বিশ্ব ইজতেমায় আসছেন ৪৫ হাজার বিদেশি
মোস্তফা ইমরুল কায়েস: পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম গণজমায়েত বিশ্ব ইজতেমার ৪৯তম আসর আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে দুই দফায় চলবে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এজন্য দশদিন আগ থেকেই চলছে ইজতেমা সফল করার সব প্রস্তুতির কাজ। এবারও পৃথিবীর ১৫০টি দেশ থেকে আসবেন প্রায় ৪৫ হাজার বিদেশি মুসল্লি। ইজতেমায় প্রথম দিন থেকেই বয়ান করবেন ভারত ও পাকিস্তানের মুরব্বীরা।
সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা গেছে, ইজতেমায় আগেই চলে আসা শত শত মুসল্লি তাঁবু টানানোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। কেউ কেউ বাঁশ টানছেন, বিদ্যুতের খুঁটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছেন, কেউ আবার আগত মুসল্লিদের রান্নার কাজ করছেন।
তাদের পাশাপাশি এবার থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। এজন্য এখন থেকেই চলছে সিসি ক্যামেরা লাগানো, ওয়াচ টাওয়ারসহ চেকপোস্ট তৈরির কাজ। মুসল্লিদের পাশাপাশি মাঠে কাজ করছেন র্যাব ও সেনাসদস্যরা। তারা বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসাতে ব্যস্ত।
র্যাব-১ এর ডিআইডি কবির জানান, তারা এবার অর্ধশতাধিক সিসি ক্যামেরা বসাবেন। এজন্য তাদের ৩০ জন কন্ট্রোলার থাকবেন প্রথমদিন থেকে। এছাড়া ২টি কন্ট্রোল রুম ও ৫০টির বেশি চেকপোস্ট থাকবে।
ইজতেমার আয়োজকদের পাশাপাশি সরকারও নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। এবার রেল বিভাগ থেকে দেয়া হয়েছে ২২টি বিশেষ ট্রেন। প্রত্যেক ট্রেন ইজতেমা শুরুর তিনদিন আগ থেকেই টঙ্গী স্টেশনে দুই মিনিট করে বিরতি দেবে।
রেলবিভাগ জানিয়েছে, আখেরি মুনাজাতের আগের দুইদিন প্রথম পর্বে ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি জামালপুর-টঙ্গী ১টি, আখাউড়া-টঙ্গী ১টি, লাকসাম-টঙ্গী ১টি ট্রেন চলবে। এছাড়াও আখেরি মুনাজাতের দিন ঢাকা-টঙ্গী, টঙ্গী-ঢাকা ৭টি, টঙ্গী-লাকসাম ১টি, টঙ্গী-আখাউড়া ২টি, টঙ্গী-ময়মনসিংহ ৪টি এবং ঈশ্বরদী-টঙ্গী-ঈশ্বরদী ১টি ট্রেন যাতায়াত করবে।
দ্বিতীয় পর্বে ৩১ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি জামালপুর-টঙ্গী ১টি, আখাউড়া-টঙ্গী ১টি এবং ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-টঙ্গী, টঙ্গী-ঢাকা ১টি করে ট্রেন চলবে।
১৯৬৭ সাল থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হওয়া ১৬৭ একর জায়গায় অনুষ্ঠিত এ ইজতেমায় প্রতিবছর লাখো মানুষের ঢল নামে। ইজতেমায় লাখো মানুষকে জায়গা দিতে এবারও চলছে মাঠজুড়ে তাঁবু টানানো, মিম্বর, হাউজ, টয়লেট, খিত্তা, খিত্তার খুঁটি, মোকাব্বের পয়েন্ট, জুড়নেওয়ালী পয়েন্ট, ওজুখানা, বিদ্যুতের সংযোগ, ঘুমানোর জায়গা তৈরি ও মুরব্বীদের বয়ান দেয়ার জন্য মঞ্চ তৈরির কাজ।
ইজতেমাকে সফল করতে এবারও দেশের ৬৪টি জেলাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে আসবে ৩২টি জেলা এবং পরের পর্বে ৩২টি। মুসল্লিদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে ম্যাপ। ম্যাপে দেখানে হয়েছে কোন কোন পথে প্রবেশ করতে হবে তাদের। এছাড়া রয়েছে নানা নির্দেশনা।
এবার মাঠে প্রবেশের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড, তুরাগ নদী, আশুলিয়া রোডসহ পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ মিলে তৈরি করা হয়েছে ১৮টি প্রবেশ পথ।
মুসল্লিদের কথা বিবেচনা করে মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে ১৩টি টয়লেট জোনে থাকবে ২৯২৫টি টয়লেটের ব্যবস্থা। তারপরও এ সংখ্যায় হবে কি না তা নিয়েও বেশ চিন্তায় আয়োজকরা।
দেশের মুসল্লিদের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে বিদেশি মুসল্লিদের জন্য স্পেশাল তাঁবু। এসব তাঁবুতে তারা যেন আরামে থাকতে পারেন তার জন্য বেশ ভালোভাবেই তৈরি করা হচ্ছে বলে জানালেন ইজতেমার কর্মী আবু জোবায়ের।
আশা করা হচ্ছে এবার ৪৫ হাজার বিদেশি মেহমান বিশ্ব ইজতেমায় আসবে। আর সে জন্য তৈরি করা হয়েছে ৫টি বড় তাঁবু। এসব তাঁবুর কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
তাঁবু তৈরিতে ব্যস্ত ইজতেমার স্বেচ্ছাসেবক আওলাদ জানান, এবার গতবারের চেয়ে বেশি বিদেশি মুসল্লি আসবেন। তারা যাতে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হন তার জন্য তাদের খেদমতে থাকবে হাজারও কর্মী।
ইজতেমার মাঠের সার্বিক দায়িত্বে থাকা জিম্মাদার গিয়াস উদ্দিন জানান, এবার ১৫০টি দেশ থেকে বিদেশি মুসল্লিরা আসবেন। প্রথমদিনের আগের সন্ধ্যা অর্থ্যাৎ ২৩ জানুয়ারি থেকেই বয়ান শুরু হবে এবং আখেরি মোনাজাত শেষ করা হবে দুপুরের জোহরের নামাজের আগেই।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, গতবারের মতো এবারও ভারত ও পাকিস্তানের মুরব্বীরা বয়ান করবেন। ভারতের মুরব্বী মাওলানা সাদ, আহম্মদ লাট সাহেব ও পাকিস্তানের আব্দুল ওয়াহাব বয়ান করবেন। এদের মধ্যে মাওলানা সাদ এবারও আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন। মুরব্বীরা বেশ কয়েকদিন অবস্থান করে ফিরে যাবেন নিজ দেশে।