বিরোধীদলের বর্জনের মধ্যে দিয়ে থাইল্যান্ডে রোববার ভোট
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে উঠছে। সরকার এবং বিরোধী জোটের মুখোমুখি অবস্থানে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ ঘোষণা করলেও বিরোধী পক্ষ তা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা বিরোধীদলের ভোট বর্জন এবং ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে জনগণকে ভোট দিতে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে শানিবার থেকেই বিরোধীরা ব্যালট পেপার সংরক্ষণকারী বিভিন্ন ভবন ঘেরাও করে রেখেছে।
ইংলাক সিনাওয়াত্রার সরকারের পদত্যাগ দাবিতে দেশটিতে বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছে। ক্রমেই সে আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। সরকারবিরোধীরা ইতিমধ্যেই দেশটির রাজধানী ব্যাংককের কেন্দ্রস্থল দখলে নিয়েছে। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী। দেশটির সাংবিধানিক আদালত জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিরোধীরা চুক্তিতে গেলে এই ভোট পেছানো যেতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন ভোট পেছাতে রাজি নন তিনি।
থাইল্যান্ডের এই পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি আছে সারা বিশ্বেরই। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও চোখ রাখছেন দেশটির দিকে। থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেশ ভালো। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশেও একই রকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ৫ জানুয়ারির ভোটের পর যেভাবে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে সেভাবে থাইল্যান্ডের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন তারা।
থাইল্যান্ডের দুই জোটের বিরোধ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে। বিরোধীদের দাবি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে হতে হবে নির্বাচন। কিন্তু এই দাবি মানতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। আর দাবি আদায়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানী ব্যাংককসহ বেশ কয়টি শহরে আন্দোলন করছে বিরোধী জোট। গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং সরকারি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে রাজধানী অচল করে দেয়ার চেষ্টা করছে বিক্ষোভকারীরা। মাঝেমধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। হামলা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তার ওপরও। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছে ১০ জন, আহত হয়েছে শতাধিক।
জরুরি অবস্থা জারি করেও বিক্ষোভ দমাতে পারছে না থাই সরকার। তবে বিক্ষোভকারীরা বলছে, কোনো কিছুতে থামবে না তারা। ইংলাক সিনাওয়াত্রার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
অটল অবস্থান নিয়েছেন ইংলাক সিনাওয়াত্রাও। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। এখন নির্বাচন করার বিকল্প নেই। যে করেই হোক নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করতেই হবে।
এই অস্থিতিশীলতার কারণে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা দেশটিতে যাওয়ার আগে ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বছরে ১০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। বাংলাদেশ যে ১০টি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে থাইল্যান্ড তার অন্যতম। দেশটি থেকে চাল, প্লাস্টিক, সুতা, কাপড়, সালফার, স্টোন, প্লাস্টারিং সামগ্রী, চুন, কাগজ, রাবার প্রভৃতি পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে যায় পাট ও পাটজাতীয় পণ্য, তৈরি পোশাক ও কৃষিজাত পণ্য।
তবে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বাড়ার সুযোগ আছে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা বাংলাদেশ সফরে আসেন। এ সময় বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের কৃষি খাতে থাইল্যান্ডের সহায়তা ও দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই যোগাযোগ কঠিন হয়ে পড়েছে।
ব্যবসায়ীরা মনে করেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্পর্ক গভীর করতে পারলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশ এশিয়ান বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে একাধিক চ্যালেঞ্জও আছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ থাই চেম্বারের সভাপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা বলেন, থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক সমস্যা ঠিক বাংলাদেশের মতো হিংস্মাত্মক নয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও বাইরের সাথে তাদের যে ব্যবসা বাণিজ্য অর্থাৎ আমদানি রপ্তানি তা বন্ধ থাকে নি। তবুও রাজনৈতিক অস্থিরতা কখন যে কিভাবে মোড় নেয় সে জন্য দুশ্চিন্তা তো রয়েছেই।