মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ৫০০ পাসপোর্ট চুরি
কুয়ালামাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ৫ শতাধিক পাসপোর্ট চুরির ঘটনা ঘটেছে। চ্যান্সেরি স্টক থেকে পাসপোর্টগুলো চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকার পররাষ্ট্র দপ্তর ও কুয়ালালামপুর মিশন সূত্রের দাবি মধ্য ডিসেম্বরে সন্দেহজনক কয়েকটি পাসপোর্ট ধরা পড়ার প্রেক্ষিতে চুরির ঘটনাটি ফাঁস হয়েছে। এরপর দায়িত্বপ্রাপ্তদের টনক নড়েছে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে তোলপাড় চলছে কর্মকর্তাদের মাঝে। পরস্পর বিরোধী অভিযোগ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। মিশনের অভ্যন্তরে থাকা অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি সন্দেহের অঙ্গুলী রেখেই তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার কে এম আতিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, প্রায় ৫ শাতাধিক পাসপোর্ট বই খোয়া গেছে। সন্দেহজনক বেশ কিছু পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে এবং বাহকদের জিজ্ঞাসাবাদে সরবরাহকারী দালালদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, চুরির ঘটনা তদন্তে একটি শক্তিশালী কমিটি কাজ করছে। আশা করি আগামী সপ্তাহে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। ঘটনার সঙ্গে হাইকমিশনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত থাকতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।
তার মতে, নানাভাবে নানা কথা আসছে। কোনটাই উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। তদন্ত চলছে পুরো মাত্রায়। ভেতরে বা বাইরে তদন্তে যারই সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলবে আইনানুগ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে গত ২৪শে জানুয়ারি কুয়ালালামপুর মিশনের হেড অব চ্যান্সারি ঢাকায় থাকা পাসপোর্ট স্টকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সূচনা রানী হালদারকে মিশনে জরুরি তলব করেছেন। ২৭শে জানুয়ারির মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের তাগিদ দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত তার ছুটি ছিল জানিয়ে চিঠিতে তদন্ত কার্যক্রমের জন্য তার উপস্থিতি জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৬ই জানুয়ারি থেকে তার অননুমোদিত ছুটি বলে গণ্য হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সূচনা হালদারের প্রতি সন্দেহের অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়েছে হাইকমিশনের পাঠানোর ওই চিঠিতে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ও ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহত সূচনা রাজনৈতিক বিবেচনায় গত সরকারের আমলে পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে কুয়ালালামপুর মিশনে তাকে পোস্টিং দেয়া হয়। অক্টোবর থেকে মিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) হিসেবে কর্মরত সূচনা পাসপোর্টের স্টকেরও দায়িত্ব পালন করছেন। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তিনি ছুটিতে ঢাকায় আসেন। এর পর পরই চুরির ঘটনাটি ফাঁস হয় বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সূচনা রানীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ঘটনাটি ‘সাজানো’ দাবি করে পলিটিক্যাল সেকশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি হওয়া সত্ত্বেও তাকে পাসপোর্ট স্টকের দায়িত্বগ্রহণের গোড়াতেই আপত্তি প্রকাশ করেছেন বলে জানান। তাকে ফাঁসানের জন্য একটি চক্র অভিযোগটি তুলছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সঠিক তদন্ত হলে সবই স্পষ্ট হবে আশা করে সূচনা বলেন, দাঁতের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আছি। এখানে আসার পরপরই ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন দিয়েছি। এরপরই একটি ই-মেইল পাঠিয়ে চুরির ঘটনাটি জানানো হয়েছে। পাসপোর্ট রাখার আলমারি ভাঙা এবং সেখানে আরও অনেকের অবাধ যাতায়াতের সুযোগ ছিল দাবি করে তিনি বলেন, কুয়ালালামপুরে পাসপোর্ট নিয়ে অনেক বাণিজ্য হয়। রাতের আঁধারে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয়। এসব বাণিজ্য আর অপকর্মের ভিডিও ঢাকায় পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি চাইনি তারপরও পাসপোর্টের রুমে আমাকে বসানো হয়েছে। হিসাব রাখতে দেয়া হয়েছে।
এর আগেও মালয়োশিয়া মিশন থেকে অনেকবার পাসপোর্ট চুরির অভিযোগ উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি চক্র এর সঙ্গে জড়িত- এটা সবাই জানেন। আমি কারও নাম বলতে চাই না।
২০১২ সালে কুয়ালালামপুর মিশন থেকে বেশ কয়েক হাজার পাসপোর্ট চুরির অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্টও হয়েছিল। ওই চুরি রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছিল কি-না জানতে চাওয়া হয় হাইকমিশনার কেএম আতিকুর রহমানের কাছে। জবাবে সেদিনের ঘটনাটি ‘চুরি ছিল না’ বলে দাবি করে হাইকমিশনার বলেন, সে সময় অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল মালয়েশিয়া সরকার। এ কারণে ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়াই বেশ কিছু পাসপোর্ট দিয়ে দেয়া হয়েছিল। পরে তদন্তে তার হিসাব পাওয়া গেছে বলেও দাবি তার। – মানবজমিন