অভ্যন্তরীণ বিমান রুটে টিকেটের জন্য হাহাকার

ধারাবাহিক অবরোধ আর সহিংসতার কারণে স্থলপথ স্থবির হয়ে আছে। নৌপথেও পড়েছে তার প্রভাব। সামর্থ্যবানদের জরুরি প্রয়োজনে তাই একমাত্র ভরসা আকাশপথ। কিন্তু সেখানেও শান্তি নেই । দেশীয় রুটের বিমানের টিকেট চলে যাচ্ছে কালোবাজারে। যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
যাত্রীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ‘টিকেট শেষ’ ঘোষণা আসলেই শুরু হয় কালোবাজারিদের উৎপাত। তখন নিরুপায় হয়ে চড়া দামে টিকিট ক্রয় করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকছে না তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন যাত্রী অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন বিমানের কর্মীদের দিকে, ‘এসব কাজের সঙ্গে বিমানের কর্মীরাই যুক্ত। তাদের কারণে আমাদের ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে।’
‘কর্তৃপক্ষ কালোবাজারিদের সঙ্গে জড়িত’ এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘যদি বাইরের কেউ এ কাজে যুক্ত থাকে তবে আমাদের কিছু করার নেই। কেননা আন্তর্জাতিক রুটের মতো দেশীয় রুটে পাসপোর্ট দেখানোর কোনো পদ্ধতি চালু নেই।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের মুরাদ হোসেন নামের এক নিয়মিত যাত্রীর অভিযোগ‘গত দুই মাস ধরেই আমাদের অনেক বেশি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে।’
মুরাদ হোসেন আরো বলেন, ‘সাধারণত ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ইকোনমি ক্লাসের টিকিটের মূল্য চার হাজার টাকা। কিন্তু এখন সেই দামের টিকিট পেতে গুনতে হচ্ছে ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা।’
‘বর্ধিত টিকেট এখন পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু কয়েকজন কর্মী এটা কাছে রেখে চড়া দামে বিক্রি করছেন।’ অভিযোগ করেন বিমানযাত্রী ইয়াসির আদনান।
জানতে চাইলে ইউনাইটেড এয়ার লাইন্সের সহকারী সাধারণ পরিচালক কামরুল ইসলাম ‘অতিরিক্ত দামে টিকেট বিক্রি’র বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, গত দুই মাসে  অতিরিক্ত দামে কোনো টিকেট বিক্রি করা হয়নি ।’
তবে তিনি বলেন, ‘যদি ফ্লাইট ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে জরুরি ভিত্তিতে কেউ টিকেট চান তবে তাকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সেটা সংগ্রহ করতে হয়।’
টিকেটের আদান-প্রদান সম্পর্কে কামরুল বলেন, ‘প্রচলিত পদ্ধতিতে দেশীয় রুটে একজনের নামে কেনা টিকেট অন্য একজন ব্যবহার করতে পারেন।’
বাংলাদেশ বিমান সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক অশান্তির কারণে বিমানের পরিবহন খরচ ৬০-১০০ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশে আঞ্চলিক রুটে চারটি বিমান পরিবহন সংস্থা যাত্রীদের পরিবহণ সেবা দিয়ে থাকে-‘বাংলাদেশ বিমান’, ‘ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ’, ‘রিজেন্ট এয়ারওয়েজ’ এবং ‘নভো এয়ার’। এগুলোর মধ্যে ‘বাংলাদেশ বিমান’ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং অন্য তিনটি ব্যক্তি মালিকানাধীন।
‘সামনের তিন দিনের (শনিবার পর্যন্ত) ঢাকা-যশোর রুটের কোনো টিকেট আমাদের কাছে নেই।’ গত বৃহস্পতিবার এমনটাই বলেন ইউনাইটেড এয়ার লাইন্সের সহকারী পরিচালক কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন যদি আমাদের কাছে কেউ রবিবারের টিকেট নিতে আসে, তবে তাকে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হবে।’
এদিকে ‘বাংলাদেশ বিমান’ এবং ‘নভো এয়ার’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থলপথ স্থবির হলেও তাদের যাত্রী সংখ্যা বাড়েনি।
তুলনামূলক ভালো সেবা দেয়ার কারণে ‘নভো এয়ার’ যাত্রীদের কাছ থেকে এমনিতেই বেশি ভাড়া নিয়ে থাকে। সংস্থাটির দাবি, অবরোধের মধ্যে পরিবহণ সুবিধা অব্যাহত রাখাতে তাদের লোকসান হচ্ছে।
‘বুধবারে ঢাকা-যশোর ফ্লাইটে মাত্র আট জন যাত্রী ছিল। এবং ফিরতি ফ্লাইটে ছিল ১৫ জন।’ বলেন ‘নভো এয়ারে’র এক কর্মকর্তা।
এদিকে ‘বাংলাদেশ বিমান জানিয়েছে’ তারা বর্তমানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় দেশীয় রুটের ফ্লাইটগুলো সামলাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button