নবম দিনেও সর্বাত্মক অবরোধ
টানা অবরোধে গতকাল বৃহস্পতিবারও রাজধানীর সাথে সারা দেশের যোগাযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন স্থানে মারমুখী ছিল আইন-শৃংখলা বাহিনী। অবরোধের সমর্থনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা মিছিল সমাবেশ করেছে। ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন বাতিল ও ভোটের দিন সারা দেশে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে অবরোধের পাশাপাশি গত সোমবার ভোর ছয়টা থেকে বুধবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে ১৮ দলীয় জোট। গত রোববার সন্ধ্যায় গুলশানে নিজ বাসভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক এ ঘোষণা দেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হরতাল কর্মসূচি আরো ১২ ঘণ্টা বাড়িয়ে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা হয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান নিজ বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তবে কর্মসূচি ঘোষণার পর পরই গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে।
গাবতলী-মিরপুর : রাজধানীর মিরপুর ও গাবতলী এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ পালিত হয়েছে। মিরপুর ও গাবতলী এলাকার দোকান পাট বন্ধ ছিল, যানবাহনও চলাচল করেছে কম। এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোন যানবাহন চলাচল করেনি। রাজধানীর বাইরে থেকেও কোন যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করেনি। তবে কিছু সংখ্যক স্থানীয় যানবাহন চলাচল করেছে।
যাত্রাবাড়ী : বিরোধী দলের ডাকা টানা অবরোধে গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পাবলিক পরিবহন চলাচল করেছে সীমিত আকারে। সকাল থেকেই গণপরিবহনের জন্য অফিসগামী মানুষ অপেক্ষা করতে থাকে। অবরোধের অন্য দিনগুলোর মত এখানে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা ছিল। তবে পাবলিক পরিবহন না পেয়ে অনেকে আবার বিকল্প যান হিসেবে রিকশা ব্যবহার করে। তবে হরতালের পক্ষে অথবা বিপক্ষে এখানে কোন ধরনের মিছিল-মিটিং হয়নি। সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল একটি অজানা আতংক।
সায়েদাবাদ : টানা অবরোধ আর হরতালের কারণে গতকালও অন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার কোন যান ছেড়ে যায়নি। একইভাবে ঢাকার বাইরে থেকে কোন পরিবহন এখানে প্রবেশও করেনি। দূরপাল্লার কোন যাত্রীকে এখানে অপেক্ষা করতেও দেখা দেখা যায়নি। তবে সরকার দলের শ্রমিক নেতারা বহু চেষ্টা করে যাত্রীশূন্য দু’ একটি দূরপাল্লার যান ছাড়তে দেখা গেছে। সকাল থেকেই এই বাস টার্মিনালে তারা দূরপাল্লার যান সাজিয়ে বসে ছিল। অন্যান্য দিনের মত এখানে হরতালের পক্ষে অথবা বিপক্ষে কোন ধরনের মিছিল-মিটিং হয়নি। গতকাল এখানে শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীদের তেমন উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
দনিয়া : ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে দনিয়ায় হরতাল এবং অবরোধের সমর্থনে মিছিল ও পিকেটিং করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শাখা সভাপতি শাহীন আহমদের নেতৃত্বে এখানে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি দনিয়া ক্লাবে শুরু হয়ে শ্যামপুর কুদার বাজারে গিয়ে প্রধান সড়ক অবরোধ করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে তারা নিরাপদে চলে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
সদরঘাট : বিরোধী দলের টানা অবরোধের কারণে নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। গতকাল দেশের বৃহৎ নৌ টার্মিনাল এই সদরঘাট থেকে কোন লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। ঢাকার বাইর থেকে কোন লঞ্চ এই টার্মিনালে আসেনি। সরেজমিন ঘুরে গতকাল এখান থেকে স্বল্প দূরত্বের দু’একটি লঞ্চ চলতে দেখা গেছে। তবে তাতে তেমন কোন যাত্রী ছিল না। এখানে হরতালের পক্ষে অথবা বিপক্ষে কোন ধরনের মিছিল-মিটিং হয়নি। সারি সারি লঞ্চ এখানে দিনের পর দিন নোঙ্গর করে রয়েছে। টানা অবরোধের কারণে এসব লঞ্চ ছাড়তে পারছে না।