মাওলানা নিজামীকে দেয়া দন্ড ইতিহাসের ঘৃণ্য মিথ্যাচার : লন্ডনে সেইভ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ফাঁসীর রায় প্রদানের প্রতিবাদে লন্ডনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ইসলামী আন্দোলনে নেতৃত্ব দোয়ার অপারাধে বিশ্ববরেণ্য ইসলামী ব্যাক্তিত্ব, মাওলানা নিজামীকে সরকার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়িয়ে ফাঁসী দিতে চাইছে। বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আদর্শিত এবং রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে সরকার নোংরা রাজনীতির পথ বেছে নিয়েছে। বক্তারা অন্যায় এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত রায় বাতিল করে মাওলানা নিজামীকে অবিলম্বে মুক্তি প্রদানের দাবী জানিয়ে সরকারকে হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, অন্যথায় সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য সকল দায়িত্ব সরকারকেই বহণ করতে হবে।
বক্তারা দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, যখন দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে তখন চারদলীয় জোর সরকার ক্ষমতায় ছিলো এবং মাওলানা নিজামী ছিলেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি কিংবা সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা যদি এর সাথে জড়িত থাকতেন তবে সেগুলো কখনোই আটক হতো না। বক্তারা বলেন, মাওলানা নিজামী ছিলেন তখন মিল্পমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রণালয়ের স্থাপনার কাছ থেকে অস্ত্র আটকের অজুহাত দেখিয়ে ফাঁসীর আদেশ প্রদান করে সরকার প্রমাণ করেছে তারা কতটুকু প্রতিহিংসা পরায়ন। বক্তারা বলেন, তারা মাওলানা নিজামী ফাঁসীর দেয়ার স্বপ্ন দেখছে এবং এর মাধ্যমে দেশ থেকে ইসলামী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার ঘৃণ্য অপচেষ্ঠা করছে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক নাগরিক সংগঠন সেইভ বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ৩ফেব্র“য়ারী সোমবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের ওয়াটার লিলি সেন্টারে আয়োজিত সমাবেশে শিক্ষাবিদ, মানবাধিক সংগঠক, আইনজীবী, ইসলামী স্কলার, রাজনীতিবীদ সহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বিশিস্ট আইনজীবী সেইভ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মাহিম মজুমদারের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামা ইউরোপের আমীর আল্লামা মুফতি শাহ ছদর উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালেক, খেলাফত মজলিস ইউকের আমীর অধ্যাপক আব্দুল কাদির সালেহ, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুল মুমিন চৌধুরী, মাওলানা আবুল হাসনাত চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা মাওলানা এ কে এম শাহজাহান।
সমাবেশে দেশে চলমান সরকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের দেশব্যাপী নারকড়ীয় তান্ডবের ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
মুফতি শাহ ছদর উদ্দিন বলেন, মাওলানা নিজামী শুধু বাংলাদেশের নয়, উপমহাদেশের ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে এই শতাব্দীর এক জীবন্ত কিংবদন্তী। তিনি জীবনে কখনো অন্যায় কিংবা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সমাজ, দেশ কিংবা জাতির ক্ষতি হয় এমন কোন সত্য নজীর কেউ দেখাতে পারবে না। শুধু মাত্র ইসলামী আন্দোলন করার অপরাধে তাকে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় দোষী সাজিয়ে ফাঁসীর আদেশ প্রদান করা হয়েছে। তিনি সরকারকে কঠোর ভাষায় হশিয়ারী উচ্ছারণ করে বলেন, সরকার যদি স্বেচ্ছায় ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার না করে তবে এর পরিনাম শুভ হবে না। তিনি দেশের চলমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলে দেশে একদলীয় গণতন্ত্র চালু হয়েছে। বিরোধী দল ও মতের নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে ক্রসফায়ার নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোন শক্তিই জুলুম, নির্যাতন, চালিয়ে ক্ষমায় ঠিকতে পারে না, শেখ হাসিনা যে পথে হাটছেন সেই পথেই তার পরিণতি শেষ হয়ে যাবে।
ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, বণার্ঢ্য রাজনৈতিক জীবনে কোন দিন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী কখনো মিথ্যা, অসততার আশ্রয় নেননি। মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত। অন্যায়ের কাছে যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা নিজামী কখনো মাথা নত করেননি। সেই মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় জড়িয়ে ফাঁসীর আদেশ প্রদান শুধু প্রতিহিংসাই নয়, ঘৃণ্য মিথ্যাচার।
এম এ মালেক বলেন, দশ ট্রাক অস্ত্র যখন ধরা পড়ে তখন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন মন্ত্রী। মন্ত্রীত্বকালীন সময় যিনি সততায় ইতিহাস সৃষ্টি করে দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের মন্ত্রীত্ব এবং ক্ষমতা পাওয়া ব্যক্তিত্বের মধ্যে মাওলানা নিজামী বিরল এবং নির্লূভ। মাওলানা নিজামীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হলে এর পরিণাম শুভ হবে না।
অধ্যাপক আব্দুল কাদির সালেহ বলেন, মাওলানা নিজামী শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের সম্পদ। মাওলানা নিজামী রাজনীতি করে সম্পদ অর্জন করেননি। ইসলামের পক্ষ কথা বলে তিনি জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ পার করেছেন। মাওলানা নিজামী অসৎ কাজ দূরে থাক, অসৎ কর্মকারী কেউ তার পাশে প্রশ্রয় পায়নি। সেই মহান মানুষকে অস্ত্র চোরাচালানে জড়িত বানিয়ে যারা হত্যার ষড়যন্ত্র করছে এদের রেহাই দেয়া হবে না।
দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার সাথে জড়িত বানিয়ে মাওলানা নিজামীকে ফাঁসী দেয়ার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সর্বোভৌমত্ব এবং অখন্ডতা রক্ষার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিশিষ্ট ইসলমী চিন্তাবিদ ও কমিউনিটি নেতা অলহ্াজ আতিকুর রহমান জিলু বলেন, মাওলানা নিজামী বাংলাদেশের অখন্ডতা রক্ষা আন্দোলনের জীবন্ত কিংবদন্তী। নিজামীর মতো নেতাই টিপাইমুখ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেছেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তাই ভারতীয়দের প্রেসক্রিপশনে মাওলানা নিজামীর প্রাণনাশের অপচেষ্ঠা করছে আওয়ামীলীগ। তিনি হুশিয়ারী দিলে বলেন, মাওলানা নিজামীর নাম যে মামলায় ছিলোনা সেটাতে তাঁর নাম অন্তর্ভূক্ত করে সরকার তার নিজেদের আসল মুখোশ উন্মোচন করেছে। দেশপ্রেমিক জনগণ সে ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াবেই।
মামনুন মুর্শেদ বলেন, ইসলামী আন্দোলনের অকুতভয় সিপাহসালার মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। মাওলানা নিজামী বাংলাদেশের ইসলাম প্রিয় জনতার সম্পদ। সরকার তার জীবন নিয়ে তামাশা করার যে ঘৃণ্য অপচেষ্ঠা চালাচ্ছে, সেটা জনগণ রুখে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্য যারা বানাতে চায়, তারাই আমীরে জামায়াত মাওলানা নিজামীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়।
সভাপতির বক্তব্যে সেইভ বাংলাদেশে চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মাওলানা নিজামীকে জড়ানোর নিন্দা জানিয়ে বলেন, যে মামলায় তার নামই ছিলো না সেই মামলায় তাকে জড়িয়ে ফাসীর রায় প্রদান বিচারের নামে শুধু প্রহসনই নয়। সেটা দেশের বিচার ব্যবস্থাকে কলঙ্কজনক অধ্যায়। তিনি বলেন, আমীরে জামায়াত মাওলানা নিজামী রাষ্ট্র বিরোধী নন। তিনি বাংলাদেশের ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। মাওলানা নিজামী আধিপত্যবাদী ভারতের চক্ষুশোলে পরিণত হয়েছেন। দেশের সীমান্ত রক্ষায় মাওলানা নিজামী বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ পাহারাদারের ভূমিকায় কাজ করছেন। তাই ভারতের ইঙ্গিতেই তাদের দোষর সরকার মাওলানা নিজামীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। ব্যরিস্টার নজরুল সরকারকে ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করার আহ্বান এবং অবিলম্বে মাওলানা নিজামী, সাঈদী সহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবী জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা বন্দের যে ঘৃণ্য অপচেষ্ঠা করছে সরকার সেটার প্রতিরোধে দেশের ইসলাম প্রিয় জনতা ঐক্যবদ্ধ। নেতৃবৃন্দকে মক্তির আন্দোলনে দ্বীনি আন্দোলনের কর্মীরা লড়াই করেই যাবে।