মুহিত স্যার, আপনিও কি “ক্যাসিনো” প্লেয়ার…?
এনাম চৌধুরী
কোন অসভ্য জাতিকে পিটুনী দিয়ে যেমন সভ্য বানানো যায় না, তেমনি আইন বানিয়ে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে বল প্রয়োগ করে কিংবা রাষ্ট্রীয় ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষকে কোন কিছু মানতে বাধ্য করানোও অসম্ভব। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয়ার পূর্বে এদেশটির মানুষ ৬৯-এ গণঅভ্যূত্থান ঘটিয়ে নিজেদের স্বকীয়তার প্রচন্ড শক্তিশালীতার পরিচয় দিয়েছে। এর আগে ৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবন দিয়ে সে দাবীও আদায় করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য যে জাতি জীবন দিয়েছে সে জাতি হলো বাংলাদেশী। ৭১ সালে যুদ্ধ করে জীবন দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাকৃতি আদায় করেছে এই বাংলাদেশের মানুষ। তাই চোখ রাঙিয়ে কিংবা চোখ তুলে নিয়ে, ধমক কিংবা লাটির আঘাত করে, জেলে পুড়ে কিংবা রাইফেলের গুলি করে ধ্বমণীতে যাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের রক্ত প্রবাহমান, সেই জাতিকে ধমিয়ে রাখা কোন ভাবেই সম্ভব না।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রচন্ড প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়ে আজ একটি স্বতন্ত্র অবস্থানে আসতে পেরেছে। কিন্তু রাজনীতির নামে কিছু অসতর্ক অসৎ মানুষের লাগামহীন আচরণ, কিছু মানববেশী পরধনলোভী ভদ্রবেশী লোটেরা আর ক্ষমতালোভী মানুষ্য আকৃতির প্রাণী বাংলাদেশটাকে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পদে পদে বাঁধার সৃষ্টি করছে। যে দেশটি আজ পৃথিবীর অনেক বড় বড় দেশগুলোর সাথে বিশ্ব অর্থনীতির বাজারে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে চলার কথা ছিলো। সেই দেশ আজো লড়াই চলে সংবিধানে ধারা-উপধারা নিয়ে। যে দেশের আইন প্রনেতারা পৃথিবীর আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলার আইনের পরিবর্তে লুটপাট নিয়ে থাকে মহাব্যস্ত। যাদের মেধা মনন সবই অর্থ এবং বিত্ত কামানোর জন্য উৎসর্গকৃত। আর ইতিহাসের সেই ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করে গিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের মহান স্থপতি এবং ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চে মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়ে জাতিকে চেতনা দীপ্ত করে যে নেতা “বঙ্গবন্ধু” খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন, সে নেতা একদিন আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমার চারদিকে চুর, সবাই পেলো সোনার খনি, আমি পেলাম চুরের খনি।’ স্বাধীনতার মহান স্থপতি বিনা দুঃখে এমন মন্তব্য করেন নি। স্বাধীন দেশে ৭ কোটি কম্বলের মধ্যে তাঁর ভাগের কম্বলটি পর্যন্ত চুরি হয়ে যায়।
কম্বল চুরি শেষ করে চুরের দল এখন পুকুর, নদী, খাল-নালা সবই চুরি করার পর সাগর চুরিই বলা যায় এবার শুরু করেছে। স্বাধীন হলো ঠিকই দেশটি। কিন্তু দুর্নীতি আর চুরির দূর্নাম যেন আর ঘোচাতে পারলো না। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ‘হলফ নামা’য় সম্পদের হিসেব দেখলে যেন ভীমরী খাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায়। এক একজন প্রার্থী ২০০৮ সালে তাদের প্রার্থীতার হলফ নামায় সে সম্পদের হিসেব দিয়েছিলেন, মাত্র পাঁচ বছর পেরিয়ে না যেতেই সে সম্পদ এখন শতগুন নয় রীতিমত হাজার হাজার গুন পেরিয়ে গেছে। তাদের সম্পদ এখন হাজার নয় লাখ পেরিয়ে কোটি থেকে শত কোটি পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তারা পেশায় রাজনীতিবীদ হয়ে কেউ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কেউ রাজনীতির পেশার পাশাপাশি মৎস্য ব্যবসা পেশা হিসেবে পরিচয় দিয়ে শত কোটি টাকার সম্পদের হিসেব দিয়েছেন। এই সম্পদগুলো কিভাবে অর্জিত হলো এর কোন সঠিক ব্যাখা নেই। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন মন্ত্রী-এমপি হলে নাকি সম্পদ বাড়তেই পারে এবং এটা স্বাভাবিক !!
সিলেট নগরীতে বড় হওয়া এবং সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত থাকার সুবাদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাহেবকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে কিছুদিন। তিনি সব সময় যা বলেন, সোজা-সাফটা বলে দেন। আগ-পিছু কিছু না ভেবে অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবের ‘টোটাল রাবিশ’ ‘স্টুপিড’ ‘বোগাস’ ‘ইডিয়ট’ এই শব্দগুলো যেমন হাসির খোরাক জুগিয়েছে, তেমনি মহা বিরক্তিরও সৃষ্টি করেছে। কখন কোন জায়গায় শব্দগুলো ঠিকমতো ব্যবহার করতে হবে সেটা সম্ভবত: আমাদের এই সাবেক আমলা এবং আজকের বয়োবৃদ্ধ রাজনীতিবীদের কোন ধারণা নেই। ডেমোক্রেসীর সংজ্ঞা যে ব্যক্তিটির কাছে তার দলের অতি সাধারণ একজন মাঠ কর্মীর মতো ‘বঙ্গবন্ধু’ আদর্শ বাস্তবায়ন, সেই মন্ত্রী মুহিত সাহেেবর অন্য কিছুতে মহাজ্ঞান থাকলেও গুনী কিংবা স্বল্পজ্ঞানী রাজনীতিবীদের গুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছরে তার মাঝে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিশ্বের দরবারে শক্তিশালী কিংবা মধ্যম পর্যায়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে তার কোন অবদান আছে বা রয়েছে বলে কেউ বলতে পারবে না। মুহিত যে আসনের সংসদ সদস্য ঐ আসন থেকে সংসদ সদস্য ছিলেন (মরহুম) অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে ‘ইমাজিং টাইগার’ এর স্বীকৃতি লাভ করে।
আমি যেটুকু জানি অর্থমন্ত্রী মুহিত এবং মরহুম মন্ত্রী এম সাইফুল রহমান সাহেব একে অন্যের ভালবন্ধু এবং সহপাঠী ছিলেন। দু জনের মধ্যে রাজনৈতিক দর্শন যেমন ভিন্ন তেমনি রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, প্রজ্ঞা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ্যেও আকাশ পাতল ব্যবধান। মুহিত সাহেবের রাজনৈতিক জীবনের বয়স এখনো একযুগ হয়নি, কিন্তু অর্থমন্ত্রী (মরহুম) সাইফুর রহমান সেদিক থেকে ত্রিশ বছরের ও বেশি সময় রাজনীতি করে গেছেন। সাধারণ মানুষের চিন্তা, চেতনা, বিশ্বাস এবং অনুভূতি সাইফুর রহমান বুঝতেন খুব স্পষ্ট, কারন তিনি তৃণমূল মানুষের অনুভূতিকে বুঝতে সব ধরনের কৌশল এবং সোর্স ব্যবহার করতেন, যা একজন পেশাদার রাজনৈতিক নেতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর অপর দিকে আবুল মাল আব্দুল মুহিত এর ধারে কাছেও নেই। প্রথমত: তিনি খুব কম সময় হয়েছে রাজনীতিবীদ হয়েছেন। দ্বিতীয়: তিনি যা মুখে আসে বলে ফেলেন। তৃতীয়ত: তার কথা-বার্তার মধ্যে কোন ধরনের চিন্তা-চেতনার বহি:প্রকাশ ঘটতে দেখা যায়নি। একজন বুদ্ধিহীন সাধারণ মানুষ যেভাবে কিছু বলা শুরু করলে বলে ফেলেন অবলীলায়, তিনিও তেমনি পর্যায়ের একজন মানুষ। তাই হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট, দুর্নীতি তার কাছে অতি তুচ্ছ এবং সাধারণ বিষয়। প্রসঙ্গে বলেছিলাম অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবকে আমার নগরীর পার্লামেন্টারী আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে আমি মোটামুটি ভালো জানি এবং তার সম্পর্কে আমার ধারণা খারাপ নয়। তাকে নিয়ে আমার মজার একটা স্মৃতি রয়েছে। তখন দেশে আলোচিত ‘ওয়ান ইলেভেন।’ ফখর উদ্দিন-মঈন উদ্দিনের শাসন চলছে।
বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা সহ অনেক রাজনৈতিক নেতা, সাবেক আমলা, ব্যবসায়ীরা জেলে। আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাহেব তখন সিলেটের বেশীরভাগ সময় অবস্থান করে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানাধিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। জরুরী অবস্থা থাকায় সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা তাই কোন রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। মুহিত সাহেবও সেই নিষেধাজ্ঞার শিকার বলতে গেলে নির্বাচনী মিটিং-গণসংযোগ করার সুযোগ থেতে বঞ্চিত। তবে মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিয়ে শাদীর প্রোগ্রামে বর-কনের সাথে উঠানো ছবি স্থানীয় সংবাদ পত্রগুলোতে কখনো ক্যাপশন নিউজ হয়ে, আবার কখনো বিজ্ঞান হয়ে আমাদের কাছে আসতো। এভাবেই মৃদু তৎপর সদ্য প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসা সাবেক আমলা মুহিতের রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছিলো। মাঝে মাঝে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তার সাথে মুখোমুখী হলেও সালাম ব্যতিত আমি কখনো কোন কথা বলিনা। আর তখন আমার কর্মস্থল দৈনিক জালালাবাদের রাজনৈতিক ‘পলিটিক্যাল বীট’ এর প্রধান সমন্বয়কারী ফয়সল আলম ভাই। তাই নেতাদের আমি ‘ক্রাইম’ বীটের দায়িত্বে থাকলেও ফয়সল ভাইর সহকারী হিসেবে মাঝে মাঝে দায়িত্ব পালন করতাম। মুহিত সাহেব একটু বেশী গুরুগম্ভীর প্রকৃতির লোক থাকায় আমি তাঁর সাথে কথা বলার চেষ্ঠা করতাম না। কিন্তু অন্যদিকে সাবিক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী (মরহুম) সাইফুর রহমান স্যারের সাথে কথা বলতে গেলে দারুন মজা হতো।
একদিন রাতে (৭টার দিকে) হঠাৎ করে বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ভাই সহ আমরা ডেক্সে কাজ করছি। হঠাৎ সম্পাদক মুকতাবিস-উন-নুর ভাই বার্তা কক্ষে এসে জানালেন ‘মুহিত সাহেব ৮টার দিকে আমাদের অফিসে আসবেন। ভবিষ্যৎ মন্ত্রী, সম্মানীত মেহমান আসবে বিধায় কাজের ফাঁকে সকলেই অপেক্ষা করতে থাকলাম প্রধান আলোকচিত্রী মরহুম সি এম মারুফ ভাই এবং সহকারী আলোকচিত্রী বেলায়েত হোসেন ভাই তাদের ক্যামেরা প্রস্তুত রাখলেন। বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন ভাই অফিস সহকারী (নাই শিফট) সোহেলকে নাস্তার ব্যবস্থা করতে বললেন। যথা সময়ে মুহিত সাহেব অফিসে এলেন। সঙ্গে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুজ জহির সুফিয়ান (বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক), উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, যুবলীগ নেতা আব্দুর রহমান জামিল এবং তার সার্বক্ষণিক সহকারী সিলেটে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নানা অপরাধের নায়ক রাশেদ।
সম্পাদক নুর ভাই এবং বার্তা সম্পাদক হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী অফিসে মুহিত সাহেবকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বার্তা কক্ষে নিয়ে গেলেন। বার্তা কক্ষে হুমায়ুন ভাইর ঠিক বাম পাশের টেবিল টিতে ছিলো আমার বসার স্থান। নূর ভাই প্রথমেই আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে যখন বললেন ‘এ হচ্ছে এনাম চৌধুরী আমাদের ক্রাইম রিপোর্টার (!) নূর ভাই এ কথা বলার সাথে সাথে মুহিত সাহেব যেন গভীর পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। খুব ছোট খাটো মানুষ দেখে তিনি সম্ভবত চমকে উঠলেন। আমাকে প্রশ্ন করলেন এনাম আপনিকে কি প্রড়াশোনা করেছেন। বুঝলাম শিক্ষিত মানুষ সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার কদর বুঝেন। আমি জবাব দিলাম অনার্স শেষ করেছি। মনে হলো মুহিত সাহেব আরেকবার অবাক হলেন। এভাবে তিনি সকলের সাথে পরিচিত হলেন। যাওয়ার সময় আমার সাথে আবারো করমর্দন করে বললেন ‘এগিয়ে যাও’।
মুহিত সাহেব চলে যাওয়ার পর আমার সহকর্মী আহবাব মোস্তফা খান, আতিকুর রহমান (বর্তমানে ব্রিটেন প্রবাসী) দুজন মুহিত সাহেবের কথোপকথন ও আমাকে নিয়ে বেশ মজা করলো।
এর একদিন পর অফিসিয়াল কাজে আমার ঢাকা যাওয়া। ভোর ৭টায় শাহজালাল উপশহর এর সংলগ্ন সোবহানীঘাট এর আলিফ টাওয়ার (আল্লামা ফুলতলী সাহেবের ছেলেদের মালিকানা) বিল্ডিং এর গ্রীন লাইন পরিবহন অফিসে বসে আছি। সাড়ে ৭টায় গাড়ী। ৭টা পনের মিনিটে সুপারভাইজার যাত্রীদের গাড়ীতে উঠার জন্য অনুরোধ জানালো। সকল যাত্রীদের সাথে আমিও গাড়ীতে উঠার জন্য লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হঠাৎ দেখলাম একটি প্রাইভেট কারে করে মুহিত সাহেব এসে নামলেন। বুঝলাম আমি ও মুহিত সাহেব একই গাড়ীর যাত্রী। ঠিক আমার পাশে এসে ঘুম জড়ানো চোখে নামলেন তিনি। আমি তাকে ‘স্যার সম্বোধন’ করে আমার আগে গাড়ীতে উঠার জন্য বললে তিনি বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করলেন। দুই তিন বার বলার পরও তিনি উঠলেন না। শেষে আমিই উঠে গেলাম গাড়ীতে। গাড়ীতে একোনোমি ক্লাসের প্রথম সাড়ির তিন নাম্বার সিটটি আমার। নির্ধারিত আসনে বসার পর মুহিত সাহেব এসে গাড়ীতে উঠে যখন আমার সীটের পাশে এসে দাঁড়ালে তখন বুঝলাম আমরা শুধু একই গাড়ীর নয়, একই সীটেরও যাত্রী।
মুহিত সাহেবের সীটটি ছিলো জানালার পাশে তাই আমি সীট ছেড়ে বের হয়ে তাকে নির্ধারিত স্থানে বসার ব্যবতা করে দিলাম। স্থির হওয়ার পর জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছেন স্যার ? তিনি জবাবে শুধু বললেন- ভলো ! বললাম স্যার চিনতে পেরেছেন- আমি জালালাবাদ পত্রিকার সাংবাদিক এনাম চৌধুরী ….. ? এবার তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ চিনছি’। তবে মনে হলো মুহিত সাহেব যেন কেমন জানি অনিচ্ছাকৃত জবাব দিয়েছেন। একবার ভাবলাম হতে পারে তিনি ঘুম থেকে উঠে আসায় হয়তো এমনটি হচ্ছে। দেখলাম মুহিত সাহেব একটি বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়লেন। আমার তখন চোখে প্রচন্ড ঘুম ভাব। কিন্তু তিন চার মিনিটের মধ্যে মুহিত সাহেবের নাক ডাকার শব্দে আমার ঘুম পালিয়ে গেলো। পেছনে তখন কয়েকটি সীট খালি। আমি ধীরে ধীরে উঠে পেছনের একটি সীটে গিয়ে বসে পড়লাম। এক সময় চোখে নেমে এলো রাজ্যের ঘুম। এক সময় সুপারভাইজারের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। দেখলাম আশুগঞ্জে ‘হোটেল উজান ভাটিতে’ বাসের যাত্রা বিরতি। আড়মোড়া ভেঙ্গে যখন সীট থেকে উঠলাম তখন দেখলাম আমি সহ চার-পাঁচন যাত্রী ছাড়া সবাই নেমে গেছে। আমরাও নেমে গেলাম। হোটেলে গিয়ে হাত-মুখ ধুঁয়ে বসলাম মুহিত সাহেব যে টেবিলে বসেছেন সেখানে। দেখলাম তিনি অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছেন। আমিও পরোটা, ভাজি এবং চায়ের অর্ডার দিলাম। প্রথমে মুহিত সাহেবের নাস্তা আসলো। তিনি খাওয়া শুরু করলেন। একই টেবিলে বসা কিন্তু তিনি একটি বারের জন্য বলেননি নাস্তায় শরীক হতে। এসব ভাবছি এক সময় আমার অর্ডারও চলে এলো। যথারীতি নাস্তা পূর্ব শেষে চায়ের জন্য অপেক্ষা করছি এমন সময় মুহিত সাহেবের নাস্তার ‘বিল’ নিয়ে এলে ওয়েটার, তখন আমি বিলের রিসিপটা আমার হাতে নিতে চাইলে তিনি দ্রুততার হাতে নিয়ে নিলেন। আমি বললাম, বিলটা আমি দেবো স্যার। কিন্তু তিনি তখন জবাব দিলেন- নানা আমার টা আমি দিয়ে দিচ্ছি বলেই চলে গেলেন। আমি শুধু তার গমন পথের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
ওয়ান ইলেভেন শেষ হলো। দেশের অনেক নাটকীয় উত্থান পতনের শেষে ফখর-মঈন উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিদায় হলো। ক্ষমতায় এলো আওয়ামীলীগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিন বদলের শ্লোগান, ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সহ ঘরে ঘরে চাকুরী, দশ টাকায় চাল এবং বিনামূল্যে সার বিতরনের আশ্বাস সহ নানা ধরনের বাহারী শ্লোগানে ক্ষমতায় এলো মুহিত সাহেবের দল আওয়ামীলীগ। সীমাহীন বিতর্কের মধ্যেও ক্ষমতার পাঁচ বছর তারা পূর্ণ করলেন। পদ্মাসেতু, কুইকরেন্টাল, হলমার্কস, ডেসটিনি, পিলখানায় সেল অফিসার হত্যা সহ নানা দুর্নীতি ও বিতর্ক নিয়ে আরেক নির্বাচনের ঘোষনা দিয়ে সেটা তারা রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে সহিংসতার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছেন। বিস্ময়ের বিষয় এক দিকে তারা বিরোধী দলকে নির্বাচনের আসার আহ্বান জানিয়েছেন আর অপর দিকে বিরোধীদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-কর্মী থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সরকারের যৌথ বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় ক্যাডাররা গ্রেফতার, নির্যাতন, বাড়ী-ঘরে হামলা চালাচ্ছে। অনেককে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, অনেকের বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। নারী শিশু-মেয়েদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার কিংবা আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন এক ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে যে যারা নিজ চোখে দেখছেন তারা বলতে পারবেন কেমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে ? সরকারের মন্ত্রীরা ঘোষনা দিয়ে দলীয় কর্মীদের অস্ত্র হাতে বিরোধী দলকে মোকবেলার নির্দেশ দিচ্ছেন ! বিরোধী দল জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় মিছিল বের করলে সরকারী বাহিনী বিনা উস্কানীতে গুলি করতে দেখা যায়, কিন্তু সরকারী দলের সমর্থকরা প্রকাশ্য অস্ত্র নিয়ে গুলি করলেও সরকারী বাহিনী সেটাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
এতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও সরকারী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, মন্ত্রীরা (?) বলছেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিভালো হচ্ছে, সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। লেখার প্রসঙ্গটা ছিলো অর্থমন্ত্রী (?) মুহিত সাবেকে নিয়ে। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুতি সাহেব শেখ হাসিনার অন্যান্য মন্ত্রীদের মতো বিতর্কিত নানা বক্তব্যে কারনে পুরো সময়টাই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। মাঝে মাঝে মিডিয়ার সামনে সিলেটী মিশ্রিত শুদ্ধ বাংলায় যখন সবাই ‘বোগাস-স্টুপিড’ বলে ঘটে যাওয়া চরম সত্যটাকে ডাহা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়ে তার অগ্নিশর্মা চেহারা উপস্থাপন করতেন তখন অনেকেই কিছু না বলতে পেরে হেসেছেন মুখটিপে।
অর্থমন্ত্রী মুহিত শেয়ার বাজারের হাজার হাজর কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনাকে বোগাস বলে এর সাথে জড়িতরা অনেক শক্তিশালী এবং ক্ষমতাধর হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। রাষ্ট্রের চেয়ে লুটেরা গোষ্ঠি কিভাবে শক্তিশালী হয় এবং কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না জানতে চাইলে মিডিয়াকে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন শেয়ার বাজারে যারা বিনিয়োগ করেছে তারা সবাই ‘ফটকাবাজ’। দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবীদ, সাংবাদিক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন শেয়ার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু আচমকা ধমকা ঝড় যেনো সবার স্বপ্নে বিষ ঢেলে দিয়ে শেয়ার বাজারের মাফিয়া চক্র সবই ওলট-পালট করে ছিলো। দেশের এই মহা দুর্নীতি নিয়ে যখন দেশে তোলপাড় চলছে তখন অর্থমন্ত্রী সর্বস্ব হারানো ব্যবসায়ী এবং ইনভেস্টারদের কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়ে বার বার ‘ফটকাবাজ’ ‘রাবিশ’ ‘স্টুপিড’ এমন নানা ধরনের রুচিহীন মন্তব্য করে তিনি নিজের প্রতি ঘৃণাই অর্জন করেছেন বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। তার অতিমাত্রার নিয়ন্ত্রণহীন বক্তব্য খুদ আওয়ামীলীগকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়। কিন্তু তবুও থেমে থাকেনি অর্থমন্ত্রী (?) মুহিত। পদ্মাসেতু দুর্নীতি নিয়ে গোটা বিশ্বে সমালোচনার ঝড় বইলেও মন্ত্রী মুহিত সব ‘বোগাস-স্টুপিড’ হিসেবেই দেখেছেন। তিনি বিশ্বব্যাংককে প্রতারক, মিথ্যাবাদী বলতে পর্যন্ত দ্বিধা করেননি। এভাবে তিনি লাগামহীন বক্তব্য কোনভাবেই বন্ধ না করে দিয়েই যাচ্ছিলেন।
একটি কথা না বলে পারছি না, সেটাও আমাদের বিখ্যাত উক্তি বিশারদ (!) অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবের। ২০১০ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। আওয়ামীলীগের ক্ষমতার হানিমুন পিরিয়ড। শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী সিলেট প্রেসক্লাব এর নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। সমগ্র দেশেই বিভিন্ন প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের মধ্যে নানা বিভাজন থাকালেও সিলেট প্রেসক্লাব ছিলো সেগুলো থেকে দূরে। সিলেটের সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ সহাবস্থান ছিলো দেশের সাংবাদিক সমাজের জন্য অনুকরণীয়। কিন্তু ফখর উদ্দিন-মঈন উদ্দিনের সাজানো নির্বাচনে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ঐতিহ্যবাহী সিলেট প্রেসক্লাবে কিছু সাংবাদিকদের ভেতরে যেন মুুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন করে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধী পরিবার পরিজনের রক্তধারণ করেন। কেউ কেউ আওয়াজ তুলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সিলেট প্রেসক্লাবের ৬ বারের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক মুকতাবিস-উন-নূর নাকি বামপন্থী বিরোধী মানুষ। তিনি নাকি জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত। অথচ মুক্তিযুদ্ধা পরিবারের সদস্য এবং যার বড় ভাই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, তাদের ভার্থখলার বাড়ীটি একাধিকবার পাক হানাদার গোষ্ঠি জ্বালিয়ে দিয়েছিলো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী মুক্তাবিস্-উন-নূর ছয়বার সিলেট প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট থাকলেও তিনি রাজাকার সমর্থক ছিলেন না তাদের কাছে। কিন্তু হঠাৎ করে তারা দাবী করলেন নূর ভাইনাকি রাজাকার। অথচ সিলেটের সাংবাদিকতা অঙ্গনের জীবন্ত এ কিংবদন্ত্রী মুকতাবিস-উন-নূরকে সকল রাজনৈতিক দল, মত শুধু সম্মানই করেন না, তাকে যেকোন সংকটকালীন সময়ে পরামর্শের জন্য পর্যন্ত ডেকে নিতেন। সাবেক স্পিকার আলহাজ্ব হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী (মরহুম), আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ, এম সাইফুর রহমানের মতো ব্যক্তিরা যাকে সম্মান দেখাতেন, স্নেহ করতেন কেউ মুকতাবিস-উন-নূরের চেতনা নিয়ে তাদের মূর্খ সূলভ গবেষনা দেখে প্রেসক্লাবের অনেক জুনয়ির সদস্যরা রীতিমতো ক্ষোভ কেটে পড়লো। প্রেসক্লাবের একজন সদস্য হিসেবে আমাকেও বিষয়টা শুধু পীড়াই দিচ্ছেলো না, রীতিমত সেটা ছিলো বিব্রতকর। কারন স্থানীয় পত্রিকাগুলো প্রেসক্লাবের বিষয় নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ পরিবেশন, আদালতে এ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা সহ নানা রকম সংবাদ প্রকাশের পর সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই প্রেসক্লাব বিষয়ে প্রতিদিন নানা প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন। অনেকের প্রশ্নের ধরণ ছিলো আবার আমাদের সাংবাদিকতা পেশার সততা নিয়ে। তাদের ধারণা প্রেসক্লাবে আমরা অর্থ ও ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্ধে জড়িয়ে গেছি। স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথিত ঐসব ধারকরা কয়েক দফা রীতিমত সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা নিয়ে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী সিলেট প্রেসক্লাবে প্রবেশের চেষ্ঠা চালালে আমরা সেটার প্রতিরোধ করি। অবস্থা যখন বেগতিক এবং কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা প্রেসক্লাবে আর যেতে পারবে না এবং আমরা তাদের সে সুযোগ আর দেবো না বলে সিদ্ধান্ত নেই তখন তারা শুরু করে নতুন চক্রান্ত। এক পর্যায়ে তারা সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবের স্বরণাপন্ন হন। অর্থমন্ত্রী একটি পক্ষের বক্তব্য শুনে সবকিছু আমলে নেন এবং প্রেসক্লাব সভাপতি মুকতাবিস-উন-নূর ভাইকে তাঁর পক্ষের সবাইকে নিয়ে মন্ত্রীর ধোপাদিঘীর পারস্থ হাফিজ কমপ্লেক্স এর বাসায় চায়ের দাওয়াত দিলেন। সময় নির্ধারণ হওয়ার পর নূর ভাই সিনিয়র সাংবাদিকদের নিয়ে সেখানে যাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঝেড়েছিলেন রীতিমত স্বৈরতান্ত্রিক ভাষায়। তার সেদিনের ব্যববহার কোন মন্ত্রী কিংবা এমপির মনে হয়নি। তিনি ছিলেন রীতিমত মহা উত্তেজিত। তার অসংযত ভাষা এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হচ্ছিলো ষত্তোরোর্ধ্ব লোকটা যেভাবে উত্তেজিত, যদি হঠাৎ হার্ট এ্যাটাক করে ফেলেন ??
সেদিন অর্থমন্ত্রী একটি কথা বলেছিলেন, আর সেটি ছিলো মন্ত্রী হিসেবে তার ক্ষমতার দাপটই বলা যায়। সিলেট প্রেসক্লাবে নাকি স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকাররা বিশৃঙ্খলা করছে, ওদের নাকি ‘পিটিয়ে’ বের করা হবে !!!
মন্ত্রী এবং মুরব্বী মানুষের মুখে সম্মানীত সাংবাদিকদের সম্পর্কে এমন রুচিহীন বক্তব্য শুনে সিনিয়র সাংবাদিকরা রীমিত স্তম্বিত হয়ে তারা নূর ভাইর নেতৃত্বে তাৎক্ষকিভাবে বৈঠক ত্যাগ করেন। অর্থমন্ত্রী সফল হননি, তার পিঠানোর স্বপ্নও পূরণ হয়নি। আমার জন্ম হয়নি তখন, যখন দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো। তবে শুনেছি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক মন্ত্রীর পরিবারের কারো কারো ভূমিকা নাকি প্রশ্নবোধক ছিলো ?
শেষ কথায় চলে আসছি। সম্প্রতি শেখ হাসিনার ইচ্ছার একান্ত প্রতিফলন ৫ জানুয়ারী একটি নির্বাচন হলো। পৃথিবীতে একমাত্র ভারত ছাড়া কোন রাষ্ট্রই যে নির্বাচনকে বৈধতা দিচ্ছে না। বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে কোঁথাও কোন পর্যবেক্ষক না পাঠিয়ে কোটি টাকা খরচ করে দুইজন ভাড়াটিয়ে প্রাইভেট পর্যবেক্ষক এনে প্রায় ১৬ কোটি জনগনের ভোটের বৈধতার স্বীকৃতি আদায়ের অভিনব ও নাটকে দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ শুধু বিস্মিতই নয়। অনেকেই ৬ জানুয়ারীকে বাংলাদেশের ইতিহাসের ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশেকে নিয়ে আওয়ামীলীগের এ নাটকের শেষ কোঁথায় জানি না। তবে দেশকে যে খাঁদের কিনারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেটা শুধু ভয়াবহই নয়, কখন পার ভেঙ্গে পড়বে সেটা কেউ জানে না।
৩ জানুয়ারী শুক্রবার বাংলাদেশের বহুল প্রকাশিত দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার একটি প্রতিবেদন দেখে রীতিমত হতভম্ব হয়ে গেলাম। ‘দ্রুত সম্পদ দ্বিগুনের উপায়’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে নবম জাতীয় সংসদের অর্ধশতেরও মত এমপি-মন্ত্রীর সম্পদ বাড়ারগতি বিশ্বের শীর্ষ ধণাঢ্য ব্যক্তিদেরও হার মানিয়েছে ! প্রতিবেদনটি বলা হয়েছে ঐ মন্ত্রী এবং এমপিরা এতো দ্রুত কায়দায় দ্বিগুন সম্পদ অর্জন করেছেন যে তাদের কারো কারো সম্পদ দ্বিগুন হতে ত্রিশ দিনেরও কম সময় লেগেছে ! কারো সম্পদ ২০ থেকে ২২গুন পর্যন্ত হয়েগেছে।
প্রার্থীদের ঐ সম্পদের হিসেব যদিও আগে বেরিয়েছে এবং এ নিয়ে সমালোচনা হওয়ার পর যদিও সরকারের পদলোহী দুর্নীতি দমন কমিশন এখন পর্যন্ত ‘আঙ্গুল ফুলে বটবৃক্ষ’ হওয়া সেই সব সম্পদশালীদের কোন হিসেব চাওয়ার দুঃসাহস দেখায়নি।
আমাদের অর্থমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তার অমীয় বানীর ভান্ডার খুলে বরাবারের মতোই যেন ‘কমেন্ট বোমা’ ফাঁটিয়ে বললেন, ‘মন্ত্রী-এমপি হলে সম্পদ বাড়তেই পারে এটা স্বাভাবিক !’ যদিও মন্ত্রী মুহিত সাহেব বলেননি কোন সে মাজেজার বদৌলতে বিশ বাইশ গুন সম্পদ সহজে হয়ে গেলো ? আওয়ামীলীগের অনেক মন্ত্রী, এমপিরা তাদের নির্বাচনী হলফনামায় তারা শেয়াবাজারে বিনিয়োগকারী হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। শেয়ারবাজারে ধস নামার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিকে রীতিমত জায়েজ হিসেবেই দেখেছেন বলে মনে হয়েছে। তিনি তার স্বভাব সূলভ রাগত্ব ভঙ্গিতে শেয়ার বাজার নিয়ে নানা বিরূপ করতে করতে এক পর্যায়ে বলে দেন শেয়ার বাজার ‘দুষ্টু ক্যাসিনো’ বা জুয়া খেলার বাজার।
পাঠকদের জন্য সব চেয়ে মজার তথ্য হলো আমাদের সেই বিখ্যাত মন্ত্রী মুহিত সাহেব তার নির্বাচনী হলফ নামায় নিজেকে শেয়াবাজারের একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে দেখিয়েছেন ???
চমকে উঠার মতো এ তথ্য পাওয়ার পর মন্ত্রী মুহিত সাহেবের কাছে জানতে ইচ্ছে করছে ‘স্যার আপনিও কি ‘ক্যাসিনো’ প্লেয়ার ???
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদক, দি সান রাইজ টুডে ডট কম