দেশে গণতন্ত্র নেই : সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া
দেশে গণতন্ত্র নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৩৪মিনিটে গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে ১৯ দলীয় জোট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও সরস্বতী পূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মামবলম্বিদের শুভেচ্ছা জানান খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই। এই সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করে এক ব্যক্তির ক্ষমতা জনগণের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে একদলীয় সরকার গঠন করে ক্ষমতা দখল করেছে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘জনগণের ভোট ছাড়াই একটি তামাশার সংসদ গঠিত হয়েছে। এই সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার কেউই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এক সময় বলতো, তারা সংবিধান বদল করেছে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার জন্য। অথচ তারা জণগণের ভোটের অধিকার হরণ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। তাদের মুখে জনগণের কথা আর শোভা পায় না।’
আওয়ামী লীগকে সুবিধাবাদী উল্লেখ করে খালেদা বলেন, ‘যখন যেটাই তাদের কাছে সুবিধা মনে হয় চরম সুবিধাবাদী এ দলটি তখন সেটাই করে। আবার সুবিধা না হলে তারা যখন যা ইচ্ছা তাই করতে সামান্যতম লজ্জা মনে করে না।’ বাংলাদেশের জনগণ তাই তাদেরকে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
নির্বাচন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এ নির্বাচনে শতকরা ৫ জনও ভোটাধিকার প্রয়োগ করেনি। আওয়ামী লীগ যে কতটা গণবিচ্ছিন্ন হয়েছে তা সারা দুনিয়ার মাঝে প্রমাণ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণকে আস্থায় নিতে সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে আলাপ করে সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব হতো। কিন্তু তারা চক্ষু লজ্জা সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে।’ প্রতিদ্বন্দ্বী সকল রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করে তারা ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে চায় বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
দুর্বলের প্রতিশোধ ভঙ্কর উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে পরাজিত। তারা একদিকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করছে অপরদিকে দলীয় সন্ত্রাস লাগিয়ে দেশে তাণ্ডব চালাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের তালিকা করে বেছে বেছে খুন, গুম, আটক ও বিচার বাহির্ভূত হত্যা করছে। মিথ্যা মামলায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে লাঞ্ছিত করছে।’ খুনি সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দিয়ে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে কারাগার ভর্তি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আছেন- বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, সারওয়ারী রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অধ্যাপক এমএ মান্নান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, রিয়াজ রহমান।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, ফজলুর রহমান পটল, সেলিমা রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
১৯ দলীয় জোটে নেতাদের মধ্যে জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ড. রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদী, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালীব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টি একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধান, এনডিপির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু, খেলাফত মজলিশের সভাপতি মাওলানা ইসহাক, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মুর্তজা, ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি, মুসলিম লীগের সভাপতি এইচ এম কামরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মোবিন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডেমোক্রেটিক লীগ সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি।
প্রসঙ্গত, এরআগে গত ১৫ জানুয়ারি বিকেলে হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করেন।