সিলেটে মানববিহীন ড্রোনের সফল উড্ডয়ন
ঢাকার পর এবার সিলেটের আকাশে সফলভাবে উড্ডয়ন করলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি মানববিহীন বিমান ড্রোন। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দুপুর একটা সাতাশ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রোন উড্ডয়নের সূচনা করেন ড্রোন গবেষক টিমের তত্ত্বাবধায়ক প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। প্রায় পঞ্চাশ সেকেন্ড উড্ডয়ন শেষে ড্রোনটি সফলভাবে মাঠিতে অবতরণ করে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাস্ট রোবটিঙ, আ্যরোনটিঙ এন্ড ইন্টারফেসিং রিসার্চ গ্রুপের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও গবেষণা টিমের প্রধান সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল। টিমের অন্য সদস্য একই বিভাগের ৪র্থ বর্ষের রবি কর্মকার এবং ২য় বর্ষের মারুফ হোসেন রাহাত। এসময় আগন্তুক সহস্রাধিক দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীরা মুহুর্মুহু করতালিতে চারদিক মুখরিত করে তোলেন। ড্রোনটি আকাশে ঘুরে সফলভাবে মাটিতে অবতরণ করা পর্যন্ত সবার চোখে ছিলো বিস্ময়।
গবেষণা টিমের সদস্যরা জানান, ঘোষিত সময়ের ৩ মাস আগেই মানববিহীন এয়ারক্রাফটের ম্যানুয়াল মুডে পরীক্ষামূলক সফল উড্ডয়ন হল । তবে এটাতে এখনো ড্রোনের পুরো বৈশিষ্ট্য আসিনি। এটাকে এবার ড্রোনে রুপান্তরের কাজ চলছে। তবে ড্রোনের জন্য যে ডিসিসি (ড্রোন কন্ট্রোল সেন্টার) সেটার সফটওয়্যারের কাজ শেষ হয়েছে। যা দেখতে অনেকটা ফাইটার জেটের ককপিটের মত। ডিসিরি সাথে বর্তমান এয়ারক্রাফ্টর ইন্টারফেসিং শেষ হলে সেটা স্বয়ংক্রিয় ভাবে এবং প্রয়োজনে ডিসিসির অপারেটরের সাহায্যে চালানো যাবে।
তারা জানান, চলতি বছরের প্রথম দিনেই ঘোষণা দেই যে আমরা এই বছরের এপ্রিলে মেনুয়্যাল মোডে উড়াব এবং প্রাকটিক্যাল কাজ শুরু করি । যদিও কাজ শুরুর ২৭ দিনের মধ্যেই আমরা উড়াতে এবং ডিসিসির সফটওয়্যার বানাতে সক্ষম হই।
গবেষকরা এতদিন গোপনে বিভিন্ন পরীক্ষা চালান। গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রথম জনসমক্ষে সফল ভাবে উড়ানো হয়।
২০১৩ এর এপ্রিল থেকে ড্রোনের থিওরিটিক্যাল কাজ শুরু করা হয়।প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের তত্ত্ববধায়নে প্রজেক্টে কাজ করেছেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল, রবি কর্মকার এবং মারুফ হোসেন রাহাত।
গবেষকরা আরো জানান, আমরা বিভিন্ন ধরনের ড্রোন ডেভেলপমেন্টের দিকে নজর দিচ্ছি। এর মধ্যে প্লেইন , গ্লাইডার, জেট, মাল্টিকপ্টার। আর্মি এবং এয়ার ফোর্স সাহায্য করলে আমরা মিলিটারি ড্রোন বানানোর দিকে নজর দিব।
সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল জানান, ড্রোন বানাতে অনেক টাকা লাগে। আর্থিক স্বল্পতার কারণে প্রয়োজনের তুলনায় আমরা অল্প খরচে এটি ডেভলাপ করেছি। যার পুরোটাই বহন করেছেন জাফর ইকবাল স্যার।
তিনি বলেন,২০-২৫ লাখ টাকা হলে একটি ভাল মানের ড্রোন বানানো সম্ভব হবে। এ জন্য তিনি সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানান।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘ড্রোন তৈরি করতে তরুণ গবেষকরা অনেক চেষ্টা ও শ্রম বিনিময় করেছে। শেষ পর্যন্ত তারা সফল। তিনি বলেন, মূলত সেনাবাহিনীর জন্যই ড্রোন। তবে অন্য কাজেও এটি ব্যবহার করা যাবে। খুবই কম শব্দে চলা ড্রোনটি যে কোনো জায়গায় গিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি তুলে বা হামলা করে চলে আসতে পারবে।’
এর আগে গত ২২ জানুযারি ডিএমপি সদর দপ্তরে চার উদ্ভাবকের তৈরি করা ‘বাংলা ড্রোন’ দশ মিনিট সফল পরীক্ষামূলকভাবে উড্ডয়ন হয়। আর এর উদ্ভাবকরা হলেন বুয়েট থেকে পাশ করা খায়রুজ্জামান বিপ্লব, শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া, আজিজুল ইসলাম এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা আব্দুল্লাহ আল মামুনের।
সদর দপ্তরের সামনের বাগানে মাটি থেকে উড়তে ও নামতে সক্ষম ওই ড্রোনটির (কোয়াড কপ্টার) পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন দেখেন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।