শৈত্য প্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের তাপমাত্রা নেমে গেছে রেকর্ড মাত্রায়
মেরু অঞ্চল থেকে ধেয়ে আসা প্রবল শৈত্য প্রবাহের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক এলাকার তাপমাত্রা রেকর্ড মাত্রায় নেমে গেছে। ফলে নববর্ষ থেকে প্রচন্ড ঠান্ডায় কাবু লাখ লাখ মার্কিন নাগরিকের জনজীবন আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শৈত্য প্রবাহের এ ধারা অব্যাহত থাকলে গত ২০ বছরের মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ার রেকর্ড হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় তুষারঝড়ের কারণে ইতোমধ্যে দুই ফুট পর্যন্ত বরফ জমে গেছে।
শৈত্যপ্রবাহের কারণে গত কয়েকদিনে ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া বিমানের তিন হাজার ৭শ’র বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। শিকাগোতে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া লোকজনকে ঘরের ভেতরে অবস্থান ও খাবার মজুত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে তাপমাত্রা মাইনাস ৬০ ডিগ্রী ফারেনহাইটে নামার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ অঞ্চলের মানুষকে নিজেদের নিরাপত্তা ও রাস্তার বরফ অপসারণের সুবিধার্থে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশংকা, এ ধরণের শীতে মাত্র পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে শরীরের ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
কলোরাডোর বিভিন্ন অংশে প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাসের সতর্কবাণী জারি করা হয়েছে। অ্যাসপেনের কাছে একটি ছোট বিমানে অবতরণের সময় আগুন ধরে যায়। এতে এক আরোহী নিহত হয় বলে কর্মকর্তারা জানান। দুর্ঘটনায় আরো দুই জন আহত হয়।
প্রচন্ড শীতের মধ্যে বৃষ্টি ও তুষারপাতের কারণে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর দুই ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়। এর আগে টরোন্টো থেকে আসা ডেলটা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে বরফের স্তুপে আটকে যায়।
জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা চলমান আবহাওয়াকে ‘জীবনের জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করেছে।
মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের মিনেসোটা রাজ্যের গভর্নর মার্ক ডাইটন ইতোমধ্যে স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। নর্থ ডাকোটা সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মুখে পড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। শিকাগো, ডেট্রয়েট ও সেন্ট লুইসে গতরাতে ব্যাপক তুষারপাত হয়েছে।
কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের ১০ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। ভারী তুষারপাতের কারণে সেখানকার একটি শক্তিশালী ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে পড়েছে।
উত্তর মেরু অঞ্চল থেকে এর আগে খুব জোরালো শৈত্যপ্রবাহ হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। এ রকম ঠান্ডা সচরাচর পড়ে না।
কানাডার টরন্টোর তাপমাত্রা গত বৃহস্পতিবার মাইনাস ২৯ এবং কুইবেক সিটিতে মাইনাস ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট ও ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে ভারী তুষারপাতের কারণে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বোস্টন শহরে প্রায় ১৮ ইঞ্চি পুরু বরফ পড়েছে বলে জানানো হয়।
নিউইয়র্কের উত্তরাঞ্চলে প্রচন্ড শীতে আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত ৭১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।