কানাডায় নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ কঠিন হচ্ছে
সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কানাডা থেকে: কানাডার নাগরিকত্ব লাভকে আরো কঠিন করে প্রচলিত আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে কানাডা সরকার। হাউজ অব কমন্সের চলতি অধিবেশনেই কানাডিয়ান সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট সংস্কারসহ নতুন কিছু ধারা সংযোজন করে প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটি উত্থাপন করা হবে।
বৃহস্পতিবার সিবিসি নিউজের সাথে এক সাক্ষাতকারে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড সিটিজেনশিপ মন্ত্রী ক্রিস আলেক্সান্ডার এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রায় এক জেনারেশনের মধ্যে এই প্রথম কানাডার নাগরিকত্ব আইনের বড় ধরনের সংস্কার প্রস্তাবসহ একটি বিল হাউজ অব কমন্সে ওঠতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত যে নাগরিকত্ব আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। কানাডায় জন্ম নিলেই কেউ কানাডার নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন- এই ধারণা থেকে সরে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তবে এই মুহূর্তে সরকার সরাসরি এ সংস্কারে হাত দিচ্ছে না। তবে তথাকথিত ‘বার্থ ট্যুরিজম’ বা ‘পাসপোর্ট বেবি’ সমস্যার একটি সমাধান করার ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। মন্ত্রী জানান, তবে কী উপায়ে সরকার এই সমস্যার সমাধান করবে সেটি এখনো ঠিক করেনি। কোন পদ্ধতিতে এই সমস্যার সমাধান করা হবে এখনি তা বলা যাচ্ছে না। প্রভিন্সকে এর সাথে যুক্ত করতে হবে। কেননা শিশুর জন্ম হয় কানাডার চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায়। কাজেই এই সমস্যাটি সমাধানের ক্ষেত্রে প্রভিন্সের সহায়তা প্রয়োজন।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে চলতি বছরের মধ্যেই পদক্ষেপ নেয়ার ইচ্ছা রয়েছে।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রী ক্রিস আলেক্সান্ডার বলেন, নতুন আইনে বিশেষ পরিস্থিতিতে যে কোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চরম পরিস্থিতিতে দ্বৈত নাগরিকত্বধারী কোনো কানাডিয়ান নাগরিক যদি সীমা লংঘন করে বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে, তবে সরকার তার নাগরিকত্ব হরণ করতে পারবে। মন্ত্রী বলেন, ‘যতো দ্রুত সম্ভব আমরা এই বিধানটি কার্যকর করতে চাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, বছরখানেক আগে লেবানিজ বংশোদ্ভূত এক নাগরিক বুলগেরিয়ায় ইসরাইলি পর্যটকদের ওপর বোমা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পর এই বিষয়টি আলোচনায় আসে। এবার সেটি আইনে পরিণত হতে যাচ্ছে।
প্রস্তাবিত নতুন আইনে নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে বলেও ধারণা দেন ইমিগ্রেশন মন্ত্রী ক্রিস আলেক্সান্ডার। তবে তিনি বলেন, নাগরিকত্ব লাভের যোগ্যতা অর্জনের পর দ্রুততম সময়েই নাগরিকত্বের আবেদন নিষ্পন্ন করা হবে।
প্রস্তাবিত আইনে নাগরিকত্বের জন্য জমা হওয়া আবেদনপত্রের যে জট হয়েছে তা সমাধানের উদ্যোগ থাকছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
গত অক্টোবর ২০১১ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১২ পর্যন্ত সময়ে নিষ্পন্ন হওয়া নাগরিকত্ব আবেদনপত্রের ৮০ শতাংশেরই সময় লেগেছে ২ থেকে ৩ বছর। ইমিগ্রেশন মন্ত্রী বলেন, ‘যে জট সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষমতা আমরা আমাদের হাতে নিতে চাই। আমরা আসলে আমাদের নিজেদের সাফল্যের ভিকটিম। আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি লোক নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করছে।’
বর্তমানে নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য হয়ে ওঠতে একজন স্থায়ী বাসিন্দাকে চার বছরের মধ্যে তিন বছর কানাডায় বসবাস করতে হয়। ইমিগ্রেশন মন্ত্রী বলেন, ‘নাগরিকত্বের যোগ্যতার শর্তাবলীও পরিবর্তন হচ্ছে। তথাকথিত ‘সুবিধাভোগী নাগরিকত্ব’ লাভের সুযোগ কাউকেই দেয়া হবে না।