শিশু দত্তক প্রচারাভিযান শুরু করেছে টাওয়ার হ্যামলেটস
শিশুদের দত্তক নিতে মুসলমান পরিবারগুলোকে উ্সাহিত করার জন্যে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ৬ই জানুয়ারি থেকে এক প্রচারাভিযানের শুরু করেছে। টাওয়ার হ্যামলেটসের মুসলিম এডপশন ক্যাম্পেইনের সমর্থনে মুসলমান সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং প্রধান প্রধান এডাপশন সংস্থাগুলো এগিয়ে এসেছে। এই প্রচারাভিযানে বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে দুই মাসব্যাপি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য হল শিশুদের দত্তক নেয়ার ব্যাপারে মুসলমান পরিবারগুলোকে অবহিত ও উ্সাহিত করা। ৪০ সেকেন্ডের এই বিজ্ঞাপনে একটি মুসলমান পরিবারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই পরিবারের কোন সন্তান ছিল না, তাই তারা নিরূসঙ্গ বোধ করতেন। তবে তারা যখন একটি শিশু কন্যাকে দত্তক নিয়ে লালন-পালন করতে লাগলেন, তখন তাদের নি:সঙ্গতা কেটে গেলো। তারা শিশুটিকে পার্কে নিয়ে গিয়ে আনন্দময় সময় কাটান। এই ধরনের বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য হল, শিশু ও বড়দের জীবনে কি ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসে তা তুলে ধরা।
টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হিসাবে আমরা চাই প্রত্যেকটি শিশু যাতে সুন্দরভাবে তাদের জীবন শুরু করতে পারে। কোন কোন সময় একটি শিশুর বসবাসের জন্যে নতুন বাসস্থানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে, শিশুরা যাতে স্নেহময় পরিবেশে বড় হতে পারে, তা আমি নিশ্চিত করতে চাই।
তিনি বলেন, আমি চাই মুসলমান পরিবার থেকে অভিভাবকরা শিশু দত্তক নেয়ার জন্যে আমাদের এডপশন টিমের সাথে যোগাযোগ করবেন।”
চিলড্রেন, স্কুলস এন্ড ফ্যামিলিজ এর কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর ওলিউর রহমান বলেন, ম্লমুসলমান সমাজ থেকে দত্তক নেয়ার জন্যে অভিভাবকরা এগিয়ে আসলেও তা যথেষ্ট নয়। আমি আশা করি বারার শিশুদের কল্যানের জন্যে এই প্রচারাভিযান সাফল্য লাভ করবে। একটি শিশুকে লালন-পালন করার জন্যে দত্তক নেয়ার মত ভাল কাজ আপনার জন্যে আর কি হতে পারে?”
কাউন্সিল বিশ্বাস করে একটি দত্তক-শিশুর জন্যে তার নিজের সম্প্রদায়ের পরিবারে বসবাস করার ব্যবস্থা করা উচিত তবে এই ব্যবস্থা করা খুব সহজসাধ্য নয়। মুসলমান জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মুসলমান শিশুদের সংখ্যা। পারিবারিক বাসস্থানে অবহেলা ও নির্যাতনের কারনে অনেক মুসলিম শিশুদের নতুন বাসস্থানের প্রয়োজন হচ্চেছ। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, মুসলিম পালক দম্পতিদের সংখ্যা বাড়ছে না। কিন্তু মুসলমান শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে, যাদের জন্যে পালক মুসলিম দম্পতির প্রয়োজন। যারা অপেক্ষমান শিশুদের লালন-পালনের জন্যে গ্রহন করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে শিশুকে লালন-পালন করানোর জন্যে দত্তক দেয়ার কারন এর উপর নির্ভর করতে হবে। তাকে স্থানান্তর করার পর তার নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়টি নজরে রাখতে হবে। আর এদিকে লক্ষ্য রেখেই টাওয়ার হ্যামলেটস জাতীয় ভাবে এই প্রচারনা চালাচ্ছে।
টাওয়ার হ্যামলেটসের মুসলিম এডপশন ক্যাম্পেইনের সমর্থনে মুসলমান সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং প্রধান প্রধান এডাপশন সংস্থাগুলো এগিয়ে এসেছে। মুসলমান শিক্ষক ও টেলিভিশন উপস্থাপক ও ফান্ড রেইজার হিসাবে খ্যাত ড: আবুল কালাম আজাদ বলেন, মুসলমান পালক অভিভাবক সংগ্রহের জন্যে টাওয়ার হ্যামলেটস প্রচারাভিযান চালাচ্চেছ জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ধর্ম, সংস্কৃতি, খাবার ইত্যাদি ব্যাপারের দিকে লক্ষ্য রেখে পালক অভিভাবক সংগ্রহের জন্যে যে প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে তা সাফল্য লাভ করবে বলে আমি আশাবাদি।”
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল অফ মস্কের সভাপতি হাফিজ মওলানা শামসুল হক বলেন, মস্ক কমিটির মেম্বার ও ইমাম সাহেবদের মাধ্যমে আমরা মুসল্লিদের এ বিষয়ে অবহিত করবো। মুসলমান বাচ্চচাদের পালক হিসাবে নিয়ে তাদের লালন-পালন করার বিষয়টির একটি সুরাহা যাতে পাওয়া যায় সে জন্যে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলকে আমাদের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা আমরা করে যাবো।”
বৃটিশ এসোসিয়েশন ফর এডপশন ফর ফস্টারিং টাওয়ার হ্যামলেটসের এই ক্যাম্পেইনকে সমর্থস জুগিয়েছে।
ইটস ব্লাক, এশিয়ান এবং মাইনরিটি এথনিক পলিসি কনসালট্যান্ট সবিতা ডি সুজা বলেন, দত্তক নেয়ার পর শিশুটির মানসিক ও ধর্মীয় ব্যাপারেও নজর রাখতে হবে। এর সাথে তার ভাষা ও সংস্কৃতির সহাবস্থান থাকতে হবে। এশিয়ান, আফ্রিকান ও আফ্র্রিকান ক্যারিবিয়ান সমাজের শিশুদের পালক অভিভাবক পাওয়ার জন্যে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা টাওয়ার হ্যামলেটসের এই প্রচারাভিযানকে সমর্থন জানাতে পেরে আনন্দ অনুভব করছি। আমরা মুসলমান পালক অভিভাবক হওয়ার জন্যে উ্সাহিত করছি যারা শিশুদের আদর, স্নেহ ও নিরাপত্তা স্থায়ী বাসস্থানে লালন পালন করবেন।”
বিস্তারিত জানার জন্যে ০৮০০ ২৭৯ ৯৮৫০ এই নম্বরে যোগাযোগ করার জন্যে অনুরোধ করা হয়েছে।