লালবাগ কেল্লায় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো চালু

Hasinaরাজধানীর ঐতিহাসিক নিদর্শন লালবাগ কেল্লায় শুক্রবার সাউন্ড ও লাইট শো উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশ প্রযুক্তির নয়াদিগন্তে প্রবেশ করল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লায় আসা পরিদর্শক ও পর্যটকদের জন্য এটি নতুন আকর্ষণ হবে বলে আশা প্রকাশের মধ্য দিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় শো’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দর্শক আলো-আঁধারির পরিবেশে খুবই মনোযোগের সঙ্গে শতাব্দীর পুরাতন ইতিহাসের ধারাবাহিকতা জানতে পারবে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি সচিব রঞ্জিত কুমার বিশ্বাস এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মহাপরিচালক শিরীন আখতারও বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে সপ্তদশ শতকে নির্মিত অসমাপ্ত মোগল স্থাপত্য লালবাগের কেল্লা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সালে তার সরকারের সময়ে দেশের জনগণের সামনে লালবাগ কেল্লার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শন তুলে ধরতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। তিনি বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিকাশকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে একটি সম্ভাবনাময় দেশ। আকারে ছোট হলেও প্রাচীনকাল থেকে আমাদের সম্পদ ও জনগণ বিদেশিদের আকর্ষণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কালের বিবর্তনে দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর এই দেশ থেকে বিদেশিরা চলে গেছে; কিন্তু তাদের স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের মূল্যবান সম্পদ হয়ে আছে। এসব প্রতিষ্ঠান গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান শুধু ঐতিহাসিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। তিনি এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত দেশের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ইতিহাসবিদ ও স্থপতিরাসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান উন্নয়নের পাশাপাশি সারাদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যাতে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে পারে— সেজন্য আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার পূর্ববর্তী প্রশাসনের গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখা ও তা বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়েছে। তিনি বলেন, জনগণ পেট ভরার জন্য কেবল খাদ্যই চায় না, তারা বিনোদনসহ তাদের অন্যান্য মৌলিক আমোদ-প্রমোদের বিষয়গুলোও চায়। তিনি আরো বলেন, একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি আমরা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
পরে প্রধানমন্ত্রী দর্শকদের সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন আলোক ও শব্দের প্রদর্শনী উপভোগ করেন, যাতে ভবনের মূল ফটকে বিশেষ লাইটিং ইফেক্টের মাধ্যমে রেকর্ড করা কথা ও গানসহ এই দুর্গের ইতিহাস তুলে ধরা হয়।
আগামী মধ্য নভেম্বর ও মধ্য মার্চ পর্যন্ত রোববার ছাড়া প্রতিদিন মাগরিব ও এশার নামাজের মাঝামাঝি সময়ে একটি এবং এশার নামাজের পর অপর একটি মোট ৩০ মিনিট করে দুটি শো দেখানো হবে। বৃহস্পতিবার পিআইডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর একথা জানিয়েছেন।
প্রবেশমূল্য ১০ টাকা ছাড়া বাংলাদেশীদের জন্য শো’র টিকিট মূল্য ২০ টাকা। সার্ক দেশের পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর প্রস্তুতি ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং এ থেকে মাসে ৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশিষ্ট লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক এই প্রদর্শনীর স্ক্রিপ্ট তৈরি করেন এবং এতে কণ্ঠ দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শিমুল ইউসুফ ও আসাদুজ্জামান নূর। এর মাধ্যমেই পরিদর্শকরা এই দুর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আসাদুজ্জামান জানান, পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, কান্তজীর মন্দির ও মহাস্থানগড়সহ বাংলাদেশের ৪৪৮ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে এই শো চালু করা হবে। ১৬৭৮ সালে মুঘল সুবেদার ও সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে শাহজাদা মোহাম্মদ আজম শাহ লালবাগ কেল্লার নির্মাণকাজ শুরু করেন। পরে তিনি নিজেও সম্রাট হন। অবশ্য তার উত্তরসূরি শায়েস্তা খান এর নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখেননি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পরিদর্শক এই দুর্গ পরিদর্শন করেন এবং সপ্তাহান্তে টিকিট বিক্রি বেড়ে যায়। তারা আরো জানান, এই নতুন প্রকল্প উদ্বোধনের ফলে টিকিট বিক্রি আরো বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button