গুয়ানতানামো বন্দীর কবিতা ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য
কিউবার গুয়ানতানামো কারাগারের এক বন্দীর লেখা কবিতাকে ভারতের কেরালা রাজ্যের কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্য করা হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, মানবিক ও বিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য কবিতাটিকে পাঠ্য করায় বিপুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় ‘একের দৃষ্টিতে মুক্তিযোদ্ধা আরেকজনের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসী’—এমন তর্ক চাড়া দিয়ে উঠেছে। পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, গুয়ানতানামো উপসাগরের সাবেক বন্দী ইবরাহিম আল-রুবাইশের লেখা ‘ওড টু দ্য সি’ (সাগরের জন্য কাব্য) শিরোনামের কবিতাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও সমসাময়িক ইস্যু বিষয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পাবলো নেরুদা, সিলভিয়া প্লাথ ও মায়া অ্যাঞ্জেলুর মতো খ্যাতনামা কবিদের সৃষ্টিকর্মের পাশে ইবরাহিমের যে কবিতাটি সংকলিত হয়েছে, সেটি ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে উদার। তাঁর কবিতায় নির্বাসন, নিঃসঙ্গতা, প্রেম ও ব্যাকুলতার বৈশ্বিক অনুভূতি ভাষা পেয়েছে। কবিতাটি ২০০৬ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত ‘পোয়েমস ফ্রম গুয়ানতানামো: দ্য ডিটেইনিস স্পিক’ (গুয়ানতানামোর কবিতা: বন্দীর কণ্ঠস্বর) নামের কাব্য সংকলনে প্রথম প্রকাশিত হয়। ইবরাহিমের কবিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইংরেজি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কবিতাটির বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো আপত্তি তুলতে না পেরে এসব শিক্ষক বলছেন, ইবরাহিম আল-রুবাইশের পরিচয় এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। আর তিনি যে এখনো আল-কায়েদার সদস্য নন, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একজন মানুষ বন্দী থাকার সময় নিজেকে প্রকাশে কত দূর এগোতে পারে, এ কবিতাটি তারই এক উদাহরণ। কিন্তু কবির পরিচয়টি আপত্তিজনক। এ ধরনের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে, এমন কবিতা তো আরও অনেক ছিল।’
সৌদি আরবের নাগরিক ইবরাহিম আল-রুবাইশকে ২০০১ সালে পাকিস্তান থেকে আটক করা হয়। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অধিকৃত গুয়ানতানামো উপসাগর কারাগারে পাঁচ বছর ধরে বন্দী ছিলেন। এরপর তাঁকে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
কবিতাটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে চাল্লাকুডি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সি আর মুরুগান বাবু বলেন, বর্তমান সময়ের একটি গুরুতর বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ করে দেবে কবিতাটি।
সি আর মুরুগান বাবু বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নকে যুগোপযোগী করতে গত বছর থেকে পাঠ্যসূচিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। মানবাধিকার ইস্যু, লিঙ্গ প্রশ্ন ও বিশ্বায়নের প্রভাবকে কেন্দ্রে রেখে নতুন করে পাঠ্যসূচি সাজানো হয়।’
মুরুগান বাবু আরও বলেন, গুয়ানতানামোর কবিতা বিশ্ব কাঁপিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে, তার সবকিছুতে বিশ্বাস করার কিছু নেই। কারণ এটা প্রমাণিত হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কথা প্রায়ই ভুল হয়।