কওমি মাদ্রাসায় গোয়েন্দা নজরদারি বেড়েছে
হেফাজতে ইসলামকে নিয়ন্ত্রণে নিতে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো যাতে হেফাজতকে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকেই এখন নজর সরকারের। এরই মধ্যে বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসায় গিয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন আইন-শৃংখলা বাহিনী ও তাদের গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা। প্রশাসন থেকেও বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তবে হেফাজত নেতারা বলছেন, ১৩ দফা দাবি আদায়ের কৌশল নির্ধারণে রমজানের পর পরই দেশের শীর্ষ আলেমরা বৈঠকে বসবেন। সেপ্টেম্বরের শুরুতে হেফাজতের ব্যানারে ওলামা-মাশায়েখদের সম্মেলন হবে। ওই সম্মেলন থেকেই পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। কোনো নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহে কাজ হবে না বলেও জানান হেফাজত নেতারা।
কওমি মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনেক আগে থেকেই জঙ্গিবাদের অভিযোগে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। প্রায়ই মোবাইল ও টেলিফোনে গোয়েন্দা পরিচয় দিয়ে জঙ্গিবাদসহ নানা তথ্য চাওয়া হয়। ১৩ দফা দাবি নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও ৫ মে’র ঘটনার পর কওমি মাদ্রাসাগুলোর ওপর আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারি অনেক বেড়েছে। রমজানের পর আবারও আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে তারা মাঠে নামতে পারেন, এ আশংকায় নানা তথ্য জানতে চাইছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। মতিঝিলে হেফাজতের কর্মসূচিতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযান ও পরে অর্ধশতাধিক মামলার বিষয়টিও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের স্মরণ করিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার লোক পরিচয় দিয়ে ফোনে তাদের নানা হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে।
তবে এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা যাতে কোনো সুযোগ নিতে না পারে সে জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এ ব্যাপারে তাদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া (বেফাক) থেকেও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল জাব্বার বলেন, বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে তার কাছে সংবাদ এসেছে, কওমি মাদ্রাসাগুলোতে গিয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নানা তথ্য জানতে চাইছে। হাজিরা খাতা নিয়ে যেতে চাইছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ তাদের কাছে অভিযোগ করেনি। তিনি বলেন, হেফাজতের আন্দোলনে ঈমানি তাগিদে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা গেলেও তারা তো কোনো চুরি ডাকাতি করেনি। অথচ তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
ইসলামী ঐক্যজোটের সহকারী মহাসচিব ও হেফাজতের ঢাকা মহানগর কমিটির প্রচার সেলের প্রধান মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল বলেন, রমজানের শুরু থেকেই বিভিন্ন মাদ্রাসায় গিয়ে র্যাব সদস্যরা ছাত্র-শিক্ষকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এতে সাধারণ ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
নারী ও শিক্ষানীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে মুফতি আমিনীর আহ্বানে ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। ওই হরতালে কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের হাতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অনেক সদস্য মারধরের শিকার ও নাজেহাল হন। এরপর থেকেই মূলত দেশের প্রায় ২০ হাজার কওমি মাদ্রাসায় নজরদারি শুরু করে আইন-শৃংখলা বাহিনী। ১৩ দফা দাবিতে হেফাজতের আন্দোলনের পর নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের ওপর ব্যাপকভাবে জোর দিচ্ছে সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষক জানান, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বিভিন্ন ইউনিট থেকে র্যাব সদস্যরা গিয়ে তাদের নির্ধারিত ফরমে ছাত্র-শিক্ষকদের স্থায়ী ও অস্থায়ী নাম ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছাত্র-শিক্ষকরা পরে র্যাব অফিসে গিয়ে তাদের জীবনবৃত্তান্ত দিয়ে এসেছেন।
কওমি মাদ্রাসা ছাত্র পরিষদের সভাপতি এসএম আবদুল আজিজ বলেন, আইন-শৃংখলা বাহিনী তথ্য সংগ্রহ করতেই পারে। তবে সেটা যদি হয় হয়রানির উদ্দেশ্যে, তাহলে তা হবে নিন্দনীয়। তিনি বলেন, নারীনীতি ও শিক্ষানীতিসহ কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী যে কোনো বিষয়েই সবসময় তারা রাজপথে প্রতিবাদ জানাবেন।
হেফাজতে ইসলামের ফেনী জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবদুর রহিম বলেন, তার জেলাতেও তথ্য সংগ্রহে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন মাদ্রাসায় যাচ্ছেন। তবে ফেনীর প্রশাসন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি সহনশীল থাকায় কোথাও থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, তথ্যতো র্যাবের কাছে আছেই। সরকারের বিভিন্ন দফতরেও রয়েছে। স্থানীয় ক্যাম্পগুলো থেকে হয়তো তথ্যগুলো হালনাগাদ করা হচ্ছে। এতে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নেই, বিভ্রান্তি ছড়াতেই কেউ হয়তো এমনটি বলে বেড়াচ্ছে। সূত্র: যুগান্তর