মিসরে মুরসি সমর্থকদের উপর সেনাবাহিনীর গুলি, নিহত ১৪০
মিসরে সেনাবাহিনীর গুলি ও রাতভর সহিংসতায় ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির ১৪০ সমর্থক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত এ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। মিসরে আল জাজিরা টিভি চ্যানেলের বরাত দিয়ে স্থানীয় আল আহরাম পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে। খবরে জানায়, ভোরে রাজধানী কায়রোর নাসর সিটিতেই বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন ৭০ মুরসি সমর্থক। ব্রাদারহুডের মুখপাত্র জেহাদ আল-হেদাদ বলেন, সেনাদের উদ্দেশ্যই ছিল তাদের গুলি করে হত্যা করা। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। শুক্রবার মুরসির সমর্থক ও সেনাবাহিনী দু’পক্ষই পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক দিয়ে জনগণকে রাজপথে নামার আহ্বান জানায়। এদিকে ব্রাদারহুড মুখপাত্র আহম্মেদ আরিফ বলেন, রাতভর এ সহিংসতা ও বন্দুকধারীদের গুলিতে সদস্যদের নিহতের ঘটনায় তারা শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে অবস্থান নিবেন। সামরিক সরকার ক্ষমতা না ছাড়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এবং অন্তর্বতী সরকারের সাথে কোনো ধরণের সমঝোতা করবে না। আল জাজিরার প্রতিনিধি জামাল এলশেয়াল নাসর সিটি থেকে জানান, আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এদের বেশিরভাগ গুলিবিদ্ধ ও টিয়ার গ্যাসের কারণে আহত। আল জাজিরার বিশেষ প্রতিনিধি নাসর সিটির ওই হাসপাতালের চিত্র তুলে ধরেন। সেখানে ২০ ফুটের একটি রুমে ২০ থেকে ৩০টি বেড। দুই-তিন মিনিট পর পরই রক্তাক্ত অবস্থায় একেকজনকে আনা হচ্ছে। পুরো জায়গা রক্তাক্ত। সে এক মর্মান্তিক দৃশ্য। হতাহতের সংখ্যা অনেক। ঠিক কতজন হতাহত হয়েছেন তার প্রাথমিক হিসাব এখন বলা কঠিন। এর কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটির অন্তর্বতীকালীন সরকার ব্রাদারহুড সমর্থক ও সেনা শাসনবিরোধীদের হুঁশিয়ার করে বলেন, সমাবেশে কোনো ধরণের সহিংসতা হলে তা প্রতিহত করা হবে। তাদের রাজপথ থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। এদিকে গতকাল বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হওয়ার পরই কর্তৃপক্ষ মুরসিকে আটকের নির্দেশ দেয় এবং তার বিরুদ্ধে বিদেশী সংগঠন হামাসকে সাথে নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে। তবে গাজা থেকে হামাসের একজন মুখপাত্র গাজী হামাদ ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। হামাসের মুখপাত্র বলেন, আমি হামাসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ শুনে আমি হাসছিলাম। হামাসের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অংশ হিসেবে এ ধরণের অভিযোগ আনা হচ্ছে। এসব অভিযোগ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গত ৩ জুলাই মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। মুরসিকে যে অভিযোগে আটকাদেশ দেয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে যখন হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে মিসরে বিক্ষোভ চলছে, তখন প্রতিবেশী গাযার হামাসের সহায়তায় মুরসি মিসরের কারাগারে হামলা করে বন্দি নেতাদের মুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। মিসরের আইন অনুযায়ী, এই অপরাধ দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সামিল। মুরসিকে মুক্ত করে দিতে জাতিসঙ্ঘ আর পশ্চিমা দেশগুলোর আহবানের মধ্যেই বিচার বিভাগ তাকে আটকে রাখার এই আদেশ দেয়। তবে ব্রাদারহুড বিচার বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে একে পুরনো শাসক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পরিষ্কার নমুনা বলে মন্তব্য করে।