কী হচ্ছে, কী হবে

Hasina Kaledaমতিউর রহমান চৌধুরী: কী হচ্ছে, কী হবে। এ প্রশ্ন ঘরে-বাইরে সবখানে। বলছি রাজনীতির সর্বশেষ হালচাল নিয়ে। ভবিষ্যত্ নির্বাচন নিয়ে। কোথাও কানাঘুষা, কোথাও সরব আলোচনা। নির্বাচন হবে না—এমন কথাও চাউর হয়ে গেছে সর্বত্র। নির্বাচন না হলে কি হবে? ফের জরুরি শাসন। নাকি জগাখিচুড়ি কিছু। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা। একদলীয় নির্বাচন করা। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ থাকলে তো বোনাস। কথা চলছে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে। তারা রাজি হলে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন আওয়ামী লীগের। বিএনপি তখন কি করবে? দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে কি যাবে তারা? মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। খালেদার না। কতিপয় নেতার হ্যাঁ। তারা বলছেন, সরকার এখন এমন অবস্থায়; নিলামে তুললেও কেউ নিতে আসবে না। জনপ্রিয়তা একদম তলানিতে। দেশি-বিদেশি সব জরিপই বলে দিয়েছে এবার আর জাগবে না মহাজোট। জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে ক্ষতির কিছু নেই। খালেদা বলছেন, ও কথা চলবে না। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়ার মানে এই নয় জাতীয় নির্বাচন তারা ছেড়ে দেবে। বোতামটা টিপে দেবে এমনভাবে তখন টেরই পাবেন না। জনগণও বিশ্বাস করবে না। পরাজিত হয়েও তারা এক ধরনের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে। এ নিয়ে বিএনপিতে নানা খেলা চলছে।
সময় যত যাচ্ছে ততই উত্তেজনা বাড়ছে। সমাধানের সূত্র কেউ দিতে পারছেন না। খেলাটা যেখানে দু’জনের মধ্যে, সেখানে অন্যরা খেলেই বা কি লাভ? দিনের শেষে দুই নেত্রীকেই বলতে হবে তারা আসলে কী চান? যত হিসাব-নিকাশ এই দু’জনকে নিয়েই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি একচুলও নড়বেন না। ঘনিষ্ঠজনদের বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে আমাদের কি করার আছে। যদিও মাঝখানে উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী আলোচনা শুরু করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে ছাড়া এ ধরনের আলোচনা সম্ভব নয়। কিন্তু মাঝখানে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা ভিন্নমুখী হয়ে যায়। গওহর রিজভীর বাসায় বিএনপি নেতা ড. আবদুল মঈন খান অপেক্ষা করছিলেন প্রায় একঘণ্টা। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের যোগ দেয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত জানা গেল তিনি যোগ দিচ্ছেন না। ড. রিজভী দুঃখ প্রকাশ করেন মঈন খানের কাছে। বলেন, মনে হয় কোনো ঝামেলা হয়েছে। পরে হয়তো যোগাযোগ করা যাবে। মঈন খান দলনেত্রীকে বিষয়টি জানান। আশরাফ কেন বৈঠকে হাজির হননি তা নিয়ে রহস্যজনক খবরাখবরই পাওয়া গেছে। শেষ মুহূর্তে নাকি নেত্রী মত বদলান। আশরাফ অসন্তুষ্ট হলেও কিছু করার নেই। ড. রিজভী অবশ্য জামায়াতের সঙ্গেও এক দফা আলোচনা করেন। সে আলোচনায়ও কোনো ফল হয়নি। আসলে সরকারের শীর্ষ মহল দোটানায়। এক. নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে নিশ্চিত পরাজয়। দুই. এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঝুঁকি নেবেন কিনা? তিন, এরশাদ যদি কোনো কারণে নির্বাচনে না যান তাহলে হাস্যকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে সব আয়োজন। এ অবস্থায় শাসক দলের সামনে আর কি বিকল্প আছে? অন্যদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নেয়া। এটাই বা নিশ্চিত করবে কে? মইন-মাসুদদের মতো যদি হয়ে যায় পরিস্থিতি। এরা ছিলেন বিএনপির অন্ধ ভক্ত। পোস্টিং-প্রমোশনও হয়েছিল বিএনপির জমানায়। অন্তত পাঁচজনকে ডিঙিয়ে মইনকে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন বেগম জিয়া। এক সকালে তারা তরল পদার্থের মতো বদলে যান। বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্যে বিপর্যয় নেমে আসে। খড়্গ নেমে আসে বিএনপির ওপর। এরকম পরিস্থিতি নিয়ে পর্দার আড়ালে আলোচনা যে চলছে না, তা কিন্তু নয়।
বিরোধী নেত্রী বেগম জিয়ার সামনে অপশন কী? প্রধানমন্ত্রী যদি কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার না করেন, তখন তাকে আন্দোলন করে তা আদায় করতে হবে। জনগণ সরকারের ওপর বীতশ্রদ্ধ। তার মানে এই নয়, কাল সকালে তারা রাজপথে নেমে পড়বেন। যদিও বেগম জিয়া বিশ্বাস করেন গণআন্দোলন তৈরি করা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কি করবে? দল কি ঘুরে দাঁড়াবে? প্রশাসনের ভূমিকাই বা কি হবে? পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর হাওয়া ঘুরে গেছে। প্রশাসন ঝুঁকিতে নাও যেতে পারে। বেগম জিয়া মনে করছেন নির্দলীয় সরকারের দাবি নিয়ে যদি তিনি গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়ান তখন অন্য এক জোয়ার সৃষ্টি হবে। শেখ হাসিনা দলকে চাঙ্গা করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। একদিন যাদের সংস্কারপন্থী বলে উপেক্ষা করেছিলেন তাদের ডেকে নিতে পারেন।
বাংলাদেশের বিদেশি বন্ধুরা কী করবেন? তারা কোনো ভূমিকা রাখবেন কিনা? পর্দার আড়ালে তারা নড়চড় শুরু করেছেন। তারা চান গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে পরিষ্কারভাবে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। বাকি থাকল ভারত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত একটি বড় ফ্যাক্টর। ভারত আগাগোড়াই বর্তমান সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। যদিও বিরোধী নেত্রী বেগম জিয়াকে ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানিয়ে কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নামায় ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসী পত্রিকা হিসেবে সুপরিচিত আনন্দবাজার বলে দিয়েছে—ঢাকায় পরিবর্তন হলে দিল্লির কোনো চিন্তা নেই। এ থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মত দিচ্ছেন নাটকীয়ভাবে ভারতের মনোভাবে পরিবর্তন হতে চলেছে। একজন ভারতীয় কূটনৈতিক বিশ্লেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ভারত একটি ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসেছে। সেই ঘোড়া যদি পানিতে গিয়ে পড়ে তখন কি ভারত পানি পর্যন্ত যাবে—নাকি আগেই লাফ দিয়ে পড়বে। এই নিয়েই সাউথ ব্লকের কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন। ঢাকায় হেফাজতের উত্থানে ভারত চিন্তিত। তাদের সামনে বিকল্প কী? জনগণ যেখানে ঘুরে গেছে, সেখানে তো বাস্তবকে অস্বীকার করে কোনো ফায়দা হবে না। বরং ভারতবিরোধী জিগিরকে উসকে দেয়া হবে, যাতে করে বাংলাদেশের রঙ বদলে যেতে পারে। বিশেষ করে বিরোধী বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে তাদের যত দুশ্চিন্তা। অতিসম্প্রতি দিল্লি সফর করে এসেছেন এমন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিক বললেন, ভারত এখনও মনঃস্থির করতে পারেনি। বিএনপির পক্ষ থেকে দু’জন নেতা দিল্লি ঘুরে এসেছেন। তারা সম্পর্ক ঝালাই করার চেষ্টা করেছেন। কতটুকু সফল হয়েছেন জানা যায়নি। তবে যেটুকু জানা গেছে, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু যিনি দিল্লিতে বসে ঢাকার প্রতি নজর রাখেন তিনি নাকি বলেছেন, সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করাটাই উত্তম কাজ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button