের কম আগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কাছে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হলে ৬ জন নিহত ও ৩০ জনের বেশি আহত হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button