গৃহযুদ্ধের দিকে এগুচ্ছে মিশর !
মিশরের চলমান সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে এগুচ্ছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ২০১১ সালে মিশরের জনগণ যখন হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করতে রাস্তায় নেমেছিলেন, তখন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেছিলেন হোসনি মোবারকের বদলে যাকে তারা ক্ষমতায় আনবে দুইবছরের মধ্যে তাকেও ক্ষমতাচ্যুত করতে রাস্তায় নামবে।
তাদের সেই ভবিষ্যৎবাণীকে সত্যি করতেই হয়তো মুরসির ক্ষমতা গ্রহণের একবছরের মধ্যে বিক্ষোভের মুখে সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। থেমে নেই মুরসি সমর্থকরাও। তারা সেনা সমর্থিত সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে মুরসিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে এগুচ্ছে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
মুরসি সমর্থক ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিয়ে শুক্রবার রাতভর সংঘর্ষে শতাধিক নিহত ও একহাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
মুরসি সমর্থক ও বিরোধীরা একে অন্যের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। মিশরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো সুশাসনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে একে অন্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে।দেশটিতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপেরও পট পরিবর্তন হচ্ছে। সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে অসংখ্য গুজব।
এদিকে সেনাবাহিনীসহ প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। মিশরে কোনো নির্বাচিত সরকার দেশ শাসনের জন্য উপযুক্ত নয়, মুরসির ক্ষমতাচ্যুতি এমন বার্তাই দিচ্ছে।
এদিকে, মুসলিম ব্রাদারহুডের সিনিয়র নেতা, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক, তরুণ আন্দোলনকর্মী ও সেনা কর্মকর্তা ও কূটনৈতিকদের সঙ্গে কথা বলে মিশরের বিপ্লবের জন্য চারটি বিষয়কে দায়ী করেছেন। এগুলো হলো— ক্ষমতায় থাকার জন্য মুরসির সিদ্ধান্ত, সংবিধান প্রণয়নে নেয়া মুরসির পদক্ষেপ, ধর্মনিরপেক্ষতা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ।
তবে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে ব্রাদারহুডের আন্দোলন সত্ত্বেও মিশরের গণতান্ত্রিক পট পরিবর্তনের দ্বিতীয় ধাপ প্রথম ধাপের চেয়েও অনেক সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরও সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতায় আসবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। হোসনি মোবারকের পতনের পর সেনাবাহিনী ক্ষমতা হাতে নিয়েছিল।
তবে, এরপরও সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ নিয়ে কিছু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ছিলেন মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার মূল পরিকল্পনাকারী। এছাড়া তিনি বর্তমানে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে, মুরসি সমর্থকরা তো বটেই, বিরোধীরাও সেনা শাসন মেনে নেবে কিনা সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ মিশরের অধিকাংশ জনগণই গণতন্ত্রের পক্ষে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি ইতিহাসও বলে মিশরের জনগণ স্বৈরতন্ত্রের বিপক্ষে। কারণ ২০১১ সালেই তারা ‘খাদ্য, স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’ পাওয়ার লক্ষ্যে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে উৎখাতের জন্য মাঠে নেমেছিল।
বস্তুত, মিশরের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেশটি নিশ্চিতভাবে গৃহযুদ্ধের দিকে এগুচ্ছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।