সিরীয় সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু

Syriaযুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে আয়োজিত সিরীয় শান্তি আলোচনা গতকাল সুইজারল্যান্ডের মন্ট্রিক্সে শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছে সিরিয়া সরকার ও তাদের বিরোধীরা। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সেনাবাহিনীর হাতে ১১ হাজার বন্দী হত্যার বিভীষিকাময় খবর প্রকাশের পর এ আলোচনা শুরু হলো। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জাতিসঙ্ঘ এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। এএফপি ও রয়টার্স।
জেনেভা হ্রদের তীরের একটি হোটেলে প্রথম দিন আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা একই টেবিলে সিরীয় সরকার ও বিদ্রোহীদের আনার মতো কঠিন কাজটি সম্পন্ন করেছে। সিরিয়া সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ মুয়াল্লেম ও বিরোধী পক্ষে আহমদ জারবা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়া ও কয়েক লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করেন।
প্রায় তিন বছর ধরে চলামান গৃহযুদ্ধ অবসানে দুই পকে আলোচনায় বসানোর জন্য বিশ্বশক্তিগুলো বহু দিন ধরেই চেষ্টা করে আসছিল। আন্তর্জাতিক কূটনীতিক ও সিরিয়ার বিবদমান পগুলো শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডে পৌঁছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ আলোচনায় অংশ নিতে সুইজারল্যান্ড পৌঁছেন।
মঙ্গলবার সিরিয়ার বিরোধী ও সরকারপরে প্রতিনিধিদলও মন্ট্রিয়াক্সে পৌঁছে। তবে সিরীয় সরকারের বিমানটিকে এথেন্স বিমানবন্দরে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগও এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। তবে এই শান্তি সম্মেলনকে ঘিরে তেমন কোনো উচ্চাশা বিরাজ করছে না। কেননা সঙ্ঘাত নিরসনের পদ্ধতি নিয়ে সরকার ও বিরোধীপক্ষের যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি বিরোধীদের মধ্যেও পরস্পরে মতপার্থক্য রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জেনেভায় সিরিয়াবিষয়ক শান্তি আলোচনার শুরুতে বলেছেন, সিরিয়ায় নতুন করে কোনো অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ তার অংশ হবেন না। এএফপি।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের বাস্ততবতা নিয়ে আলোচনা করা দরকার যে পারস্পরিক সম্মতির কারণে আমরা এখানে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য উপস্থিত হয়েছি তার অর্থ হলো সেই সরকার কোনো না কোনো পরে কাছে গ্রহণযোগ্য নয় তেমন কাউকে রেখে গঠন করা যাবে না। এর অর্থ প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সেই সরকারের অংশ হবেন না।
অন্য দিকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেছেন, সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সহজ ও দ্রুত হবে না। সিরিয়াবিষয়ক এ শান্তি আলোচনা দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। প্রতিনিধিদের এ সুযোগ গ্রহণ করতে হবে। তবে সিরিয়ায় বিবদমান পগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতা স্থাপন সহজ ও দ্রুত হবে না। প্রায় তিন বছর ধরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। শিয়া-সুন্নিভিত্তিক এ লড়াইয়ে সিরিয়ার শিয়া-সুন্নি প্রতিবেশীরাও কমবেশি জড়িয়ে পড়েছে।
এ দিকে জতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন সিরিয়ার মিত্র ইরানকে এই শান্তি আলোচনা শুরুর আগে শেষ মুহূর্তে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধীরা আলোচনা বন্ধের হুমকি দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেন। তা ছাড়া সিরিয়া বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাশিয়ার উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব সিরিয়ার সরকার বিরোধী জোট সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশনকে সমর্থন করে। অথচ রাশিয়ার সমর্থন বাশার আল আসাদ সরকারের প্রতি। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গাও এই আলোচনায় প্রভাব ফেলবে।
১১ হাজার বন্দী হত্যার নিন্দা
এ দিকে সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে ১১ হাজার বন্দীকে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ ওঠায় তার ব্যাপক সমালোচনা করেছে জাতিসঙ্ঘ, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসঙ্ঘ এই খবরকে বিভীষিকাময় বলে উল্লেখ করেছে। মার্কিন সরকার বলছে, বাশার আল আসাদ সরকারকে মতাচ্যুত করার সময় এসেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মারি হার্ফ বলেন, বন্দীদের নির্যাতনের যেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে তাতে নির্যাতনের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার অবস্থা এমনই ভয়াবহ যে, সেখানে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনা আবশ্যক।’ সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে অনাহারে রেখে এবং অত্যাচার চালিয়ে বন্দী হত্যার অভিযোগ এনেছেন যুদ্ধাপরাধের বিচার সংক্রান্ত তিনজন কৌঁসুলি।
বন্দীদের নির্যাতন করার প্রায় ৫৫ হাজার ছবি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই নিন্দা জানাতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মহল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button