মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি, বিবিসিরও নতি স্বীকার
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের পর অবশেষে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গোলাম আযমের ৯০ বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার পর বিবিসি ওয়েবসাইটের এশিয়া পেইজে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্র্রকাশ হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘১৯৭১ এর যুদ্ধে কতজন মানুষ নিহত হয়েছিলো তা পরিষ্কার না হলেও বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতি অনুযায়ী তা ত্রিশ লাখ। তবে নিরপেক্ষ গবেষকদের মতে এই মৃতের সংখ্যা পাঁচ লক্ষের মত’।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনেকেই বিবিসিতে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ইমেইল প্রেরণ করেন। লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের দৃষ্টিতেও ধরা পড়ে বিষয়টি।
তাৎক্ষনিকভাবে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ এন্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর এন্ড্রু হোয়াইটহ্যাডের কাছে চিঠি লেখেন হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস ।
বাংলাদেশের হাইকমিশনারসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের মুখে অবশেষে গত বুধবার বিবিসি তাদের ওয়েবসাইটে এ ব্যাপারে সংশোধনী দেয়। সংশোধনীতে লেখা হয়, ‘মৃতের সংখ্যা নিয়ে অনুমাননির্ভর বিভিন্ন সংখ্যা প্রকাশ হলেও সরকারি তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা ত্রিশ লাখ’।
বিভ্রান্তিকর ওই তথ্য সংশোধনের খবর জানিয়ে হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস বলেন, ‘বিদেশী মিডিয়ায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোন ধরনের বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশের সাথে সাথেই প্রতিবাদ করা উচিত। কারণ এ ধরনের বিভ্রান্তিকর খবর একবার প্রকাশ হলেই, পরবর্তীতে তা রেফারেন্স হিসেবে অনেকে ব্যবহার করবেন।’
ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ খবরের প্রতিবাদ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে হাইকমিশনার বলেন, ‘বাঙালির মহান অর্জন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করে কোন বিভ্রান্তি সৃষ্টি, আমাদের এই প্রজন্ম বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে দেবে না, এই বিশ্বাস জাতির মনে সুদৃঢ় হতে শুরু করেছে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য টাইমস’ও শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করেছিল।
টাইমস এর পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ‘সানডে টাইমস’ পত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্রের স্পেকট্রাম বিভাগে প্রকাশিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ছবির ক্যাপশন দিতে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে বাস্তুচ্যুত একজন স্বামী কলেরা আক্রান্ত তার স্ত্রীকে কোলে নিয়ে তিন মাইল পথ পায়ে হেঁটে হাসপাতাল যাচ্ছেন- ‘ক্যাজিওলটিজ অব ওয়ার’ শিরোনামে প্রকাশিত এই ছবিটির ক্যাপশনে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতাযুদ্ধের স্থলে ‘গৃহযুদ্ধ’ উল্লেখ করা হলে ব্রিটেনে বসবাসরত তরুণ ব্রিটিশ বাঙালিদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
ফটোগ্রাফার ডন ম্যাককুলিনের তোলা এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী ছবিটি ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ‘দ্য টাইমস’ এ প্রকাশিত হয়েছিল। টাইমস এর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘দ্য সানডে টাইমস’ এ প্রকাশিত ক্রোড়পত্রের ম্যাগাজিনে অন্য আরও কিছু ঐতিহাসিক ছবির সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন এই ছবিটিও স্থান পায়।