মুরসিকে ১৫ দিনের আটকাদেশ দিয়েছে মিসরের বিচার বিভাগ

Mursiমিসরের বিচার বিভাগ সেদেশের মতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে পনেরো দিনের জন্য আটকে রাখার আদেশ দিয়েছে। দুই বছর আগে হোসনি মুবারকের শাসনের বিরুদ্ধে মিসরে যে গণজাগরণ ঘটেছিল, সে সময় সংঘটিত কিছু অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই আটকাদেশ দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হামাসকে সহায়তা করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগও আনা হয়েছে। এর আগে সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, নিরাপত্তাগত কারণে তাকে তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। গণ বিক্ষোভের মুখে এ মাসের শুরুর দিকে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিসরের সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। এই ব্যবস্থা এমন সময়ে নেয়া হলো, যখন দুই পক্ষের সমর্থকরা কায়রো আর মিসরের অন্যান্য শহরে বড় ধরনের সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অভিযোগ মুরসিকে যে অভিযোগে আটকাদেশ দেয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে যখন মুবারকের বিরুদ্ধে মিসরে বিক্ষোভ চলছে, তখন প্রতিবেশী গাযার হামাসের সহায়তায় মুরসি মিশরের কারাগারে হামলা করে বন্দি নেতাদের মুক্ত করার পরিকল্পনা করেছেন। মিসরের আইন অনুযায়ী, এই অপরাধ দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সামিল। মুরসিকে মুক্ত করে দিতে জাতিসঙ্ঘ আর পশ্চিমা দেশগুলোর আহবানের মধ্যেই বিচার বিভাগ তাকে আটকে রাখার এই আদেশ দিল। তবে মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড বিচার বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে বলছে, এটি পুরনো শাসক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পরিষ্কার নমুনা। সমর্থকদের সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহবান জানিয়েছে দলটি। পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক এদিকে মিসরে সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাচ্যূত প্রেসিডেন্ট মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড, দুই পক্ষই আজ জনগণকে রাস্তায় নামার আহবান জানিয়েছে। দুটি পক্ষ তাদের আবেদনের সমর্থনে আবেগপ্রবণ বক্তব্য তুলে ধরে বিবৃতিও দিয়েছে। মুরসির পে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিবৃতিতে দেশটিতে ইসলাম রক্ষার জন্য তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে জনগণকে অংশ নিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে ব্রাদারহুডের সমর্থকদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে সেনাবাহিনী এর বিরুদ্ধে জনগণকে রাজপথে নামতে বলেছে। মিসরে সামরিক অভ্যূত্থানের নেতা এবং সেনাপ্রধান জেনারেল আবদ-আল ফাত্তা আল সিসি সহিংসতা এবং সন্ত্রাস মোকাবেলায় শুক্রবার রাজপথে নামার জন্য জনগণকে যে ডাক দিয়েছেন তার সমর্থনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিবৃতিও দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে সতর্ক করে দিয়েছে মিশরের সেনাবাহিনী বিবৃতিতে আজ শুক্রবার রাজপথে অবস্থান নিয়ে জনগণকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বলা হয়েছে। সেনাবাহিনী সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, সমাবেশে যারা সহিংসতা করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যূত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে পুনর্বহালের দাবিতে মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকে শুক্রবার শান্তিপূর্ণ বিােভ সমাবেশে অংশ নিতে জনগণকে আহবান জানানো হয়েছে। এই বিক্ষোভের সমর্থনে বিবৃতি দিয়ে দলটি বলেছে, নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী মিসরের মানুষের অধিকার এবং ইসলামকে ধ্বংসের কাজে নেমেছে। এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাড়ানো ছাড়া তাদের সামনে বিকল্প কিছু নেই। মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে গত ৩ জুলাই সেনাবাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করে। প্রেসিডেন্ট মোরসিকে ক্ষমতাচ্যূত করার পর থেকে মিসরের পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়েছে এবং সহিংসতা বেড়েই চলেছে বলে বলা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button