অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন
বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা ও কিংবদন্তী অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে শুক্রবার দুপুরে। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে কেওরাতলা শ্মশানে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাকে গান স্যালুট প্রদান করা হয়। ১টা ৫০ মিনিটে শুরু হয় তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠান। এ সময় সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, রাজ্যের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। শ্মশান চত্বর ও এর আশপাশে গ্রহণ করা হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শ্মশানের অভ্যন্তরে সুচিত্রার পরিবারের সদস্যদের ছাড়া আর কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তার আপামর ভক্তদের শ্মশানের বাইরে অবস্থান গ্রহণ করতে হয়েছে। তবে জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রবীন্দ্র সদনে তাঁর প্রতিকৃতি রাখা হয়। দুপুর ২টার পর থেকে সেখানে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন।
বাসস দিল্লী অফিস জানায়, বাংলা চলচ্চিত্রের এ কালজয়ী অভিনেত্রী আজ সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। গত ২৪ ডিসেম্বর ফুসফুস সংক্রমণজনিত অসুস্থতায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৬ দিন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে লাখো-কোটি ভক্ত-শ্রোতাকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
বাঙালীর হৃদয় হরণকারী এ অভিনেত্রীর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে অবসান হলো বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের এক অধ্যায়ের। তিনি ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জে (বর্তমান বাংলাদেশ) জন্মগ্রহণ করেন।
‘শেষ কোথায়’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে পদাপর্ণ। তবে এ ছবিটি মুক্তি পায়নি। পরের বছরই মুক্তি পায় নির্মল দাসের ছবি সাড়ে চুয়াত্তর। এ ছবির মাধ্যমেই বাঙালির হৃদয়ে পাকাপাকিভাবে স্থান করে নিলেন সুচিত্রা সেন। এ ছবির মাধ্যমেই প্রথম জুটি বাঁধেন উত্তম কুমারের সঙ্গেও। বাকিটা ইতিহাস। সোনার অক্ষরে যা লেখা রয়েছে বাঙালির মনের মণিকোঠায়।
উত্তম-সুচিত্রা জুটির অন্যান্য জনপ্রিয় ছবির মধ্যে অগ্নিপরীক্ষা, শাপমোচন, সবার উপরে, সাগরিকা, হারানো সুর, পথে হল দেরি, সপ্তপদী, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, সূর্যতোড়ন, ইন্দ্রানী ও বিপাশা উল্লেখযোগ্য।
উত্তম ছাড়াও সুচিত্রা ছিলেন সপ্রতিভ। বলিউডের দেবদাস ছবিতে দীলিপ কুমার ও আঁধি ছবিতে সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে সমহিমায় অভিনয় করে তিনি সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। আঁধি ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর ফিল্ম ফেয়ার এ্যাওয়ার্ডও তিনি অর্জন করেন।
ভারতীয় অভিনেত্রী হিসাবে সুচিত্রাই প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে আনেন। সেও আবার উত্তমকে ছাড়াই। সাত পাকে বাঁধা ছবির জন্য ১৯৬৩ সালে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তিনি সেরা অভিনেত্রীর এ শিরোপা অর্জন করেন।
উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর আকস্মিকভাবেই চলচ্চিত্র জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন সুচিত্রা সেন। তিনি বাড়ির চার দেয়ালে নিজেকে বন্দী করে ফেলেন। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালেই ছিলেন।