১০ বছরে ফেসবুক
নাজমুল হোসেন:
আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ১০ বছরে পা দেবে বিশ্বের শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক। দুনিয়ার যোগাযোগ ধারাকে বদলে দেয়া এ মাধ্যমের প্রভাব এখন সর্বত্র। বর্তমানে বিশ্বের ১২০ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন, যার শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালে। মার্ক জুকারবার্গ প্রতিষ্ঠিত ফেসবুক মাত্র ১০ বছরে যে মাত্রায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং যেভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরন বদলে দিয়েছে সে বিষয়টিতেই ভাইরাস সংক্রমণের সাথে মিল খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক আর বেশি দিন হয়তো তার কারিশমা ধরে রাখতে পারবে না।
মারাত্মক সংক্রামক রোগ যেমন হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে হারিয়ে যায়, তেমনি ফেসবুকের প্রতিও মানুষ দ্রুত আগ্রহ হারাতে শুরু করছে। ফেসবুকে সর্বোচ্চ সময় দেন এমন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফেসবুকের নতুন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও এক সময় কমে আসবে এবং বর্তমান ব্যবহারকারীরা আগ্রহ হারাতে থাকবে। শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগ সাইট খুব শিগগিরই হারিয়ে যাবে। মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি যেমন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং একটিপর্যায়ে এসে হারিয়ে যায় তেমনটিই ঘটবে ফেসবুকের এমনটি জানিয়েছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।
দীর্ঘ ১০ বছর সময়ে ফেসবুকে প্রায় ১.১ বিলিয়ন ব্যবহারকারী যোগ হয়েছে। করা হয়েছে প্রচুর পোক, ওয়াল পোস্ট, ছবি পোস্ট এবং আরো নানা কিছু। ব্যয় করা হয়েছে প্রচুর সময় এর পেছনে। আর ঠিক কত সময় ব্যয় করা হয়েছে তা বের করার জন্যে টাইম ম্যাগাজিন প্রস্তুত করেছে একটি অ্যাপ। টাইম ম্যাগাজিন এর নাম দিয়েছে টাইম ক্যালকুলেটর। এটি কী উপায়ে করা হয় সে সম্পর্কেও জানিয়েছে টাইম। সেখানে তারা ব্যক্ত করেছে যে ফেসবুক এটি কখনো প্রকাশ করে না যে একজন ব্যবহারকারী কী পরিমাণে ফেসবুকে লগইন করেন। অবশ্য তার মানে এই নয় যে তাদের কাছে এ তথ্য নেই। টাইমের এই অ্যাপ যা করে তা হলো আপনার প্রোফাইল অ্যাকসেস করে আপনার প্রতিটি পোস্টের টাইম দেখতে থাকে সর্বপ্রথম পোস্টটি পর্যন্ত। অ্যাপটি আপনার প্রোফাইলের প্রথম পোস্টকে আপনার প্রোফাইল তৈরি করার সময় হিসেবে নির্ধারণ করে থাকে। তবে যারা ফেসবুক প্রচুর ব্যবহার করে থাকে তাদের ক্ষেত্রে হিসেবে একটু আগে-পিছে হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে সময়ও লাগবে প্রচুর। অ্যাপটি ব্যবহার করা যাবে এই সাইট থেকে।
সঙ্কট
মজার ব্যাপর হলো ফেসবুক প্রতিনিয়ত ইংরেজি শব্দভাণ্ডারকে বদলে দিচ্ছে যা অনেকেরই নজরে আসেনি। অবশ্য সন্দেহ নেই, অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোও অনেক ধরনের নতুন শব্দ ও ভাবধারা যোগ করেছে ইংরেজি ভাষায়। তবে ১১৯ কোটি মানুষের ফেসবুক নেটওয়ার্ক যেভাবে প্রভাব রেখেছে, তার কোনো তুলনা আপাতত নেই। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ফেসবুকের কারণে ইংরেজি ভাষার অশিষ্ট শব্দগুলোই শেষ পর্যন্ত বহুল ব্যবহৃত সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এসব শব্দের অন্তর্ভুক্তি ইংরেজি ভাষার জন্য ভালো না মন্দ সেটি সময়ই বলে দিবে।
সম্ভাবনা
২০১১ সালের এপ্রিলে ফেসবুক তাদের ওপেন কম্পিউট প্রকল্প চালু করে। এ প্রকল্পের অধীনে ওপেন সোর্স সার্ভার ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি তাদের আয়ের একটি বড় অংশ সঞ্চয় করতে সম হয়েছে। ইন্টেল, এএমডি, ব্লুুমবার্গ, বক্স. কিউমুলাস নেটওয়ার্ক, আইবিএম ও মাইক্রোসফটও এ ধরনের ওপেন সোর্স সার্ভার ব্যবহার করছে।
সার্ভার ও তথ্যকেন্দ্রের জন্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই ওপেন সোর্স সার্ভার তৈরি সম্ভব বলে জানান জুকারবার্গ।
তিনি বলেন, ‘এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন আমাদের ব্যয় অনেক হ্রাস পেয়েছে, অন্যদিকে পরিবেশের তি করে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার থেকেও আমরা বিরত থাকতে সম হয়েছি। এ সার্ভার ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা শুধু গত বছরই প্রায় ৪০ হাজার ঘরে যে পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন তার সমপরিমাণ সঞ্চয় করতে সম হয়েছি। আর ৫০ হাজার গাড়ির ধোঁয়া নিঃসরণের মাধ্যমে পরিবেশের যে তি হয় তাও রা করতে পেরেছি। নতুন সার্ভারটি শিল্প খাতে ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যয় হ্রাসের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে।’